নেলসনে মিরাজকে খেলানো উচিৎ
নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটিতে দুটি মাহাত্ম্য আছে। এক নম্বর হচ্ছে, এটা আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ। যেটা বাংলাদেশ সচরাচরই করে থাকে। দুই নম্বর হচ্ছে, এটা আমাদের সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। আমরা যদি সিরিজে টিকে থাকতে চাই, তাহলে এই ম্যাচে জিততে হবে, অন্যথা নিউজিল্যান্ডই জিতে যাবে। এ কারণেই এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নেলসনে হবে এই ম্যাচটি। এই মাঠে আমাদের একটা সুখস্মৃতি আছে। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা ৩১৮ রানের বিশাল একটি স্কোর তাড়া করে জিতেছিলাম। সব কিছু মিলিয়ে এই ম্যাচটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে আবার কিছু কিছু প্রশ্নও আছে। এক নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে, আমি প্রথম কলামে লিখেছিলাম, মাশরাফির ভুল যেন আমরা না করি মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে। তাকে যেন জোর করে না খেলাই। কারণ একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি জানি, এতবড় ইনজুরিতে থেকে ফিরে আসতে হলে তাকে কী পুনর্বাসনের মাধ্যমে যেতে হবে।
প্রথমে তাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছোট ছোট স্পেল করিয়ে বড় ম্যাচ খেলার জন্য তৈরি করতে হবে। কিন্তু সরাসরি একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়ে তাকে আমরা যে শুরুটা করালাম, আমি জানি না সে কতটুকু ফিট হয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলো খেলতে পারবে। প্রথম ম্যাচে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল, সে শতভাগ ফিট ছিল না। ঢাকায় বসে জানতে পারলাম, দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে আর খেলানোর ঝুঁকি নেয়া হচ্ছে না। আমি আশা করি, আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেয় এবং এই ইনজুরিটা যেন দীর্ঘ না হয়।
একই সঙ্গে বলবো, এই রকম একটা প্রতিভাবান ক্রিকেটার যেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন, বাংলাদেশে জন্মেছে, সেহেতু আমাদের উচিৎ তাকে সেভাবে দেখে-শুনে রাখা। তার পরিচর্যা করা। আমরা যেন তাকে অতিরিক্ত ব্যবহার করে না ফেলি।
সাথে এটাও বলে নিই, আমরা যে জোর করে তাকে সাসেক্সে পাঠিয়েছিলাম, তার খেসারত আজকে, এখনও দিচ্ছি। কোনো কারণছাড়াই আমরা তাকে সাসেক্সে পাঠিয়েছিলাম এবং সেই ইনজুরিটা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে সে। এ কারণে শুধু মোস্তাফিজই নয়, পুরো বাংলাদেশই এ জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হলো, যেটা এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
সাসেক্সে মোস্তাফিজকে পাঠানো ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত এবং কেন, কী কারণে তাকে সাসেক্সে পাঠানো হলো- সেটার একটা তদন্ত হওয়া উচিৎ।
দ্বিতীয় ম্যাচের আগে আরেকটা বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে, মুশফিকের ইনজুরি। একজন খেলোয়াড় এ ধরনের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে ইনজুরড হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এ কারণে মুশফিকের রিপ্লেসমেন্ট কিন্তু দুটো হওয়া উচিৎ। একটা ব্যাটসম্যান এবং একটা উইকেটরক্ষক; কিন্তু যেহেতু আমাদের কাছে ওই লেভেলের খেলোয়াড় নেই, সোহান হয়তো উইকেটের পেছনের দিকটা সুন্দর সামলে নেবে; কিন্তু মুশফিকের ব্যাটিংয়ের যে ঘাটতিটা থাকবে, সেটা পূরণ করার জন্য কিন্তু আমাদেরকে একজন এক্সট্রা ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে হবে।
সেক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের ব্যাটসম্যানের অভাব, সৌম্য সরকারকে নিয়ে অনেকে হয়তো ভাবছেন, সে রান করতে পারছে না; কিন্তু যেহেতু সে ট্যুরে আছে একই সঙ্গে আমাদের সাইড বেঞ্চে আলাদা ব্যাটসম্যানও নেই। সুতরাং, ব্যাটিং গভীরতা লম্বা করার জন্য সৌম্যকে খেলানো প্রয়োজন এবং দলে মিরাজের অনুন্তর্ভূক্তি দরকার। তার মত এত বৈচিত্র্যময় অফ স্পিনার দলে রাখা খুবই প্রয়োজন। দলে একজন লেগ স্পিনার রয়েছে।
তবে, আমরা জানি সাধারণত লেগ স্পিনার ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে; কিন্তু আমি দেখছি, নিউজিল্যান্ডের মূল ব্যাটসম্যাদের অধিকাংশই বাঁ-হাতি এবং এই বাঁ-হাতিদের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই একজন স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার খেলানো উচিৎ। আমরা মোসাদ্দেকের ওপর ভরসা করছি। একদিনের ক্রিকেটে মোসাদ্দেক হয়তো কিছুদুর চালিয়ে নিতে পারবে; কিন্তু একজন জেনুইন অফস্পিনার মিরাজ যেহেতু দলে আছে, অবশ্যই তাকে সুযোগ দেয়া উচিৎ।
ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে যদি দেখেন, তাহলে আমি বলবো তেমন কোনো পরিবর্তনের দরকার নেই। টিম যদি মনে করে, তাহলে হয়তো তাসকিনের জায়গায় রুবেলকে চিন্তা করতে পারে। আবার এটাও সত্যি যে একটা দলের মধ্যে অনেক পরিবর্তনের আমি পক্ষপাতি না। একটা দল যখন খেলতে যায়, তখন একসঙ্গে থাকা খেলোয়াড়দেরই সবচেয়ে বেশি সুযোগ দেয়া উচিৎ এবং সে আত্মবিশ্বাসও থাকা উচিৎ।
পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি যে, কোচ ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে ফেলেছেন যে সৌম্যকে অনেক বেশি সুযোগ দেয়া হয়ে গেছে বা সৌম্যকে খেলানো উচিৎ না। এ ধরনের বিবৃতি সাধারণত কোচের কাছ থেকে আসা উচিৎ না। কোচের কাজ হচ্ছে দলকে কোচিং করানো। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত নির্বাচক কমিটির প্রধান কিংবা অধিনায়কই নেন। দলটা হওয়া উচিৎ অধিনায়কের পছন্দের। আমরা কোচকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিয়ে আজ পর্যন্ত তাকে অনেকগুলো উইং দিয়ে দিয়েছি। যার কারণে সে তার মূল কোচিং থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।
মূল কোচিং থেকে দুরে সরে যাচ্ছে- এ জন্য বলছি যে, আমাদের যে ঘরোয়া খেলাগুলো হয়, ওই খেলাগুলো না দেখে সে ছুটি কাটায়। সেখানে কিন্তু খেলোয়াড়দের যে দুর্বল জায়গাগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করার কথা কিন্তু কোচের। সেগুলো হচ্ছে না।
আবার ফিরে আসি নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশের সিরিজের ম্যাচে। এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডও কিন্তু মরিয়া হয়ে খেলবে, আমাদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের জন্য। নেলসনের উইকেট সম্পর্কে আমরা ঢাকায় বসে বলতে পারবো না, সেটা কেমন। তবে অনুমানের ভিত্তিতে বলতে পারি যে এখানকার উইকেটটি হবে ব্যাটসম্যানদের জন্য। এখানে কিন্তু টস জেতার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধের মত ব্যাটিং বেছে নেয়া উচিৎ। তাহলে শুরুতেই একটা বড় স্কোর গড়ে ফেলা যাবে এবং প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে আমাদের হাতে যে যে অস্ত্রগুলো আছে, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
যদি মিরাজ খেলে, যদি তাসকিনের পরিবর্তে রুবেল কিংবা যেই খেলুক, মাশরাফি নিজেও কিন্তু যথেষ্ট তাদের রান বেধে রাখার জন্য; যদি আমরা ৩০০’র বেশি রান করতে পারি। কারণ, যে কোনো দলের জন্যই ৩০০ রান তাড়া করা কঠিন। আমাদের এই কৌশলটাই নেয়া উচিৎ যে, প্রথমে ব্যাটিং করতে পারলে অন্তত ৩০০ রান করবো এবং সেটা পরিকল্পনার মাধ্যমে করতে হবে। তারপরও যদি হেরে যাই, তাহলে অন্তত বলতে পারবো যে ভালো খেলে হেরেছি। আমাদের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাওয়া উচিৎ। আমাদের দলের শক্তি অনেক। আমরা এর আগেও বহুবার প্রমাণ করেছি, যে কোনো জায়গা থেকে ফিরে আসতে পারি এবং বিদেশের মাটিতেও প্রমাণ করবো, আমরাও ফিরে আসতে পারি।
অধিনায়ককে এখানে একটু অফ সিনে মনে হচ্ছে। তাকে আরেকটু সামনে আসতে হবে। সংবাদ মাধ্যমকে সামলানো থেকে শুরু করে, পারফরম্যান্সসহ সবজায়গায় অধিনায়ককে আরেকটু অগ্রভাগে এগিয়ে আসা উচিৎ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ দলের যে স্তম্ভগুলো আছে, তামিম-ইমরুল-সাকিব-মাহমুদউল্লাহ- যারা আছে তাদের সেরাটা খেলতে হবে। কোনো আলাদা চাপ নেয়ার দরকার নেই। তারা তাদের যে মেধা আছে সে মেধা অনুযায়ী খেললে ইনশাআল্লাহ আমরা এই ম্যাচে জয়ী হতে পারবো।
তবুও জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন যখন আসে তখন আমি বলবো এটা নির্ভর করছে উইকেটের ওপর। কারণ উইকেটটা একটা বড় ফ্যাক্টর। আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাষটা কেমন সেটাও এখন বলতে পারছি না। ধরে নিচ্ছি, ভালো আবহাওয়া থাকবে। ব্যাটিং উইকেট হবে। তারপরও আমি বলবো, নিউজিল্যান্ড যেহেতু প্রথম ম্যাচ জিতেছে, তাদের আত্মবিশ্বাসও বেশি। সুতরাং, আমি ৫৫ ভাগ এগিয়ে রাখবো তাদেরকেই। আর ৪৫ ভাগ ধরবো বাংলাদেশ জিতবে।
তবে, এখানে একটা প্রশ্নও উঠেছে যে, মোস্তাফিজ পুরো ফিট না হলেও প্রথম ম্যাচ খেলেছে, মুশফিকের ইনজুরি। সে ক্ষেত্রে দলটি নৈতিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে? এই প্রশ্নটাই সারাবছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্টসহ সবাইকে করে বেড়াই, যে আমাদের ক্রিকেট দলে ১৬টা খেলোয়াড় হওয়া তো উচিৎ না। আমাদের জাতীয় দলে তো ২৫টা খেলোয়াড় থাকা উচিৎ এবং সেই ২৫টা ক্রিকেটারই হবে কেউ কারও চেয়ে কম না। আপনি যদি ভারতের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন, কোনো কারণে তাদের দু’জন মূল খেলোয়াড় খেলতে না পারে, তাহলে তাদের কিন্তু রিপ্লেসমেন্ট খেলোয়াড় তৈরিই থাকে। আজকে যদি আমাদের দলের দিকে তাকাই, তাহলে কী মুশফিক কিংবা মোস্তাফিজের রিপ্লেসমেন্ট আছে। কাছাকাছিও তো কেউ নেই।
আইএইচএস/জেআইএম