নাটকীয় ম্যাচ জেতানোর গল্প শোনালেন মাহমুদউল্লাহ
সবাই তাকে এখন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই চেনে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বড় পরিচয়- এখন পুরোদস্তুও ব্যাটসম্যান। গত বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে এমন এক কীর্তির সৌধে তিনি চেপে বসেন, যা তাকে অনেক বড় ব্যাটসম্যানের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসমান যার আছে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির অসামান্য কৃতিত্ব। যতই বড় ব্যাটসম্যানের তকমা গায়ে লাগুক না কেন, তার আসল পরিচয় কিন্তু অলরাউন্ডার।
যিনি টপ ও মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিন বোলিংটাও ভাল কওে থাকেন। সবার না হোক, এখন হয়ত অনেকেরই ভুল হয়ে গেছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিন্তু টেস্ট অভিষেকে এক ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া বোলারও।
তাও দেশের মাটিতে নয়; ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে ৩ উইকেট পাওয়া মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানে ওয়েস্ট ইি জের ইনিংসর অর্ধেকটার পতন ঘটান।
একদিনের ক্রিকেটে ৪ বা ৫ উইকেট না থাকলেও ৩ উইকেট আছে। ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১.১ ওভারে মাত্র ৪ রানে তিন পাকিস্তানি লেট অর্ডার আব্দুর রহমান, সোহেল তানভির ও ওমর গুলকে আউট করেন মাহমুদউল্লাহ।
সেটাই এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে তার সেরা বোলিং। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেশের পক্ষে তার তিন উইকেট নেই। সেরা বোলিং ৫ রানে ২ উইকেট (আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে)। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে এর আগে একবারই মাত্র তিন উইকেট শিকার করেছেন। সেটা ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার এসএলপিএলে। এক ম্যাচে ৩০ রানে তিন উইকেট দখল করেছিলেন সেবার।
অবশেষে আজ সন্ধ্যায় নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া রিয়াদের। বিপিএলে তো বটেই, টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে কোনো পর্যায়ে নিজের সেরা বোলিংটাও করে ফেললেন তিনি। বুধবার শেরেবাংলায় রাজশাহী কিংসের বিরুদ্ধে ৬ রানে তিন উইকেট শিকারি খুলনা টাইটান্স অধিনায়ক যে নিজ দলের তিন রানের অতিনাটকীয় জয়ের নায়কও!
খেলার শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ যখন বল হাতে নেন, তখন রাজশাহীর দরকার মোটে ৭ রান। হাতে ছিল তিন উইকেট; কিন্তু খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর শেষ ৬ বলে প্রথমে আবুল হাসান রাজু, মোহাম্মদ সামি ও নাজমুল অপু আউট হলে নাটকীয় জয়ের দেখা পায় খুলনা টাইটান্স।
রাজশাহী কিংস ইনিংসের ১০ নম্বর ওভারে প্রথম বোলিংয়ে আসা। সে ওভারে ৪ রান দিয়ে আর বোলিং না করা; কিন্তু ম্যাচের শেষ ওভারে আবার বল হাতে তুলে নেয়া। আসলে তখন তার বোলিংয়ে না আসার ছাড়া উপায়ও ছিল না।
কারণ, দলের দুই স্ট্রাইক বোলার জুনায়েদ খাঁন ও শফিউল ইসলাম তখন চার ওভারের বোলিং কোটা শেষ। তিনিই দলের সবচেয়ে সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, যার কাঁধে অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্বও- তার নিজের কাঁধে সব দায় দায়িত্ব তুলে নিয়ে বোলিংয়ে আসা ছাড়া আসলে উপায়ও ছিল না।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শেষ ওভারে বোলিংয়ের সে চ্যালেঞ্জটাই নিয়ে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে সাফল্যের সঙ্গে উৎরেও গেলেন। খেলা শেষে সেই চ্যালেঞ্জের গল্পই শোনালেন খুলনা ক্যাপ্টেন- ‘শেষ ওভারে যেহেতু অন্য কোন বিকল্প ছিল না, তাই আমার বোলিংয়ে আসতে হয়েছে।’
শেষ ওভারে আপনার নিজের পরিকল্পনা কি ছিল? ‘আমি নিজের ওপর খুব একটা চাপ নিচ্ছিলাম না। তবে শেষ বলটা করার সময় চাপে ছিলাম। আমি শুধু ভাবছিলাম যে, যদি ভালো হায়গায় বল ফেলতে পারি আর ভাগ্যের সহায়তা পাই, তাহলে হয়তো ম্যাচ জিততেও পারি। ছয় বলে সাত রান রাজশাহীর জন্য খুবই সহজ লক্ষ্য ছিল। এরকম একটা ম্যাচ জিততে পেরে বেশ ভালো লাগছে।’
মাহমুদউল্লাহর অনুভব, খেলা রাজশাহীর হাতেই ছিল। হিসেব নিকেশও খুব সহজ ছিল, ‘আমার মনে হয়, ওদের জন্যই গেমটা সহজ ছিল। ওরা যদি ওদের পরিকল্পনাগুলো ভালোভাবে বাস্তব রূপ দিতে পারতো তাহলে ফল অন্যরকম হতেও পারতো।’
আবুল হাসান রাজু আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে খুলনা টাইটান্স অধিনায়কের মাথায় জয়ের চিন্তা আসে। তাই তো মুখে এ কথা, ‘রাজুর উইকেটটা আমাকে একটা মোমেন্টাম দিয়েছে। তখনই আমি ভাবা শুর করি যে, ম্যাচ আমাদের দিকেও আসতে পারে।’
মাহমুদউল্লাহ মানছেন শেষ বলের আগে ভিতরে একটু চাপ ছিল। সে চাপ ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে যাবার ভয়। শঙ্কা। তার পরিকল্পনা ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে বল করা। ‘আমি জানি, নাজমুল অপু স্লগ সুইপ খেলায় দক্ষ। তাই আমি ওই জায়গায় বল ফেলতে চাচ্ছিলাম না। শেষের আগের বলটায় তাই আমি একটু থেমেছিলাম, দেখতে চেয়েছিলাম সে কি করে? দেখি যে, সে আসলে রিভার্স সুইপই করতে গিয়েছে। তারপর আমি আমার পরিকল্পনাই ঠিক রেখেছি, ভেবেছি অফস্ট্যাম্পের বাইরে বল করবো। এক্সট্রা কভার ফিল্ডারটাও বের করে রেখেছিলাম। অপু মিস করেছে, আমরা ম্যাচটা জিতে গেছি।’
এআরবি/আইএইচএস/এবিএস