মাশরাফি-সাকিবদের মানসিক পরীক্ষার ম্যাচ
সবাই মনে করছে এটা হয়তো নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। ইতোমধ্যেই আমরা ওয়ানডে সিরিজ হেরে বসে আছি। টি-টোয়েন্টি সিরিজও হেরে গেছি। শেষ ম্যাচটা তাই সবার কাছে নিয়মরক্ষারই। তবে আমার মতে, বাংলাদেশের জন্য এটা কোনোমতেই নিয়মরক্ষার ম্যাচ নয়। কারণ, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচও জেতেনি। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে শুরু করে, এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ পর্যন্ত, কোনো ম্যাচই নয়।
কিছু কিছু সিরিজ থাকে যেখানে সিরিজ জয়ের চেয়ে একটি জয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিরিজ জয়ের চেয়েও যেন একটি ম্যাচে জয় অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। একটা জয়ের আশায় বাংলাদেশের লক্ষ-কোটি ভক্তের মতো আগামীকালের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমিও।
আমার মতে, আগামীকালের ম্যাচটি হবে বাংলাদেশের মানসিক পরীক্ষার। সাধারণত এ ধরনের সিরিজে যখন একটা দল আরেকটা দলের বিপক্ষে খেলে এবং ওই সময় যদি কোনো দল মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে, তাহলে তারা সত্যিই অনেক কিছু হারিয়ে ফেলে। প্রতিষ্ঠিত এবং পেশাদার দলের পক্ষে ফিরে আসাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জায়গায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে, তারা কীভাবে ফিরে আসতে পারে।
আমরা নিজেদের ঘরের মাঠে ৪-৫টা সিরিজ খেলেছি এবং সবগুলো জিতেছি। এগুলো অবশ্যই আমাদের অনেক বড় কৃতিত্ব; কিন্তু বিদেশের মাটিতে আমরা যেভাবে সংগ্রাম করছি, সেখানেই কিন্তু আমাদের শেখার বিষয় আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলছি না যে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ জিতে বসে থাকবে। এটা কখনো, আমরা কেউই আশা করিনি।
তবে যে ধরনের ক্রিকেট আশা করেছিলাম, সে ধরনের ক্রিকেটের কাছাকাছি আমরা যেতে পারিনি। এর কারণ হতে পারে আমরা সুযোগগুলো হাতছাড়া করেছি, এর কারণ হতে পারে যে, আমরা সঠিক কোনো পরিকল্পনা করিনি। এর কারণ হতে পারে আমরা অতিমাত্রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি এবং গত বছরের সাফল্যকেই স্থায়ী মনে করে বসে আছি।
সর্বশেষ যে ক্রিকেটীয় প্রটোকল কিংবা সিস্টেম ছিল, ম্যানেজমেন্ট-খেলোয়াড়দের যে সিস্টেমে চালানো হতো, সেই সিস্টেমটা আমরা ভেঙে ফেলেছি। এই প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা কিন্তু ক্রিকেটীয় সিস্টেমের বাইরে গিয়ে কাজ করছি।
সিস্টেম ভেঙে ফেলা বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি, এই যে ২১-২২ জন ক্রিকেটার নিয়ে পুরো সফরে একটি দল মুভ করছে, এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে হয় একটা ক্যাম্পের মাধ্যমে, সে ধরনের লম্বা কোনো ক্যাম্পও সিরিজের আগে করিনি।
এছাড়া যে খেলোয়াড়টা সত্যিকারের প্রয়োজন তাকে দলে নেয়া হয়নি। অনেকটা মনগড়া ধরনের দল আমরা সিলেক্ট করেছি। আরেকটা কথা আমার মনে হয়, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলার জন্য যে জায়গায় যে খেলোয়াড় প্রয়োজন, সে জায়গায় আমরা সে খেলোয়াড় নিইনি।
আমরা বলতে পারি, এখানে আল-আমিন এবং নাসির হোসেনের খুব প্রয়োজন ছিল। এছাড়া আরো একজন ক্রিকেটারকে এই সিরিজে আমি খুব মিস করেছি, তার নাম শুনলে হয়তো অনেকে হেসে দিতে পারে। কিন্তু তাকে আমি সত্যিই এই সিরিজে মিস করেছি। তিনি হলেন আবদুর রাজ্জাক। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বা দুর্বলতা হলো, একটা খেলোয়াড় যখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে কিছুদিনের জন্য, তাকে আমরা সারা জীবনের জন্য বেমালুম ভুলে যাই।
এ ধরনের বহু খেলোয়াড় আছে যাদের ইতোমধ্যে আমরা ভুলেই গেছি। এদের মধ্যে একজন হচ্ছে রাজ্জাক। এই ধরনের ক্রিকেটে আমি রাজ্জাককেই আশা করি বাংলাদেশ দলে খেলার জন্য। কারণ, এখনও পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ভালো স্পিন বল করার জন্য সাকিবের পর আর কেউ নেই। সাকিবের সঙ্গে ওই জায়গাটায় (পাওয়ার প্লেতে) বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম বোলার ছিলেন রাজ্জাক।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কারণ এ ম্যাচটি জিততে পারলে পরের টেস্ট সিরিজের জন্য আমরা আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে নিতে পারবো এবং এখনও যে একটি ম্যাচও জিততে পারিনি, তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
আর বাস্তব যেটা, সেটা হলো টেস্ট ম্যাচে জেতার চেয়ে ড্র করা কিংবা সম্মানজনক হারাটাই হচ্ছে এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এ কারণে আমি আশা করি, শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে পারবে। এখানে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা প্রশ্নের, সেটা হলো আমাদের ব্যাটসম্যানদের সেট হয়ে আউট হয়ে যাওয়া, লম্বা লম্বা ইনিংস খেলতে না পারা বা আমাদের ব্যাটসম্যানদের তাদের রোল অনুযায়ী খেলতে না পারা কিংবা বোলিং হ্যান্ডেলিংটা আগের চেয়ে ভালো আশা করবো।
এ সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে বসিয়ে রাখা হয়েছে। মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে একটা ম্যাচেও খেলানো হলো না। আমি আশা করি, তাকে আগামীকাল দলে দেখতে পাবো।
আইএইচএস/জেআইএম