সামর্থ্যের সেরাটা খেলার কথাই ভাবছে বাংলাদেশ
মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের জানিয়ে দেয়া এক ছোট ঘোষণার মাঝেই মিলেছিল অন্যরকম ইঙ্গিত। বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়েছিলেন শুক্রবার কোন প্র্যাকটিস নেই। টিম বাংলাদেশ বিশ্রামে কাটাবে। জিমে যাবে। বিকেলের দিকে ঘুরতে যেতেও পারে।
এদিকে সিরিজে ০-২ তে পিছিয়ে। সামনে তুলোধুনো হবার শঙ্কা। রাত পোহালে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। এমন পরিস্থিতিতে মাশরাফির দল মানেই, দল বেঁধে সকাল সকাল প্র্যাকটিসে ছুটে যাওয়া। প্র্যাকটিস না করে বিশ্রামে কাটিয়েছে শেষ কবে ? তা খুঁজতে গিয়ে নিশ্চিত নাভিশ্বাষ উঠবে যে কারোই।
ইতিহাস জানাবে উল্টো কথা। কারণ এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার রেকর্ড খুব কম। অন্তত ঐচ্ছিক অনুশীলন রাখা হতো। যারা নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না বা রান করতে পারছেন না এমন পরিস্থিতিতে তারা ছুটে চলে যেতেন প্র্যাকটিসে। অনেক সময় বোলারদের মাঝে অনুজ্জ্বল কেউ কেউ বল হাতে নিজেকে ঝালিয়ে নিতেন। কোচ ও ব্যাটিং, বোলিং , পেস-স্পিন কোচরা অন্তত ৫/৬ জন কিংবা কখনো কখনো দু-একজন বেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে একান্তে অনুশীলন করিয়ে যেতেন।
কিন্তু এবার নিউজিল্যান্ড সফরে তার ব্যতিক্রম। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে যাওয়া বাংলাদেশ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের আগে সব রকম ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি থেকে দূরে। বাংলাদেশ দুই ম্যাচ হারার পর শেষ ম্যাচের আগে প্র্যাকটিস করেনি, করবে না, এ যে কল্পনাকেও হার মানায় ! তবে এখন আর এটা কল্পনা নয়। সত্য। নেলসনে আজ তাই করল মাশরাফি দল। কেউ কেউ এই না করাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাইবেন হয়ত।
কিন্তু তা না করে একটু ঘুরিয়ে চিন্তা করুন। এমন হোয়াইটওয়াশের সামনে দাঁড়িয়েও টিম বাংলাদেশ কোন রকম প্র্যাকটিস না করে বিশ্রাম আর ন্যাশনাল পার্কে ঘুরে কাটাতে পারে। কারণ ক্রিকেটারদের সবাই জানেন ও বোঝেন, তাদের সমস্যাটা সামর্থ্য নয়। মূল সমস্যাটা অনভ্যস্ততা।
নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বাউন্স এমনিতেই বেশি। প্রচন্ড বাতাসের কারণে বল সুইংও করে বেশি। এখানে ব্যাটসম্যানদের স্বস্তিতে সাবলীল ব্যাটিংয়ে সমস্যা হয়। আবার পেসারদের লাইন ও লেন্থ ঠাউরে বল করায়ও আছে ঝক্কি। আজ এক বেলার ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে ও সময় কাটিয়ে জানা হয়েছে এ সত্য। পুরো দল একটা ধারণা নিয়ে আছে।
তাহলো ‘আমরা মেধা ও সামর্থ্যে পিছিয়ে নেই। থাকলে নিজ মাটিতে কিউইদের দুই দুইবার ধবল ধোলাই করা যেত না। আসল সমস্যার জায়গা হলো অনভ্যস্ততা। তাছাড়া পাঁচ ছয় বছর পর এসে এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন। এখন সমস্যার জায়গা গুলো কোথায়? কার কি সমস্যা হচ্ছে? তাও জানা। এখন জায়গা মত তার দাওয়াই দিতে পারলেই হয়। সে দাওয়াইয়ের খোঁজে এখন মাশরাফির দল।
অধিনায়ক থেকে শুরু করে তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, ইমরুল কায়েস সবার সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার তাদের নিজেদের সামর্থ্যে প্রতি আস্থা আছে যথেষ্টই। সমস্যাটা কোথায়? তারা জানেন। সমাধানের রেসিপি কি? তাও জানা। এখন সেই জানা কাজটার সঠিক বাস্তব রূপ দেয়া যাচ্ছে না। শেষ ম্যাচে তা করতেই মুখিয়ে আছে টিম বাংলাদেশ।
আর তাই আজ শুক্রবার একবেলা ঘাম ঝড়ানোর বদলে শরীরকে বিশ্রাম দেয়া। পাশাপাশি মনকে প্রফুল্ল রাখাকেই উত্তম ভাবছেন অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা ও কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। অধিনায়ক মাশরাফি জাগো নিউজের সাথে আলাপে বার কয়েক বলেছেন, `এমন নয় আমাদের জেতার সামর্থ্য নেই। সামর্থ্য আছে বলেই আমরা সম্ভাবনা তৈরি করতে পারছি।’
বৃহস্পতিবার জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তা ছুতে না পারা, শেষ ম্যাচে ভাল খেলার অনুপ্রেরণা? নাকি বাঁধা? এ প্রশ্নের জবাবে মাশরাফির সোজা কথা, যেভাবে হেরেছি, তা মাথা থেকে সড়ানো কঠিন। সে হারের কথা এবং ম্যাচের চালচিত্র কিছু থেকেই যাবে। তা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে খেলা কঠিন কাজ। তারপরও যদি জিততে পারি সেটা অনেক বড় পাওয়া হবে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একটি জয়ও হবে অনেক বড় প্রাপ্তি।’
এদিকে ইমরুল-সাব্বিরের কথায়ও মিলেছে একটা ইতিবাচক বার্তা। মনে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন সম্পর্কে টিম বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। ইমরুল জানালেন, ‘নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে কাজটা কঠিন। দুটি ম্যাচেই আমাদের কিছু ভুল ছিল। এখানে এসে সব দলই ভুল করে। আমরা সেই তুলনায় ভালোই খেলছি। চেষ্টা করব ভালো করতে। আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই জয়ের জন্য চেষ্টা করেছি। ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলারই চেষ্টা করি। এর মধ্যে ভুল বা ভালো-খারাপ হতে থাকে। আর এটা খেলারই অংশ। আমরা চেষ্টা করব ভুলগুলো ঠিক করে শেষ ম্যাচে নামতে। দুটি ওয়ানডে থেকে আমরা অনেক কিছু বুঝতে পেরেছি, শিখছি। সামনে কাজে লাগাবোর চেষ্টা করব।’
এআরবি/এমআর/এমএস