এ ধরনের ব্যাটিং নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যাবে না
সাধারণত বলা হয় যে, ওপেনিংটা ভালো হলে একটা দলের রান অনেক ভালো অবস্থায় যায়; কিন্তু এই সিরিজে আমাদের প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ওপেনিংটা ভালো ছিল; কিন্তু মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় আমরা ভালো রান করতে পারিনি। আর যে স্কোর করেছি আমরা আজকে, ২৩৬ রান এই উইকেটে কোন রানই না। কারণ উইকেটটা খুবই ফ্ল্যাট ছিল। তবে আমার মনে হয় সাব্বিরকে আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিৎ। রিয়াদও দেখে মনে হচ্ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তার সেই শটটা দেখে মনে হয়েছে- আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই আত্মহত্যা করে এসেছে।
এই ধরনের ব্যাটিং যদি হয়, তাহলে জয় তো দুরের কথা দলটাকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হবে। এটা নিয়ে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের আরও অনেক দায়িত্ববান হওয়া জরুরী। আজকের ম্যাচের আগেই এসব কথা বলেছি। আর মুশফিকের অনুপস্থিতিতা আমরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। সে যে দলে নাই এটা বেশ ভালোভাবেই অনুভূত হচ্ছে।
মোস্তাফিজের আগের যে রিদমটা, সেটা আসতে কিন্তু বেশ সময় লাগবে। আগেই তার ব্যাপারে আমি বলেছিলাম যে, বোলারদের ক্ষেত্রে আসলে ছন্দে ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। দোয়া করছি যেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে আগের জায়গায় ফিরে আসে। তাহলে সেটা হবে দলের জন্যই উপকারী।
তানভির ২ ওভারে ২০ রান দিয়েছে। আমার মনে হয় তাকে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে এই লেভেলে খেলতে হলে। ফিল্ডিংও কিন্তু আমাদের ভালো হচ্ছে না। যে জিনিসটা দেখা গেছে যে, দলের পারফরম্যান্স না থাকলে মানসিকভাবে বলেন, শারীরিকভাবে বলেন সবই একটু নিচের দিকে থাকে। সেটাই এখন দলের মধ্যে চলে আসছে।
সিরিজে ওয়ানডে চলে গেছে আমাদের কাছ থেকে। তবে সামনে টি-টোয়েন্টি আছে, টেস্ট আছে। টি-টোয়েন্টিতে যে কেউ ম্যাচ জিততে পারে। সেটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য দরকার একটা জয়। যদি টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো করি তাহলে, টেস্টে আরও ভালো আশা করতে পারি। আর টি-টোয়েন্টিতে যদি ভালো না করতে পারি, তাহলে টেস্টে তারা পুরো আধিপত্য বিস্তার করে খেলবে।
আসলে জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ না, ভালো খেলাটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমরা করতে পারছি না। ভালো খেলতে পারছি না। একই নিউজিল্যান্ডও কিন্তু নিজেদের দেশে অনেক শক্তিশালী একটি দল। টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজ আছে, তাইজুল, সৌম্যও আছে। এই ফরম্যাটে ১-২ ওভার ভালো খেলতে পারলে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা থাকে। এখানে দলের শক্তি কেমন সেটার ভালো করা নির্ভর করে না।
ঘুরে ফিরে একটা কথাই বলতে চাই, আমাদের একটা জয় খুবই দরকার। একটা জয় পেলে দলের চেহারা বদলে যাবে। আগের জায়গায় চলে আসবে।
সোহানের কথা বলবো, সে ভালো ব্যাটিং করেছে। উইকেটকিপিংয়ে আগেও বলেছি, সে ভালো উইকেটরক্ষক। তবে এক-দু’জন রান করলে তো চলবে না। তামিম-ইমরুল যেভাবে শুরু করেছিল, আমার মনে হচ্ছিল এদের মধ্যে এক দু’জন ৮০-৯০ বা সেঞ্চুরি করলে রান তিনশ’র কাছাকাছি চলে যাবে। তাহলে জেতার সম্ভাবনাও থাকবে।
কিন্তু আমাদেরকে ৫০-৬০ করলে চলবে না। এই ইনিংসগুলোকে আরও লম্বা করতে হবে। বোলাররাও কিন্তু খুব ছন্দে নেই। সিরিজ শুরুর আগেই বলেছি, নিউজিল্যান্ডের এই দলের বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের টিম পারফরম্যান্স লাগবে। টিম পারফরম্যান্সে তিনটা পার্টই আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বোলিং-ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং।
মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের কথা বলবো, তাদের আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। যেহেতু মুশফিক নেই, সে কারণে তাদের ওপর আরও দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমি খুব আশাবাদী ছিলাম রিয়াদের ওপর। কারণ সে বিপিএলে চমৎকার পারফরমার ছিল। ইনশাআল্লাহ একটা ম্যাচে রান পেলেই সে আগের জায়গায় ফিরে আসবে। সাকিবের কাছে যে ধরনের আশা করছি সে পারফরম্যান্স পাচ্ছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো, সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলতে হবে।
তবে আমার মনে হয়, ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া। কারণ, আগেও বলেছি, এখানে এসে অনেক বড় বড় দলও হোঁচট খায়। কারণ হোম অ্যাডভান্টেজ থাকে। একই সঙ্গে হোম অ্যাডভান্টেজকে তারা শতভাগ নিশ্চিত করে খেলে। যে কারণে আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছি না। ভালো শুরু করার পর ব্যাটসম্যানরা ১৫, ২০, ৩০ রান করে আউট হয়ে যাচ্ছে। যারা একটু সেট হবে তাদেরকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। আর বেশি রান করতে পারলেই বোলারদের ওপর চাপ কমে আসবে। তারা ভালো বল করতে পারবে।
আইএইচএস/