ডিএফএ বিলুপ্তির কথা ভাবছে বাফুফে
ফুটবল উন্নয়নে আঞ্চলিক সংস্থা থাকতে হবে- ফিফার এ গাইডলাইন অনুযায়ী জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) গঠন করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আগপাছ না ভেবে ফিফার চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে পুরোপুরি ফেঁসে গেছে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি।
ফুটবল ধ্বংসের জন্য এখন ডিএফএ গঠনকেই দায়ী করা হচ্ছে। যদিও ডিএফএকে সক্রিয় করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ বাফুফের কখনও ছিল না। এমনকি জেলার যেসব টুর্নামেন্ট করার দায়িত্ব ছিল বাফুফের, তাও হয়নি। এখন বছর দশেক পর নিজেদের জন্ম দেয়া সন্তানের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে বাফুফে।
প্রাণ থাকলে ডিএফএ হয়তো বলতো ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। ১০ বছরেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি ডিএফএ। জন্ম দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে বাফুফে। বছরের পর বছর অপুষ্টিতে ভোগা ডিএফএকে এখন গলা টিপে হত্যাই করতে চাইছে বাফুফে।
ডিএফএ দিয়ে ফুটবল উন্নয়ন হচ্ছে না- গত নির্বাচনের আগে এ কথাগুলো ফিফার কানে দিয়েছিল বাফুফে। সহসভাপতি বাদল রায়, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল জুরিখে ফিফা সদর দফতরে গিয়ে ডিএফএ গঠন করায় ফুটবলের কি ক্ষতি হচ্ছে তা উপস্থাপন করে এসেছিলেন।
তবে নির্বাচন সামনে ছিল বলে ফিফা তখন এ বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা করেনি। ‘তখন ফিফা বলেছিল, যেহেতু নির্বাচন সামনে তাই এখন ডিএফএ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো দেখাবে না। নির্বাচনের পর এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে’- জাগো নিউজকে বলেছেন বাফুফের সহসভাপতি বাদল রায়।
তবে নির্বাচনের পর ৬ মাস কেটে গেলেও ডিএফএ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি ফিফার সাথে। বাদল রায় বলেছেন, ‘আমরা কোনো ফলোআপ করতে পারিনি। নতুন সভাপতি আসার পর ফিফার নীতিতে অনেক কিছুই পরিবর্তন এসেছে। তখন যেহেতু আমাদের প্রস্তাব ফিফা উড়িয়ে দেয়নি, শুনতে চেয়েছে। আলোচনা করতে চেয়েছে। তাই ফলোআপ করলে একটা সমাধান বেরিয়ে আসতো।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ডিএফএ গঠন ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ফিফার চাপিয়ে দেয়া ওই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই আমাদের বাস্তবায়ন করা উচিত হয়নি। ফিফাকে বোঝানো উচিত ছিল। তখনকার অদূরদর্শীতার খেসারত এখন দিচ্ছে ফুটবল। গত ৮/১০ বছরের দেশের ফুটবলের অবস্থা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় ডিএফএ গঠন করাতেই ফুটবল ধ্বংস হয়েছে’- যোগ করেছেন বাদল রায়।
সাবেক এ ফুটবলারের বিশ্লেষণ, এ পদ্ধতিতে ফুটবল চলবে না। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলে সমাধান কি? ডিএফএ কি বিলুপ্ত করতে যাচ্ছেন?
‘বিলুপ্তি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বাস্তবতা উপলব্ধির চেষ্টা করছি। ফুটবলের জন্য আলাদা সংস্থা ভালো। তবে বাংলাদেশের জন্য এ পদ্ধতি কার্যকর নয়। সব জেলার মাঠ ডিএসএর অধীনে। ফুটবল উন্নয়নে ৭/৮ মাস খেলা থাকা প্রয়োজন। তাই মাঠ দরকার। আগে ডিএসএ যখন সব খেলা চালাতো তখন ফুটবলের কোনো সমস্যা হয়নি। ডিএফএ গঠনের পর সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমাদের কিছু বিকল্প পদ্ধতিও আছে। যেটা ভালো হয় সেটাই করা হবে। সব কিছু শুনে ফিফা যদি বলে আগের অবস্থায় ফিরে যাও, আমরা তাই করবো’- জবাব বাদল রায়ের।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস ডিএফএ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা কখনই ডিএফএ গঠনের পক্ষে ছিলাম না। এখন সমস্যা তৈরি হচ্ছে জানি। বাফুফে যদি তাদের জন্ম দেয়া সন্তানের লালন-পালন করতে পারে তাহলে ভালো। আর আমাদের কোনো পরামর্শ চাইলে তখন আলোচনা করতে পারি। আমরা আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা সব সময় সমন্বয়ের কথা বলেছি। এই যেমন, যেসব ডিএফএর সভাপতি হয়েছেন ডিএসএর সাধারণ সম্পাদক সে সব জেলায় ফুটবল কার্যক্রম ভালো হয়েছে।’
বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালের পরিস্কার কথা ‘ডিএফএ বিলুপ্তির বিকল্প নেই। জুরিখ থেকে আসার পর আমি বেশ কয়েকবার ফিফার সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছি; কিন্তু কোনো আলোচনা হয়নি। এখন যদি আমরা ওই আলোচনার ফলোআপ করি, তাহলে ফিফা প্রতিনিধি পাঠিয়ে ডিএএফ গঠনের পর তৈরী সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখবে। ফুটবল উন্নয়নে যে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়, ফিফা সেটাই নেবে।’
আরআই/আইএইচএস/আরআইপি