‘দরকার আরো বড় স্কোর ও দীর্ঘ পার্টনারশিপ’
সেই ওয়ানডে সিরিজ থেকে শুরু। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও সে ধারা বহাল আছে। তা হলো, প্রতি ম্যাচে হয় ব্যাটিং, না হয় বোলিংয়ের এক সেশনে টাইগাররা কিউইদের ওপর সৃস্পষ্ট প্রভাব বিস্তার করছে। হয়তো একটা পার্টনারশিপ তৈরি হচ্ছে। একদিকে কিংবা দু প্রান্তে দুজন দারুণ খেলছেন। রানের নৌকা তড়তড়িয়ে আগে বাড়ছে। ব্ল্যাক ক্যাপ্সরা চাপে। মনে হচ্ছে সাফল্যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কিন্তু হায় একটা নির্দিষ্ট সময় গিয়ে সে সম্ভাবনার প্রদীপ দপ করে নিভে যাচ্ছে। আর তারপরই সব এলোমেলো হয়ে পড়ছে। এভাবেই এগোচ্ছে এ সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজে দুবার এমন হয়েছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই খেলায়ও একই অবস্থা। একটি জুটি গড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে বালাদেশ আজ জিতে যেতেও পারে। কিন্তু ঠিক একটা সময়ে গিয়ে সে জুটি ভাঙ্গছে। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঐ দুই ব্যাটসম্যান ফিরছেন সাজঘরে। এখানেই ঘটছে বিপত্তি।
গত ম্যাচে ১৯৬ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করেও সাব্বির রহমান আর সৌম্য সরকার আশা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। শুরু তেমন ভাল হয়নি। তামিম, ইমরুল ও সাকিব আউট হবার পরও ঐ দুই তরুণ খেলেছেন অনায়াসে। ইচ্ছে মতো উইকেটের চারদিকে শটস খেলে রানের চাকা রেখেছেন সচল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েও যেতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যে কোন কিউই বোলারকে তুলোধুনো করতে পারেন, তা ইনিংসের নবম ওভারে ব্ল্যাক ক্যাপ্স ফাষ্ট মিডিয়াম বোলার কলিন ডে গ্র্যান্ডডোমের এক ওভারে সাব্বির ও সৌম্য দুই ছক্কা এক বাউন্ডারিসহ ২১ রান তুলে দেখিয়েছেন। কিন্তু ৬৮ রানের জুটি ভাঙ্গার পর মাত্র নয় বলের ব্যবধানে দুজন সেট ব্যাটসম্যান আউট। আর সঙ্গে সঙ্গে ইনিংসের বারোটা বেজে যাওয়া। তারপর শুধু আসা যাওয়ার পালা। এবং একদম বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়া।
পার্থক্যটা এখানেই। প্রায় একই অবস্থা ছিল নিউজিল্যান্ডেরও। সকালে ৪৬ রানে তিন উইকেট খোয়া যাবার পরও কিউইরা ২০ ওভার শেষে ১৯৫ রানের বিশাল স্কোর গড়েছে। কলিন মুনরো ( ৫৪ বলে ১০১) আর টম ব্রুস ( ৩৮ বলে ৫৯) এক জুটিতেই সব ধাক্কা সামলে দিয়েছেন। চতুর্থ জুটিতে ১২৩ রান তুলে দলকে এগিয়ে দিলেন অনেকটা। এরা দুজন মিলে করে দিয়েছেন ১৬০। আর বাকি সাতজন মিলে ২৭।
প্রায় একই অবস্থায় পড়েছিল বাংলাদেশও। বোর্ডে ৩৬ রান জমা পড়তেই আউট তামিম, ইমরুল ও সাকিব। ঐ খাদের কিনারায় দাড়িয়ে দলকে টেনে তোলার দুঃসাহসিক মিশন শুরু সাব্বির ও সৌম্যর। কিন্তু মানরো আর ব্রস যেমন অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে ১২৩ রানের বড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছিলেন। সাব্বির আর সৌম্য তা পারেননি। জুটিতে ৬৮ রান যোগ করেই থেমে গেছেন দুজন। দুজনই ১৫০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করলেন। সাব্বি ৩২ বলে ৪৮ আর সৌম্য ২৩ বলে ৩৯ করে আউট।
বরং বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের অবদান কিউইদের চেয়ে বেশি। শুধু সাব্বির-সৌম্যর জুটিটা আর একটু বড় হলেই চলতো। সেই কাজটিই হচ্ছে না। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত কিংবা দল জিতিয়ে বা ম্যাচ শেষ করে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরা হচ্ছে না। সেটা কি দল জেতানো দৃঢ় সংকল্প, ইচ্ছা আর প্রত্যয়ে কমতির কারণে ? নাকি আত্মতুষ্টিতে ? তা নিয়ে ছোট খাট বিতর্ক হতেই পারে।
কারণ যাই হোক তামিম ইকবালের অনুভব, যে করেই হোক আমাদের এই সব জুটিগুলো আরো বড় করতে হবে। না হয় পাওয়া সুযোগ কাজে লাগানো যাবে না। তামিমের কথা, `আমরা স্টার্ট পাচ্ছি। কিন্তু কেউ ফিনিশ করতে পারছি না। আমি নিজে পাঁচ ইনিংসেই শুরু ভাল করেছি। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারিনি। তামিম সেই ব্যক্তিগত ইনিংস ও জুটিগুলো আর বড় করার তাগিদ দিয়েছেন। তার সোজা কথা, আমরা সুযোগ তৈরি করছি। তবে খুব অল্প বা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আমরা যদি সুযোগগুলো বেশি সময় ধরে রাখতে পারি, তাহলে অবশ্যই সাফল্য আসবে।`
তার মানে তামিম বলতে চাইলেন যে তিনি নিজে সাব্বির, সৌম্য ও নুরুল হাসান সোহানরা যে ৩৫-৪০ করে আউট হয়ে যাচ্ছেন, তা করা চলবে না। এই ৬৫-৬৮ রানের জুটি দিয়েও চলবে না। খুব ভাল ও সময়োচিত উপলব্ধি।
মোদ্দা কথা, যিনি বা যারা সেট হবেন, তাদের লম্বা খেলতে হবে। সেটা শেষ বল পর্যন্ত হলে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হলো তা কি হবে ? পরিসংখ্যান জানাচ্ছে আর খেলার ধরন বলে দিচ্ছে ৪০`র আশপাশে কিংবা ঘরে গেলেই কেমন যেন হয়ে যাচ্ছেন সবাই। এই ধারা থেকে বেড়িয়ে আসতেই হবে। ৩০-৪০ করে আর ৬০/৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচ জেতা যাবে না।
তামিম তা পরিষ্কারই বলে দিয়েছেন। গত কদিন কথা বলে যেটা মনে হলো, সাব্বির-সৌম্য ও সোহানরাও তা হৃদঙ্গম করতে পারছেন। তারাও দেখা হলে কিংবা আনুষ্ঠানিক কথোপকোথনে বার বার বলছেন, চেষ্টা করছি উইকেটে আগে সেট হতে। তারপর হাত খুলে খেলতে এব লম্বা ইনিংস সাজাতে।
কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে সবই ভুল হয়ে যাচ্ছে। এই কথা মুখে বলে লাভ হবে না। জায়গা মতো তা করে দেখাতে হবে। মাঝারি ইনিংস খেলে দল জেতানো যাবে না। বড় ইনিংস খেলতে হবে। বড় মানে ৭০-৮০ কিংবা ১০০। আর জুুটি গড়ে কিছু করতে চাইলে অন্তত ১০০+ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে হবে। তবেই সাফল্যর দেখা মিলবে। না হয় কথা বার্তাই সার।
অনেক কথা-বার্তা, অনুভব, বোধ আর উপলব্ধির কথাইতো শোনা গেল, এখন তার বাস্তব প্রয়োগ কি ঘটবে? আগামীদিন (রোববার) কি হবে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসার দিন?
এআরবি/এমআর/পিআর