বাংলাদেশের মাঠ-উইকেট চমৎকার
এ কোন ইমরান খান? চিটাগাং ভাইকিংসে তাকে দেখেই একরাশ প্রশ্ন। কিংবদন্তি ইমরান খানের দেখাদেখি আরেক ইমরান খানকে পেয়েছে পাকিস্তান। যিনি ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম। এখনো খেলছেন পাকিস্তান জাতীয় দলে। ৭টি টেস্ট ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছেন। যদিও এখনো ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টির ক্যাপ পরা হয়নি তার।
কিন্তু এই ইমরান খান যে বামহাতি ফাস্ট মিডিয়াম। পাকিস্তান যখন নিউজিল্যান্ড সফর করছেন এই ইমরান খান খেলছেন, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। ভক্তদের একরাশ বিস্ময়ের মধ্যে জানিয়ে রাখি, এই ইমরান খান আরেকজন। যার নামের সঙ্গে জুনিয়র শব্দটা জুড়ে গেছে। টেপ টেনিস খেলতে খেলতেই পাকিস্তান জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন তিনি।
খেলেছেন পিএসএলে পেশোয়ার জালমিতে তামিম ইকবালের সঙ্গে। সেখানেই চোখে পড়েছেন চিটাগাং ভাইকিংস অধিনায়কের। এরপরই এলেন বিপিএলে। জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা আরিফুর রহমান বাবুর সঙ্গে দিয়েছেন একান্ত সাক্ষাৎকার। সে সাক্ষাৎকারই তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন : আপনার নাম তো বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খানের নামের সঙ্গে মিল করে রাখা। আপনার ভেতরে এটা কেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে?
ইমরান খান জুনিয়র : (চোখে মুখে দ্যুতি ছড়ানো জবাব) কী যে বলেন! এক বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারের নামের সঙ্গে আমার নামের মিল। ইমরান খান আমার দেশ পাকিস্তানের ‘গ্রেট’ ক্রিকেটার। যিনি ক্রিকেট খেলে অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সাফল্য। নাম-ডাক, খ্যাতি ও যশও ছিল প্রচণ্ড। বলতে দ্বিধা নেই, শুধু নামেই মিল নয়। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি ইমরান খানকে অনুসরণ করতে। তার মতো হবার স্বপ্নও দেখতাম।
প্রশ্ন : আপনার ক্রিকেটার হবার গল্পটা একটু বলবেন, শুনলাম আপনি নাকি ক্রিকেট বলে হাত না পাকিয়েই জাতীয় দলে?
ইমরান : সত্যি বলতে কি আমি কখনই ক্রিকেট বলে (ডিউজ) খেলিনি। নিজপাড়ায় টেপ টেনিস খেলতাম। ওই টেপ টেনিস খেলার সময় আমার কোচ আব্দুর রহমানের সুনজরে পড়ে যাই। আমার বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং তাকে আকৃষ্ট করে। তিনিই আমাকে ঘষে মেজে তৈরি করেন।
প্রশ্ন : ক্রিকেট বলে অভিষেকের গল্পটা একটু বলবেন?
ইমরান : সত্যি বলতে কি আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই ছিল না। কারণ আমি পাড়ায় টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলেই বড় হয়েছি। বড় মাপের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট কী? এতটুকু ধারণাও আমার ছিল না। ক্রিকেট বলে বল করতে স্পাইকযুক্ত বোলিং বুট লাগে। তা না পরে ফ্ল্যাট কেডস পায়ে চাপিয়ে যে ফাস্ট বোলিং করা যায় না। কেউ তা করেন না। এসব কিছুই জানতাম না। অথচ পেশোয়ার প্যান্থার্সের হয়ে ২০১৪ সালে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েই ওসব কিছু জানা হলো। টেপ টেনিস থেকে আমি ঢুকে গেলাম ক্রিকেট বলের ভুবনে। সেই প্রথম স্পাইকযুক্ত বোলিং বুট পায়ে বোলিং করলাম। সে আসরে আমিই হলাম সর্বাধিক উইকেট শিকারী। এরপর আমার ভাগ্য খুলে গেল। ওই বছরই করাচিতে হায়ার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলার ডাক আসলো।
প্রশ্ন : তারপর কী ঘটলো?
ইমরান : কোচ আব্দুর রহমান আমাকে তার দলে নিলেন। তিনিই আমাকে প্রচুর উৎসাহ দিলেন। অনুপ্রেরণাও জোগালেন। তার মনে হলো আমি ব্যাটসম্যানের মনের অবস্থা বুঝতে পারি। এছাড়া চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও রাখি। আমি কোচের আস্থার প্রতিদান দেয়ার পাশাপাশি পরামর্শ অনুসরণের প্রাণপন চেষ্টা করলাম।
প্রশ্ন : টেপ টেনিসের সঙ্গে ক্রিকেট বলের পার্থক্য কী?
ইমরান : প্রচুর ফারাক। একটা হলো যথার্থ ক্রিকেট বল। যাতে বল করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ তৈরি করা জরুরি।
প্রশ্ন : কিন্তু টেপ টেনিসের অভিজ্ঞতা কি ক্রিকেট বলে কাজে লেগেছে?
ইমরান : আমি তো টেপ টেনিসে খেলে খেলেই বড় হয়েছি। আমার ক্রিকেট জ্ঞানের পুরোটাই ছিল টেপ টেনিসকেন্দ্রিক। আমি ওই সময় যেসব কৌশল রপ্ত করেছিলাম। সেগুলো পরে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : সেই টেপ টেনিসে খেলে খেলে বড় হওয়া আপনি আজ জাতীয় দলের ক্রিকেটার। পুরো ব্যাপারটা কেমন বোধ হয়?
ইমরান : এরই মধ্যে ইসলামাবাদ থেকে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। তবে এখন ঠিক করেছি লেখাপড়ার গতি কমিয়ে ক্রিকেটেই বেশি মনোযোগী হবো। কারণ ক্রিকেট আমাকে একটা অন্যরকম পরিচিতি দিয়েছে। আমি ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন : বিপিএল খেলতে এসে কেমন লাগছে?
ইমরান : শুধু বিপিএলে প্রথমবার অংশ নেয়াই নয়। আমি বাংলাদেশে এবারই প্রথম খেলতে এলাম। এসে দারুণ ভালো লাগছে। এখানে প্রচুর দর্শক খেলা দেখতে আসেন। মাঠ, উইকেট চমৎকার। সবচেয়ে বড় কথা এখানকার কন্ডিশনটাও আমার পক্ষে। আমার বোলিং স্টাইলটার সঙ্গে কন্ডিশনটা মানিয়ে গেছে বেশ।
প্রশ্ন : ক্রিস গেইলের সঙ্গে খেলার, ড্রসিং রুম শেয়ারের কথা বলেন?
ইমরান : গেইল তো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমার মনে হয় গেইলের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আমাকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে রাখবে কার্যকর ভূমিকা।
প্রশ্ন : চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম ও কোচ সালাউদ্দীনের কথা কিছু বলবেন?
ইমরান : তাদের কথা বলে শেষ করতে পারবো না। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কোচ সালাউদ্দীন দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছেন আমাকে। উৎসাহ জোগাচ্ছেন।
প্রশ্ন : আপনি পাকিস্তান দলে আবার ফেরার বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
ইমরান : আমি শুধু টি-টোয়েন্টিই খেলেছি। এখনো চার দিনের ক্রিকেট এবং ওয়ানডে খেলা হয়নি। শুনলে অবাক হবেন, আমি এখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলিনি। আমি শুধু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই মনোসংযোগ করছি। কী করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আরো ভালো করা যায়? সে চেষ্টাই করছি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমি বেশিরভাগ সময় শেষ দিকে বোলিংয়ে আসি। ওই সময়টা ব্যাটসম্যানের রান তোলার তাড়া বেশি থাকে। ওই সময়ের বোলিং আমি উপভোগ করি। আর সেটাই আমার ওপরে সিঁড়ি হিসেবে কাজ করছে।
আরআইবি/আইএইচএস/বিএ