বিদেশি কোচ নিয়ে অন্ধকারে হকি ফেডারেশন
দুই মাসে দুটি সাফল্য। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে রানার্সআপ এবং নভেম্বরে হংকংয়ে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ) কাপে চ্যাম্পিয়ন। দেশের হকিতে বেশ রমরমা অবস্থাই বলতে হবে। জিমি-আশরাফুলদের এ সাফল্য চারিদিকে আলো ছড়াচ্ছে।
কিন্তু হকিতে এ আলোর নিচে যে ঘোর অন্ধকার, তা দেখতে আতশি কাঁচের দরকার নেই। হকি ফেডারেশনে ঢু মারলেই কানে আসে নানা কথা। অনিয়ম আর ক্ষোভ এখন নিত্য সঙ্গী হকিতে।
এএইচএফ কাপে বাংলাদেশ হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যুব এশিয়া কাপের পর এএইচএফ কাপের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। দলকে প্রায় এক মাস ইউরোপে রেখে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানো হয়েছে পোল্যান্ড আর অস্ট্রিয়াতে। হংকংয়ে বাংলাদেশের খেলায় এর ইতিবাচক প্রভাবও ছিল।
কিন্তু এ সাফল্যের মধ্যেও হকিতে চলছে গুমোটভাব। বিশেষ করে বিদেশি কোচ নিয়োগ নিয়ে ফেডারেশন রয়েছে অন্ধকারে। এএইচএফ কাপের জন্য ৫ জন বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে শোনা গেলেও হংকংয়ে ছিলেন মাত্র ৩ জন। ঢাকা থেকে দলের সঙ্গে হংকং গিয়েছিলেন দুই জার্মান প্রধান কোচ অলিভার কার্টজ ও উপদেষ্টা কোচ পিটার গেরহার্ড। জার্মানি থেকে একজন ভিডিও বিশ্লেষক গিয়েছিলেন হংকংয়ে। যদিও দল হংকং যাওয়ার আগে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সফিউল্লাহ মুনীর বলেছিলেন ৫ জন বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে জাতীয় দলের জন্য।
নিয়োগের প্রশ্ন যখন আসে তখন পুরো বিষয়টিতে দেখা যায় গলদ। কারণ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন কোনো বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়নি এবং কোচের বিষয়ে ফেডারেশন কিছু জানেও না। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক বিদেশি কোচ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিদেশি কোচদের সঙ্গে ফেডারেশনের কোনো চূক্তি হয়নি। আমার সোজা কথা হলো ভবিষ্যতে বিদেশি কোচ নিলে সেটা ফেডারেশনের মাধ্যমেই হতে হবে। ফেডারেশনকে অবশ্যই সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এখন যিনি আছেন অলিভার কার্টজ- তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, প্লিজ ডু ইট। কারণ তোমার তো কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না ফেডারেশনের কাছে। ফেডারেশনও তোমাকে কিছু করতে পারবে না যদি চুক্তি না থাকে। চুক্তি তোমার অবশ্যই ফেডারেশনের সাথে হতে হবে।’
যদি চূক্তি না হয়, ফেডারেশন কিছু না জানে তাহলে কোচদের বেতন কে দিচ্ছেন? ‘মনির সাহেব (সফিউল্লাহ মুনীর) সহসভাপতি হওয়ার পর বলেছিলেন ফেডারেশনকে ১কোটি টাকা দেবেন। হয়তো ওই টাকা থেকেই কোচের বেতন দিতে পারেন’- বলেছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে ফেডারেশনকে কিছু না জানিয়ে কোনো কর্মকর্তা কি বিদেশি কোচদের বেতন দিতে পারেন? কেউ টাকা দিলে তা তো ফেডারেশনের হিসেবে জমা হবে এবং সেখান থেকে ফেডারেশন ব্যয় করবে। সব তো নিয়ম মতোই হওয়া উচিত তাই না? এমন প্রশ্নের জবাবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক বলেছেন, ‘সেটাই তো হওয়া উচিত।’
বিদেশি কোচের বেতন তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। সে টাকা কি পেয়েছে হকি ফেডারেশন? আবদুস সাদেক বলেন, ‘না বিসিবি টাকা দেয়নি। তবে বিসিবি সভাপতি পাপন সাহেব (নাজমুল হাসান পাপন) আমাকে বলেছেন কোচের চুক্তি দেখিয়ে টাকা নিয়ে নেন; কিন্তু আমি তো কোনো চুক্তিপত্র দেখাতে পারছি না। কারণ কোচদের সঙ্গে ফেডারেশনের তো কোনো চুক্তি নেই। বেতন কত তাও ফেডারেশনের জানা নেই। অপ্রত্যাশিত হলেও কোচের বিষয়ে ফেডারেশন কিছুই জানে না। ’
কোচ নিয়ে নতুন করে কি ভাবছে ফেডারেশন? ‘অলিভার কার্টজকে ঢাকায় আনা হয়েছে ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি করতে। এখন শুধু তাকে রাখলেই আমাদের চলবে। যখন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে কিংবা দল বাইরে যাবে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী একজন ভিডিও বিশ্লেষক আনলেই হবে। এর বেশি কোচ কোনো দরকারই নেই’- বলেছেন হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
ফেডারেশনে কী এ অনিয়মগুলো চলতেই থাকবে? ‘ফেডারেশনের মধ্যে এসব ঠিক করতে হবে। নিয়ম-নীতিটা আমরা কেউ মানতে চাই না। এটা দু:খজনক। সভাপতি মহোদয়ের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাকে বলেছি আমাদের সব কিছুই নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকা উচিত’- বলেছেন আবদুস সাদেক।
তবে বিদেশি কোচের বিষয়ে ফেডারেশন কিছু জানে না তা মানতে নারাজ ফেডারেশনের সহসভাপতি সফিউল্লাহ মুনীর। এ বিষয়ে তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমি সব কিছু সভাপতি মহোদয়কে জানিয়েই করেছি।’
আরআই/আইএইচএস/এমএস