‘এটাই আমার সেরা ইনিংস’
যে মুখটা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার কথা ছিল, যে চেহারায় ঝিলক দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল খুশির আভা; সেখানে রাজ্যের বিষণ্নতা। হতাশার কালো ছায়া। উদ্ভাসিত চেহারার পরিবর্তে সেখানে পরাজিত সৈনিকের ছাপ। বরিশাল-রাজশাহীর ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা সাব্বির রহমানকে এর চেয়ে বেশি ভালোভাবে বর্ণনা করা যায় না!
পরাজিত সৈনিত সাব্বির। অনবদ্য সেঞ্চুরি। বিপিএলে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের রেকর্ড- কোনটাই তার কাজে লাগেনি। তবুও সংবাদ সম্মেলনে তিনিই সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াল তার অসাধারণ সেঞ্চুরিটি।
সেখানেই বার তিনেক জিজ্ঞাসা করা হলো, এটাই কী আপনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সেরা ইনিংস? কিছুটা হতাশ, চেহারায় বিষন্নতা নিয়ে বসে থাকা সাব্বির রহমান হয়তো কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিতে গিয়ে, কিংবা হতাশা লুকাতে গিয়েই বার বার সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। শুধু জানালেন, দল জিতলে বলতে পারতাম, এটা আমার সেরা ইনিংস। অথচ, এমন ইনিংস খেলেও তো দলকে জেতাতে পারলাম না!
একজন ব্যাটসম্যানের জন্য এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে! যখন কেউ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলে ফেললেন। অথচ, সতীর্থদের কোন সহযোগিতাই পেলেন না এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি তিনি হেরে গেলেন। তখন তার ভেতর যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা, সেটা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। তবে সংবাদ সম্মেলনে ওই সময় সাব্বিরের মনে কী তোলপাড় চলছিল, তা তার চেহারাই যেন বলে দিচ্ছিল সবাইকে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে এসেছিলেন জয়ী দলের ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীস। যিনি নিজেও খেলেছিলেন ৬৩ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। নাফীসের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই মঞ্চে এসে আসন গ্রহণ করে বসেছিলেন সাব্বির রহমান।
তার উপস্থিতিতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস সাব্বিরের ইনিংসটি সম্পর্কে উচ্চসিত প্রশংসা করলেন। বললেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে, এখনও পর্যন্ত আমার দেখা সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস বলতে পারেন এটাকে। আর বাংলাদেশের মাটিতে তো অবশ্যই এটা সেরা ইনিংস।’
বিপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন নাফীস নিজেও। ২০১৩ সালে খুলনার হয়ে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দুরন্তা রাজশাহীর বিপক্ষে এই সেঞ্চুরিটি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলও।
কিন্তু শাহরিয়ার নাফীসের কাছে সাব্বিরের সেঞ্চুরিটি সেরা মনে হওয়ার মূল কারণই হলো, এই ইনিংসের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি। প্রতিপক্ষের বোলারদের কোনরকম সমীহ না করে দারুণ আত্মবিশ্বাসী এক ইনিংস। যেখানে রয়েছে ৯টি ছক্কার মার। নাফীস-আশরাফুলরা এতগুলো ছক্কা মারতে পারেননি।
শাহরিয়ার নাফীসের পর নিজে সংবাদ সম্মেলনে এসে কিন্তু সাব্বির কোনোভাবেই স্বীকার করলেন না- এটা তার সেরা ইনিংস। অস্বীকারও করলেন না। কুটনৈতিক ঢঙ্গে উত্তর দিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা করে গেছেন। তবে, সংবাদ সম্মেলন শেষে ড্রেসিংরূমে যাওয়ার পথে জাগো নিউজকে ব্যাক্তিগতভাবে সাব্বির শুধু এটুকু জানালেন, ‘হ্যাঁ, এটাই এখনও পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। তবে জিততে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো।’
আইএইচএস/এবিএস