মাশরাফির ভুল যেন মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে করা না হয়
মোস্তাফিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্টকে আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ। যে ভুলটা ২০০১ সালে করা হয়েছিল মাশরাফির ক্ষেত্রে সেই ভুলটা যেন মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে না হয়। সেবার হ্যামিল্টন টেস্টে পাঁজরে ব্যাথা সত্ত্বেও মাশরাফির কোনো মতামত না নিয়ে তাকে খেলতে নামিয়ে দিয়েছিলেন তখনকার ফিজিও জন গ্লস্টার আর কোচ ট্রেভর চ্যাপেল। বাকি ইতিহাস তো সবারই জানা। সারাজীবনই সেই ইনজুরির ধকল বয়ে বেড়াতে হচ্ছে মাশরাফিকে। অথচ, ২০০১ সালের ওই সময়টা ছিল মাশরাফির বেড়ে ওঠার সময়।
মোস্তাফিজের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। মাত্রই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে। শুরু হতে না হতেই পড়েছে ইনজুরির কবলে। সামনে এখনও তার বিশাল ক্যারিয়ার। দারুণ সম্ভাবনা। ইনজুরি থেকে সে কী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরতে পেরেছে? পারলেও ম্যাচ খেলার জন্য শতভাগ ফিট কি না- এ বিষয়টা বিবেচনায় আনা খুব জরুরি। মাশরাফিকে যেমন জোর করে সবাই ওইদিন খেলতে নামিয়ে দিয়েছিল, মোস্তাফিজকে যেন জোর করে নামিয়ে দেয়া না হয়। আমার মতে, একাদশ গঠন করার আগে মোস্তাফিজের মতামত নিলেই সবচেয়ে ভালো হয়। সে যদি নিজে মনে করে খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট, তবেই তাকে একাদশে রাখা উচিৎ, নচেৎ নয়।
ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড এই ম্যাচে অবশ্যই ফেবারিট। কারণ হোম কন্ডিশনে খেলবে তারা। নিঃসন্দেহে এই মাঠে সবচেয়ে বেশি খেলেছে তারাই। তবে, একটা ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এগিয়ে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের চেয়ে আমাদের ক্রিকেটারদের যদি ম্যাচ সংখ্যা যোগ করা হয়, তাহলে আমাদের দলটাই সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। সর্বশেষ পারফরম্যান্সের বিচারেও আমরা এগিয়ে। কারণ, ঘরের মাঠে হলেও আমরা কিন্তু টানা ৬টি সিরিজ জিতেছি। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারলেও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে ওই সিরিজে।
সিরিজে ফেভারিট নিউজিল্যান্ডই। তবে আমার মনে হয়, দারুণ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কারণ, অভিজ্ঞতা বলুন আর আত্মবিশ্বাস বলুন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই এগিয়ে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ক্রিকেটাররা খেলতে নামবে, সে আত্মবিশ্বাসই বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে। তবে এটা ঠিক, প্রতিটি স্বাগতিক দেশই গোম কন্ডিশনের সুবিধা নেয়। নিউজিল্যান্ড একটু বেশিই নেই। তবুও, আমি মনে করি, হোম অ্যাডভান্টেজের বিষয়গুলো আমাদের ক্রিকেটাররা মাথায় না রাখলেই চলবে। শুধু প্রয়োজন যে যার নিজের কাজগুলো ঠিকমত করবে। তাতেই আমি মনে করি জয় পাওয়া কঠিন হবে না।
আমার মতে ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যদি আমরা এই ম্যাচে কোনোভাবে জিতে যাই তাহলে শুধু সিরিজ জয়ের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আমরা অনেকদুর এগিয়ে যাবো। আর যদি হেরে যাই, তাহলে অনেক পিছিয়ে যাবো। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা সিরিজ শুরু করবো, সেটাকে আরও বাড়িয়ে নেয়ার জন্য এই ম্যাচ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচটা আমরা হেরে গেছি। এ ধরনের প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে যাওয়া কখনও ভালো কিছু নয়। তারপরও আমি বলবো, আমরা একটা ফ্রেশ দিনে, ফ্রেশ মানসিকতা এবং ফ্রেশ দল নিয়ে মাঠে নামবো।
নিউজিল্যান্ডের উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এই উইকেটে বাংলাদেশের দলটা কেমন হতে পারে এটা নিযেও আলোচনা কম হচ্ছে না। তবে ক্রাইস্টচার্চে উইকেটের যে কন্ডিশন তাতে আমার মতে বাংলাদেশের চারটা পেসারই খেলানো উচিৎ। তাসকিন, রুবেল, মাশরাফি এবং মোস্তাফিজ। স্পিনার হিসেবে সাকিব তো থাকছেই। মোসাদ্দেককে নেয়া হলে সে বোলিং করতে পারে। মাহমুদউল্লাহ রয়েছে এক্সট্রা বোলার হিসেবে। এর সঙ্গে যদি একজন লেগস্পিনার খেলানো হয়, তাহলে সেটা হবে বিলাষিতা। আমি কোনোভাবেই একজন লেগ স্পিনার নেয়ার পক্ষপাতি না।
ব্যাটসম্যানদের কাজ মোটেও কম নয়। দলের মূল খেলোয়াড় তামমি, সাকিব এবং মুশফিক। এদের সঙ্গে বড় ইনিংস গড়ার জন্য ইমরুল-সৌম্যকে ভালো সাপোর্ট দিতে হবে। ৬ কিংবা ৭ নম্বরে মোসাদ্দেক রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে এটাই বড় শক্তি। ৭ নম্বর পর্যন্ত ব্যাটসম্যান রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে ওদের শক্তিশালি দিন হচ্ছে ফাস্ট বোলিং এবং ব্যাটিং লাইনআপ। আমাদের রয়েছে শক্তিশালি ফাস্ট বোলিং, ব্যাটিং লাইনআপ এবং সাথে স্পিন বোলিং। এই একটা দিক দিয়েই আমরা অনেক এগিয়ে। এ কারণে, ভালো করার জন্য আমাদের প্রয়োজন নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে করে আসা।
ভালো করার জন্য সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখবে একটা গোচানো এবং ভালো গেম প্ল্যান। তবে এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমাদের কোচ এবং অধিনায়ককে অবশ্যই ২ থেকে ৩টা বিকল্প গেম প্ল্যান তৈরি করে রাখা উচিৎ। কারণ, পরিস্থিতি অনুযায়ী গেম প্ল্যান পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।
ক্রাইস্টচার্চের উইকেটে নিয়ে দেখছি অনেকেই উদ্বিগ্ন। তবে আমার মনে হয় ব্যাটিং বান্ধব উইকেটই করা হবে। কারণ এটা ওয়ানডে ম্যাচ, টেস্ট নয়। ওয়ানডে-টি টোয়েন্টিতে সাধারণত ব্যাটিং বান্ধব উইকেটই তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে বলতে পারি, প্রচুর রান উঠবে। ব্যাটসম্যানরাও প্রচুর শট খেলার সুযোগ পাবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের সে দিকেই নজর রাখতে হবে বেশি।
আইএইচএস/আরআইপি