টি-টোয়েন্টিতে কিউইদের হারানোর সামর্থ্য আছে : সাকিব
দেশ থেকে এক সাংবাদিক বন্ধুর ফোন, ‘আরে যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো, সে ওয়ানডেতে টাইগাররা সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং সব হিসেবেই ভালো দল বলে সমাদৃত, সেই ওয়ানডেতেই যখন পারেনি, তখন টি-টোয়েন্টিতে আর কী করবে? ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটেতো রেকর্ড এমনিই খুব ভালো না। ’
শুধু ওই সাংবাদিক বন্ধুর ফোন সংলাপ হবে কেন? এখন অনেকের মনেই এমন সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অসংখ্য স্ট্যাটাস চোখে পড়ছে। মোদ্দা কথা, ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হারের পর অতিবড় বাংলাদেশ ভক্তও প্রিয় দলের পরিণতি নিয়ে চিন্তিত।
পরিসংখ্যানও জানাচ্ছে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের রেকর্ড ভালো না। কিন্তু এই খারাপের মাঝেও একজন অনেক ভালো ও বড় ক্রিকেটার আছেন। যাকে ভাবা হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেরই অন্যতম সেরা চৌকস ক্রিকেটার। ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্ট আসর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, পাকিস্তানের পিএসএল আর শ্রীলঙ্কার সিপিএলে যে অল্প কজন ক্রিকেটারের চাহিদা সর্বাধিক, তার অন্যতম হলেন সাকিব আল হাসান।
এ ফরম্যাটে তিনি শুধু বাংলাদেশের সেরা ও সফলতম পারফরমারই নন, সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফরমারও। বিশ্বের প্রায় সব দেশের বড় বড় ও সেরা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে সাকিব এ ফরম্যাটে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন। এ ফরম্যাটের নিগূঢ় রহস্য, গতি-প্রকৃতি, ধরন এবং অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কেও তার ধারণা অনেক বেশি পরিষ্কার। সেই সাকিব কিন্তু মোটেই নিরাশ নন। বরং যথেষ্ট আশাবাদী। রেকর্ড সময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তকমা গায়ে থাকা এ তারকা নিজ দলকে মোটেই ছোট করে দেখতে নারাজ।
তার বিশ্বাস, নিউজিল্যান্ডের সাথে টি টুয়েন্টি সিরিজে ভালো করা সম্ভব। কি করলে কিউইদের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জমজমাট লড়াই হবে, সাফল্যের দেখা মিলতে পারে, আজ সকালে স্বদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাও বলেছেন সাকিব। তার অনুভব ও স্থির বিশ্বাস, ওয়ানডে সিরিজে যে বাংলাদেশকে দেখা গেছে সেটা দলটির আসল চেহারা নয়। এর চেয়ে ঢের ভালো খেলার সামর্থ্য তাদের আছে।
তাইতো মুখে এই সংলাপ, ‘ওয়ানডে সিরিজে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিলাম, যেগুলো নিতে পারিনি। তবে এটি নতুন একটি সিরিজ। টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড দারুণ এক দল। তাদের মাটিতে আমাদের কাজটা সহজ হবে না। তবে আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভলো খেলার এবং জেতার।’
সেটা কীভাবে? কিউইদের হারানোর মূল মন্ত্র কি? এ প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, খেলার দৈর্ঘ্য ছোট হলেও পুরো সময় তাল, লয় ও ছন্দ ধরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ছন্দপতন হলে চলবে না। ধারাবাহিকতা ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, তাই ছন্দ ধরে রাখা জরুরি। কোনো কারণে ছন্দ হারিয়ে বসলে আর রক্ষা নেই। সব সম্ভাবনা ও সুযোগ হবে হাতছাড়া। ওয়ানডে সিরিজে আমরা ছন্দ পেলেও ধরে রাখতে পারিনি। টি-টোয়েন্টিতে সেটা ধরে রাখা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।’
সাকিবের কথা শুনে মনে হলো বিশ্বাসটা অটুট আছে। ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে, জিততে পারি। ছেলেরা দেখিয়েছে যে, তারা অন্তত কিছু করতে পারে। আগে যে দু`বার নিউজিল্যান্ডে এসেছি, একটুও ভালো করতে পারিনি। এবার ফলাফল হয়তো খুব ভালো বলছে না, তবে অনেক উন্নতির ছাপ রাখতে পেরেছি। সেটিকে ইতিবাচক ধরে নিয়ে খেলতে পারলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আরও ভালো করতে পারি আমরা।’
ভালো খেলার যে একদমই সামর্থ্য নেই, তাই বা বলা কি করে? ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, আছে। খুব বেশি দিন আগে নয়, এইতো গত বছর ২৬ মার্চ ; ভারতের মাটিতে ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। ব্যাঙ্গালুরে ভারতীয়দের ভীত কাঁপিয়ে প্রায় জিতেই গিয়েছিল মাশরাফির দল। একদম তীরে গিয়ে তরী ডোবার মতো ১ রানে হার, এখনো মনে কাটা হয়ে বিঁধে আছে। ভারতের মাটিতে গিয়ে ভারতীয়দের সাথে সমান তালে লড়ে জয়ের একদম তীরে পৌঁছে যাওয়ার সামর্থ্য যাদের আছে, তারা যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পারবেই না, তাই বা কি করে ভাবা? বলা। পারতেও তো পারে।
এআরবি/এমআর/জেআইএম