সাকিব এখন নিজেকে একা ম্যাচ উইনার ভাবতে চান না!
বাংলাদেশের এক নম্বর ম্যাচ উইনার কে? এতকাল জানা ছিল সাকিব আল হাসান। শুধু সেরা ম্যাচ উইনারই নন, সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম পারফরমারের নামও সাকিব। তিন ফরম্যাটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি মাগুরার এ তেজোদ্দীপ্ত যুবা।
টেস্টে রান তোলায় তিন নম্বরে থাকলেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি- এই দুই ফরম্যাটে তামিম ইকবালের পর সাকিব দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী। ব্যাট-বলে নজরকাড়া ও ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফরমেন্সের কারণে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের তকমাও গায়ে ছিল তার।
তিন ফরম্যাটে সমান পারদর্শি এ সব্যসাচি ক্রিকেটারকে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ভাবা হয়। বিশ্বের সব নামী বড় টি-টোয়েন্টি আসরে সাকিবের চাহিদাও সর্বাধিক। ভারতের সাড়া জাগানো আসর আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুইবার চ্যাস্পিয়ন করানোর পেছনে রেখেছেন অগ্রনি ভূমিকা।
বাংলাদেশের সমর্থক বলতেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিব অন্তঃপ্রান। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের চালিকশক্তিই সাকিব। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় মাশরাফি বাহিনী যখন নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামবে, সেই দলের প্রান ভোমরাও ভাবা হচ্ছে সাকিবকেই। মূল ফোকাসটাও কিন্তু তার দিকেই।
সবার আশা সাকিব বল ও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠুন। সাকিবের বল ও ব্যাট কথা বললেই হয়ত ভালো কিছু হবে। ইতিহাস জানাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন।
বেশিরভাগ জয়ে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। সাফল্যের মূল রুপকারও তিনি। যাকে নিয়ে এত কথা। যার ওপর গোটা দেশ ও জাতির সর্বাধিক আস্থা, সেই সাকিব এখন আর নিজেকে এক নম্বর ম্যাচ সেরা পারফরমার ভাবেন না। যদি ভাবতেনই, তাহলে আজ সকালে নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে এমন কথা বলতেন না।
এদিন মোস্তাফিজকে এ মূহুর্তে দেশের এক নম্বর ম্যাচ উইনার অভিহিত করে সাকিব বলেন, ‘এ মুহুর্তে বাংলাদেশের এক নম্বর ম্যাচ উইনারের নাম মোস্তাফিজ। তার একারই ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে।’
ধরেই নেয়া যাক, সাকিবের এ বক্তব্য সৌজন্যতামূলক। নিজের প্রশংসা তো আর নিজে কনা যায় না। তাই মোস্তাফিজ বন্দনা। সেটা করতেই পারেন। তাতে বরং তার মনের প্রসারতাই ফুটে উঠেছে। সেটা অবশ্য মূল প্রসঙ্গ নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে সাকিব নিজে কি এখন আর আগের মত নিজেকে ম্যাচ উইনার ভাবেন? শুনলে অবাক হবেন সাকিব নিজেই এখন আর নিজেকে দলের মূল বা প্রধান ম্যাচ উইনার ভাবতে চান না। যদি চাইতেন, তাহলে একথা বলা কেন?
প্রশ্ন ছিল, আপনি তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে হাই প্রোফাইল পারফরমার। এই ফরম্যাটের আইকনও। আপনার নিজের প্রত্যাশা ও লক্ষ্য কি?
উপস্থিত সাংবাদিকদের অবাক করে দিয়ে সাকিব অবলীলায় বলে উঠলেন, ‘আমি এখন আর ওরকম চিন্তা করি না। একটা সময় হয়ত নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল। এখন আমার কাছে ব্যক্তিগত টার্গেট বা অর্জনের খুব বেশি মূল্য নেই। অগ্রাধীকারও নেই। দলের জন্য অবদান রাখতে খেলি। কার্যকর কিছু করতে পারলে ভালো লাগে। না পারলে খারাপ লাগে। চেষ্টা করি পরের ম্যাচে আরও ভালো করার।’
এটুকু শুনে কিন্তু মনে হবে সাকিব সত্যিই এখন নিজেকে এক নম্বর ম্যাচ উইনার ভাবেন না। তবে কেন ভাবেন না? তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও আছে। সাকিব নিজেই সেটা দিয়েছেন। কথোপাকোথনের পরের অংশে সাকিব বোঝানোর চেষ্টা করলেন, একটা সময় হয়ত তার ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি ছিল। তাকেই অনেক কিছু বাড়তি করতে হতো। কিন্তু এখন আরও পারফরমার বেরিয়ে এসেছে। তারাও অবদান রাখে।
তাই তার মুখে এমন কথা, ‘না, আসলে দলে এখন যে আমাকেই ৫ উইকেট নেবার পাশাপাশি এক’শও করতে হবে- সে সময় আর নেই। বাকি সবারই একটা ভূমিকা থাকে। সবাই যদি নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলেই দেখা যায় আমরা ভালো খেলি। বাংলাদশ যখনই জিতছে, খেয়াল করলে দেখবেন, তখনই বেশ কজন অবদান রেখেছেন। বোলিংয়ে ২-৩ জন, ব্যাটিংয়েও ৩-৪জন। আমরা কিন্তু এমন দল নই, যারা একাই একটি ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারব। হ্যাঁ, দু-একজন আছে তা করতে পারে। যেমন মোস্তাফিজ। একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে ওভারঅল আমার মনে হয়, আমাদের জয়ে দলীয় পারফরম্যান্সই বেশি থাকে।’
দলীয় পারফরম্যান্সের কথা তুলে সাকিব বলেন, ‘এখানে দলের সবাই সব জায়গায় খেলতে প্রস্তুত থাকে। এখন কোচ আর অধিনায়কের সিদ্ধান্ত, তারা যাকে যেখানে ভালো মনে করবে, সেখানেই খেলাবে দলের প্রয়োজনে। আমি কোথায় খেললে ভালো হবে, সেটা চিন্তা করার সুযোগ নেই। দল যেখানে ভাল মনে করবে, সেখানেই খেলতে হবে।’
দলের মধ্যে সিনিয়র জুনিয়র কোনো ব্যাপার নেই। সবারই খেলা এটা। এ বিষয়টা সামনে এনে সাকিব বলেন, ‘একটা দলে খেলে ১১জন, দায়িত্ব সবার। সিনিয়র-জুনিয়রের ব্যাপার নেই। কারণ দিনশেষে দলটা বাংলাদেশ। জিতলে সবাই জেতে, হারলে সবারই দায়। সিনিয়র-জুনিয়র ব্যপারটি আমার কাছে উপযুক্ত মনে হয় না। এখানে সবারই দায়িত্ব আছে আলাদা আলাদা এবং সেটি সবার পালন করা উচিত। কেউ নতুন আসবে বলে পারবে না, এমন নয়। আমরা মনে করি যে, তার কিছু করার ক্ষমতা আছে বলেই দলে এসেছে এবং সে পারবে।’
সিনিয়রদের দায়িত্ব বেশি না? ‘হ্যাঁ, সেটা তো একটা থাকেই। তবে যদি চিন্তা করেন যে সিনিয়ররাই সব করবে, তাহলে তো হবে না। তাহলে তো আপনি ৫টা ক্রিকেটার নিয়ে খেলছেন দলে, ঠিক না? আপনি তো ৫ জন নিয়ে খেলছেন না, তাই না? ৬টা জুনিয়র ক্রিকেটার যখন খেলবে, তাদেরও কাজ আছে।’
মুশফিকের উদাহরণ টেনে সাকিব বলেন, ‘মুশফিক ভাই খেলতেছে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে। উনার আলাদা একটা ব্যপোর আছে, দলের সবার বিশ্বাস আছে ওনার ওপর। নতুন ক্রিকেটার যতো ভালোই হোক, সে বিশ্বাসটা তো জন্মাবে না। আপনার ভেতরও জন্মাবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা বিশ্বাস করি, যে যার জায়গায়ই খেলুক বা ম্যাচে যে যেখানেই খেলুক, সবাই কাজটা ঠিকমত করতে পারলেই আমরা জিতব।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি