কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স
সোমবার রাত ১০টায় শুরু হওেয়া ম্যাচের আয়ুষ্কাল তখন বড়জোর ১১+ মিনিট। ঠিক সেই সময়েই বিপ্লবস্পন্দিত প্রেরণায় জেগে ওঠেছে ফরাসিরা। ১২ মিনিটের ব্যবধানে পর পর ২ গোলের ফ্রান্স চমকে ফের বিস্মিত হয়েছে বিশ্ব ফুটবল অনুরাগীরা। ২-০ গোলের ব্যবধানে পথের কাঁটা নাইজেরিয়ানদের ইস্পাতদৃঢ় বাধা টপকে শেষ আটে নাম লিখিয়ে বিশ্বকাপকে আবারো ফরাসি সৌরভে সুরভিত করেছে।
ইস-আর আফসোসে যখন হতাশা জাগানিয়া গোমট পরিবেশ দেখছিলেন ফ্রান্সের ভক্তরা। ঠিক সেই গোল করে আনন্দ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এক কর্নার কিক থেকে। ৭৯ মিনিটের প্রথম গোলটি এসছে কর্নার থেকেই। আবার ৯১ মিনিটে; তার মানে ইনজুরি টাইমেও দ্বিতীয় গোলটি এসেছে কর্নার থেকেই। স্নায়ু-উত্তেজক ম্যাচের সব নাটকীয়তাই যেন তুলে রেখেছিল বেনজামার ফ্রান্স শেষ অর্ধের শেষলেগ্নের জন্য। অথচ ৭৮ মিনিট পর্যন্ত সুপার ঈগল নাইজেরিয়ার জালে একটিবারে জন্যও বল জড়াতে পারেনি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। দলের পক্ষে কর্নার থেকে দর্শণীয় এক হেডে গোলটি করেছেন পল পগবা দলকে নিয়েছেন (১-০)। আর কফিনে শেষ পেরেকে ঠুকেছেন নাইরেজিয়ার অধিনায়ক জোসেফ ইয়োবো নিজেই। বেনজামাদের আক্রমণ রুখতে গিয়ে নিজেই নিজেদের জালে বল জড়িয়েছেন (২-০)।
এর আগেও নিশ্চিত একটি গোল বারে লেগে ফিরে এসেছিল ফ্রান্সের। বারবার ফ্রান্সের গুছানো আক্রমণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক। যদিও প্রথমার্ধ সমানতালে খেলে গোলশূন্য রেখেছিল সুপার ঈগলরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। গোলের জন্য মরিয়া ফ্রান্স শত চেষ্টায়ও গোলের দেখা পাচ্ছিল না। শেষ মুহূর্তে নাইজেরিয়ার দেওয়ালখ্যাত ভিনসেন্ট এনেইয়ামা ব্যর্থ করে দিয়েছেন একের পর এক দুর্দান্ত আক্রমণ। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।
আসরের হট ফেভারিট হিসেবেই ভাবা হচ্ছে ফরাসিদের। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে ব্রাজিলে এসেছে তারা। সুপার ঈগলদের চ্যালেঞ্জ জয় করেই তারা কোয়ার্টার ফাইনালের ছাড়পত্র তুলে নিয়েছে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক দলের মর্যাদা নিজ দখলে রেখেছে ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। এই ম্যাচেও তার ব্যত্তয় হয়নি। যদিও প্রথমার্ধে একটু অগুছালো মনে হচ্ছিল বেনজামাদের। কারণ গ্রুপপর্বের মতো এই ম্যাচে ফরাসিদের আক্রমণভাগের মূল নেতৃত্ব করিম বেনজামা দিতে পারেননি। তাকে কঠিন বাধায় আটকে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেনজামার কয়েকটি নিখুঁত পাস মনে করিয়ে দিয়েছে কোনো তাকে জিনেদিন জিদানের যোগ্য উত্তরসূরি বলা হয়।
বিশ্বকাপসহ যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে দুই দলের এটি দ্বিতীয় ফুটবলীয় লড়াই। এর আগে ২০০৯ সালের জুনে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দেশ দু’টি। ওই ম্যাচে ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল নাইজেরিয়া। বিশ্বকাপের নাইজেরিয়ার বিপক্ষে স্পষ্ট ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ফরাসিরা হারের মধুর প্রতিশোধও তুলে নিয়েছে।