নেলসনে কেমন আছে টিম বাংলাদেশ!
ক্রাইস্টচার্চে পরাজয়ের চেয়ে নেলসনের ম্যাচটিই সবচেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। ২৫১ রানে নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে দেয়ার পর জয়ের এমন দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপ কোনোভাবেই হৃদয় থেকে মুছতে পারছে না সমর্থকরা। সবারই একটা কথা, এমন সুবর্ণ সুযোগও কেউ মিস করে ফেলে?
তবে সমর্থকদের হৃদয়ে যতই রক্তক্ষরণ হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেহারা দেখে মনে হলো, তারা মোটেও হতাশ নন। নেলসন সময় বেলা ১টা থেকে প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সংস্পর্শে থেকে যা মনে হলো, তারা মোটেও হতাশ নন। কারও চোখে মুখে বিমর্ষতার কোনো চাপ নেই। না পারার গ্লানি আচ্ছন্ন করতে পারেনি কাউকে।
ক্রিকেটাররা হতোদ্যম নন। আশা ভঙ্গের বেদনায়ও ক্লিষ্ট নন। সবাই কম-বেশি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন। সবার বোধ-বিশ্বাস ও অনুভব, ঘাটতি মেধা ও সামর্থ্যে নয়। নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য আছে ঠিকই; কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের হারাতে করণীয় কাজগুলো ঠিক মত হচ্ছে না।
ক্রিকেটারদের কথা-বার্তা ও শরীরি অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল, নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি আস্থা আছে তাদের। তারা বিশ্বাস করেন, এখন আর মনের বাঘে খায় না। জিততে না পারলেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সেটা তারা নিজেরাই তৈরি করতে পারছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কাজে লাগানো যায়নি; এটাই সমস্যা। কিভাবে পাওয়া ও তৈরি করা সুযোগ লাগানো যায়, ভুল গুলো যত তাড়াতাড়ি শুধরে নেয়া সম্ভব- সে চিন্তাই সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে, অন্যদের চেয়ে অধিনায়ক মাশরাফি ছিলেন খানিকটা ব্যাতিক্রম। স্বাভাবিক মাশরাফির দেখা মেলেনি সে অর্থে। তার সেই আড্ডা জমিয়ে কথা-বার্তা বলা, সবার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা-মশকরা করা একটু কমই ছিল। কিছুটা আনমনাই ছিলেন তিনি।
মাশরাফি যে বিমর্ষ ছিলেন সেটার একটা উদাহরণ দিলেই প্রমান মিলে যাবে। পুরো দল যখন আজ দপুরে একসঙ্গে জুমার নামাজের পর মধ্যাহ্ন ভোজ করতে গেলো, মাশরাফি তখন তামিম এবং অন্যদের বলে দিলেন, ‘আমার খাবারটা নিয়ে আসিস, ঘরেই খাবো।’ পরে তার জন্য খাবার নিয়ে আসা হলে নিজ রুমে বসেই দুপুরের খাবর খেলেন তিনি। শুধু তাই নয়, খাওয়ার পর নিজ হাতে চা বানিয়ে জাগো নিউজের এই প্রতিনিধিসহ দুই সিনিয়র সাংবাদিককে চা’ও অপার করেছিলেন।
সাকিবকে দেখে মনে হলো তার চোখে-মুখে পেশাদারিত্বের ভাব। পেছন কী হয়েছে এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। টিম হোটেলে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাথে দেখা হওয়ার পর শুধু হাই-হ্যালো বিনিময় করলেন। তামিমও প্রায় একই রকম। মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে। কারণ, ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ম্যাচের পর তাদের স্ত্রীরা (দু’জন আবার আপন বোন) পৌঁছে গেছেন নেলসনে । অধিনায়ক মাশরাফিকে বাহ্যিকভাবে হতাশ বা বিমর্ষ না লাগলেও কথা-বার্তা, চালচলনে এবং তার শরীরি অভিব্যক্তিতে পরিস্কার ফুটে উঠলো একটা চাপা আফসোস।
দুই ম্যাচের মাঝে মাত্র একদিন বিরতি। এ কারণে বাংলাদেশ দলের কোনো অনুশীলন পর্ব ছিল না আজ। টিম হোটেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন ইমরুল কায়েস এবং সাব্বির রহমান। আগের ম্যাচে পরাজয়ের কারণ এবং সামনের ম্যাচে কী পরিকল্পনা এসব নিয়ে কথা বলেছেন তারা দু’জন।
জুমার নামাজের দিন হওয়ার কারণে দুপুরে ক্রিকেটাররা গেলেন স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে। সেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খুতবা পাঠ করলেন এবং তার ইমামতিতেই হলো জুমার নামাজ। নামাজের পর টিম হোটেলের কাছেই একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে দল বেধে মধ্যাহ্নভোজ সারতে গেলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। শুধুমাত্র মাশরাফি ফিরে গেলেন নিজের রুমে। সতীর্থদের বলে দিলেন তার খাবারটা নিয়ে আসতে।
দুপুরের খাবার শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা বিকাল ৩টায় গেলেন নেলসনে অবস্থিত ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে। তবে তখন দলের সঙ্গী হননি কোচ হাথুরুসিংহে, অধিনায়ক মাশরাফি এবং তামিম ইকবাল।
আইএইচএস/পিআর