‘টেস্টে ৩০০ উইকেট পেলে সবাই অন্যভাবে মূল্যায়ন করতো’
২০০১ সালের ৮ নভেম্বর দেশের ক্রীড়া কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক হয়েছিল চিত্রা নদীর পাড়ের সদ্য কৈশোর পার করা মাশরাফি বিন মর্তুজা ‘কৌশিকের’। সময়ের প্রবাহে আজ তিনি ৩৩ বছরের যুবা। দেখতে দেখতে কেটে গেল সময়। সেদিনের ১৮ বছরের সাহসী আর উচ্ছ্বল তরুণ কৌশিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাড় করে দিলেন অনেকটা সময়। এক যুগ পেরিয়ে দেড় যুগের পথে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
১৫ বছর আগে ঠিক আজকের দিনে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ দিয়েই হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। ক্যারিয়ার নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবার বয়স হওয়ার আগেই অভিষেক। টেস্ট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার কী হবে? কেমন হবে? কোথায়, কবে, কোন জায়গায় গিয়ে থামবেন, শুরুর দিকে ওসব মাথায়ই ছিল না।
কী করে থাকবে? অভিষেকের সময় বয়স যে খুবই কম, মাত্র ১৮। ওই কচি বয়সে চিন্তা-ভাবনা অতদূর বিস্তৃত হওয়ার কথাও নয়। তারপরও মানুষ নাকি স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়। স্বপ্ন-সাধ ও ই্চ্ছাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় পথচলা। শুরুর দিকে ক্যারিয়ার নিয়ে সাত-পাঁচ না ভাবলেও এক সময় মাশরাফি লক্ষ্য স্থির করে ফেলেন টেস্টে ৩০০ উইকেট শিকারের। আর টেস্টে ৩০০ উইকেট পাওয়া বোলারকে সবাই অন্যভাবে মূল্যায়ন করে। একটা বাড়তি কদর ও অন্যরকম সমীহ দেখায়।
মাশরাফি সেই লক্ষ্যই করেছিলেন স্থির। কিন্তু হায়! মানুষ ভাবে এক। আর হয় আরেক। শুরুতে তেমন সমস্যা না হলেও কয়েক বছর না যেতেই ইনজুরি এসে গ্রাস করল। গোড়ালি আর হাঁটুর ইনজুরি ক্যারিয়ারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। যে সময় নিজেকে পরিণত করার চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসে, বুদ্ধি ও মেধা হয় পরিপক্ব। সামর্থ্যের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ে, ঠিক সেই সময় বোলিংয়ে উন্নতি ঘটানোর চিন্তা এবং চেষ্টার বদলে মাশরাফিকে ইনজুরির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়।
শুরু হয় অন্যরকম সংগ্রাম। ইনজুরি আর ছোট-বড় মিলিয়ে আট-দশটি অপারেশনের ধকল। কিন্তু তাও তাকে দমাতে পারেনি। সেই কৈশোরে যেমন চিত্রা নদীর ঢেউ আর প্রবল স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে সাঁতরে এপাড় থেকে ওপাড়ে গেছেন, একইভাবে ইনজুরিকে জয় করে মাশরাফি ঠিক টিকে আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
শুধু আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ধরে রাখাই নয়। ইনজুরিকে জয় করে আর অপারেশনের ধকল সামলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর পার করেও দিলেন। তার সমসাময়িক কেউ ১৫ বছর দূরে থাক ধারে-কাছেও আসতে পারেননি। দিনক্ষণের হিসাবে মাশরাফির ১৫ বছরের কাছাকাছি আছেন শুধু তিনজন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার তিন স্বপ্ন-সারথী আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। মাশরাফি তাদেরও ছাড়িয়ে গেছেন।
তার পূর্বসূরি আকরাম খান (১৪ বছর ১৮৭ দিন), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (১৪ বছর ৪৪ দিন) ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ( ১৩ বছর ৬১ দিন ) ক্যারিয়ার এত দীর্ঘ হয়নি। তাদের সবাইকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ করা। আজই সে শুভদিন। কেমন কাটল এ ঘটনাবহুল ও ইনজুরি আর অপারেশরে সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রামী ১৫ বছর? ক্যারিয়ারের প্রথম দিনগুলো কেমন ছিল?
কী ভেবে শুরু? আর এখন কোথায় দাঁড়িয়ে, শেষ করতে চান কোথায় -এসব নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন ১৫ বছর আগের কৌশিক আর আজকের মাশরাফি। আসুন তার মুখ থেকেই শোনা যাক সেসব কথাবার্তা।
মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৫ বছর উপলক্ষে সাক্ষাৎকার :
প্রশ্ন : কখন, কার কাছ থেকে জানলেন আপনার টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে, আপনি টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন?
মাশরাফি : পুরোপুরি মনে করতে পারছি না। তবে যতদূর মনে পড়ে, সম্ভবত টেস্ট শুরুর দু’দিন আগে, অনুশীলনের সময় জেনেছিলাম। তাও নিশ্চিত কিছু নয়। একটা ইঙ্গিত বা আভাস মিলেছিল। কারণ আমার তখন সাইড স্ট্রেইনে (পাজরের নিচে) ব্যথা ছিল। সে সময়ের কোচ ট্রেভর চ্যাপেল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে বললেন, যদি তুুমি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকো, তাহলে টেস্ট খেলবা।
প্রশ্ন : ঠিক ক’দিন আগে জেনেছিলেন?
মাশরাফি : ঠিক কবে মনে নেই। মনে হয় দু-একদিন আগে।
প্রশ্ন : টেস্ট ক্যাপ পড়ার স্মৃতি?
মাশরাফি : শুধু এটুকু মনে আছে, তখনকার প্রধান নির্বাচক মাইনু ভাই মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : ইনজুরি আপনার ক্যারিয়ারের সোনালি সময় কেড়ে নিয়েছে। নিজেকে যেখানে দেখতে চেয়েছিলেন তা কি পেরেছেন? অপ্রাপ্তি কিংবা না পাওয়ার হতাশা?
মাশরাফি : নাহ , না ........... হতাশ বা ...... হতাশা ....... নেই। হতাশ মানুষের জীবনে কিছু হয় না। আমি একেবারেই হতাশ না। যদি ইনজুুরির না থাকতো, অনেক কিছুই হতে পারতো। হয়তোবা আমি এখন অন্য রকম হতে পারতাম, ৭০/৮০ টেস্ট খেলতে পারতাম। বাংলাতেশ অন্য জায়গায় থাকতে পারতো। আমিও অন্য মাত্রায় থাকতে পারতাম। সেটা অলাদা ব্যাপার। এরপরও আমার শরীরের ওপর দিয়ে যে ধকল গেছে, তা চিন্তা করলে হতাশার বদলে বরং একটা অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতিই জাগে। আমি বরং আনন্দ পাই। ঠিক আছে অনেক সমস্যার ভেতর খেলেছি। সেটা অন্যরকম ভালো লাগার।
প্রশ্ন : আপনার ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন? এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমা কেমন ছিল?
মাশরাফি : অনেক সিনিয়র প্লেয়ার ছিল। কয়েকটি জেনারেশনের সঙ্গে খেলতে পেরেছি। সবার সঙ্গে খেলাই উপভোগ করেছি। মূল কথা হলো খেলা উপভোগ করা। খেলার প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা দরকার ছিল। আমি তা করেছি। আমি খুব সৌভাগ্যবান, যখন যাদের সঙ্গে খেলেছি, তারাই আমাকে খুব ভালোবেসেছে। টিমের সতীর্থদের আন্তরিক ভালোবাসা খুব পেয়েছি। সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতো। বোর্ড কর্মকর্তা, দর্শক, সমর্থক, ভক্ত -সবার দোয়া ছিল। আপনারা (মিডিয়াও) সাহায্য করেছেন। আসলে ১৫ বছর খেলার পেছনে সবারই অবদান আছে। যতটুকু আমার আছে।
প্রশ্ন : প্রথম ম্যাচের দুটি স্মরণীয় ঘটনা?
মাশরাফি : স্মরণীয় ঘটনা তেমন নেই। এমন নয়, কিছু মনে নেই। সবই মনে আছে। তবে সে অর্থে দাগ কাটার মতো কিছু নেই। কেন জানেন? আসলে আমি তখন টেস্ট ক্রিকেট খেলা নিয়ে অত কিছু ভাবতাম না। সদ্য কৈশোর পার করা এক উচ্ছ্বল তরুণ। বলতে পারেন হোম সিক। খেলার মাঠ টানতো যথেষ্টই। কিন্তু তার কোনো ঘটনা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতাম না। ক্রিকেট খেলতে হবে। অনেক দিন খেলবো, এমন দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল না। ক্রিকেট খেলতে হবে, খেলবো এমন চিন্তাও মাথায় আসতো না। নড়াইলে নিজ বাড়ি ও আপনজনের কথা মনে হতো। খালি মনে হতো কখন বাড়ি যাবো। তবে গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের উইকেটের কথা মনে আছে। এর চেয়ে বেশি কিছু না। আলাদা করে বলতে গেলে বলতে হয় তখন ওসব বুঝতাম না।
প্রশ্ন : আপনি অনেকবারই বলেছেন, যা হয়নি তা নিয়ে ভাববেন না। কোনো হতাশা আপনার নেই। তারপরও কি একবারও মনে হয় না, ইশ আমি যদি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় এ ১৫ বছর পার করতে পারতাম। তাহলে এই হতো?
মাশরাফি : ৩০০ উইকেট পাওয়া। যেটা ছিল আমার স্বপ্ন। ৩০০ উইকেট হলে বাংলাদেশের একজনকে বিশ্ব ক্রিকেট অন্যভাবে মনে রাখতো। তারপরও যা হয়নি, তা হয়নি। তা নিয়ে পরে থাকলে লাভ নেই। যেটা হয়নি আমি তা নিয়ে ভাবার মানুষ না। এর চেয়ে আনন্দ পাই সমস্যার ভেতরে ক্রিকেট খেলতে পেরে। মানুষের জীবনে কত কিছুই না ঘটে। কত আপসেট থাকে। মানুষের জীবনে কত কিছুই তো ঘটে যায়। কত মানুষ মারা গেছে। কত আপনজন পৃথিবী থেকে চলে যায়। তাদেরই মানুষ মনে রাখতে পারে না। আর এটা তো খেলা, অনেক পরের বিষয়।
প্রশ্ন : আপনিই বলেছেন, এক সময় ক্রিকেট নিয়ে অত কিছু ভাবতেন না। সেই মাশরাফি আজ বিরাট বড় নেতা। দক্ষ অধিনায়ক। এ নেতৃত্ব গুণ কীভাবে জন্মালো? কখন মনে হলো আমি নেতা হতে পারবো। অধিনায়ক হওয়ার চিন্তা-ভাবনা কবে থেকে?
মাশরাফি : আমি নিজেও জানি না- কবে, কখন ও কীভাবে হলো। সবচেয়ে বড় কথা, আমি এখনো জানি না, সত্যিই আমার মধ্যে নেতৃত্বগুণ আছে কিনা। এটা নিয়ে সেভাবে কখনো ভাবিইনি। মাঠে নামি, অধিনায়কের যা যা দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে, তা পালনের চেষ্টা করি। সময় বুঝে মনে হয়, এটা করা দরকার, তাই করি। এর বেশি কিছু আসলে ভাবি না।
প্রশ্ন : কিন্তু সবাই তো আপনার নেতৃত্বে মুগ্ধ। আপনার অধিনায়কত্ব সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেটা কীভাবে হলো?
মাশরাফি : দক্ষতা-প্রশংসা আমাকে সেভাবে নাড়া দেয় না। আমি দক্ষতা ও প্রশংসা নিয়ে সেভাবে চিন্তাও করি না। আমি সবসময় চেয়েছি, এখনো চাই, খেলাটাকে মন দিয়ে ভালোবাসতে। দারুণভাবে উপভোগ করতে। আর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে, দেশের হয়ে খেলা। যে জায়গা থেকেই বলেন, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাই একটা অন্যরকম অনুপ্রেরণা। সর্বোপরি খেলাটাকে কতটা ভালোবাসেন, খেলাটা কত উপভোগ করেন, সেগুলোই বড়। আমি চেষ্টা করেছি, খেলাটাকে উপভোগ করতে। জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে। তিলে তিলে নিজে তৈরি করার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ইনজুুরি ও সমস্যা থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার তো অনেক সময় বড় বড় সমস্যা হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করেছি। ইনজুরি না থাকলে প্রতিটি প্র্যাকটিস সেশন আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আর অধিনায়ক হিসেবে শ্রদ্ধা বা প্রশংসার কথা যদি বলেন, তাহলে বলবো আসলে এগুলো অর্জন করতে হয়।
সম্মান ও শ্রদ্ধা আসলে পাওয়া যায় না। আপনি শ্রদ্ধা পেতে চাইলে পাবেন না। আপনাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। শ্রদ্ধা করার মানসিকতা থাকলেই শ্রদ্ধা মেলে। অন্যভাবে বললে শ্রদ্ধা করলে শ্রদ্ধা পাবেন। মানুষ হিসেবে আমি সবাইকে সম্মান করি বা করার চেষ্টা করি। আমার অধিনায়ক যারা আকরাম ভাই, দুর্জয় ভাই, সুজন ভাই এমনকি যাদের সঙ্গে খেলিনি, সেই পূর্বসূরি যারা রকিবুল ভাই, লিপু ভাই তাদের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। একইভাবে আমার চেয়ে বয়সে ছোট সাকিব, তামিম ও মুশফিক -সবার প্রতি আমার সমান সম্মান আছে। এমনকি সবে দুই টেস্ট খেলা মিরাজের প্রতিও আমার অন্যরকম একটা শ্রদ্ধাবোধ আছে। মোটকথা, যিনি বা যে দেশের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছেন, তার প্রতিও আমার অন্যরকম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান।
প্রশ্ন : আপনার এ দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রিয় অধিনায়ক কে?
মাশরাফি : একজনার কথা বলতে পারবো না। পর্যায়ক্রমে বলি, প্রথমেই বলবো দুর্জয় ভাইয়ের ( নাইমুর রহমান ) কথা। দুর্জয় ভাই আমার প্রথম অধিনায়ক। তাকে অন্যভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তারপর এসে যায় সুজন ভাইয়ের ( খালেদ মাহমুদ ) কথা। তার একটি বিষয় আমার মনে দাগ কেটে আছে। যিনি সিনিয়র এবং জুনিয়রের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছিলেন। দলের ভেতরে সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংহতি গড়তে বড় ও ছোটর মধ্যে একাত্মতা খুবই জরুরি। সেই সবার এক হয়ে যাওয়া সংস্কৃতিটা প্রথম আনেন সুজন ভাই।
হাবিবুল বাশার সুমন ভাই মানুষ হিসেবে খুব ভালো। গুড কাপ্টেন। নেতৃত্ব ক্ষমতাও ছিল দারুণ। সবার দেখভালের দায়িত্বটাও ভালো করতেন। মুশফিক হার্ড ওয়ার্কিং গাই। প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। কঠোর ও নিবিড় পরিশ্রম আর দারুণ অধ্যবসায়ী মুশফিক আমাদের আদর্শও ছিল। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবও ভালো। বিশেষ করে ‘অন দ্যা ফিল্ড’ গুড ক্যাপ্টেন।
প্রশ্ন : এ দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে অনেকের সঙ্গেই খেলেছেন। কাকে ওই বহরের মধ্যে দেশের দেখা সেরা ব্যাটসম্যান মনে হয়েছে? ঘুরিয়ে বললে আপনার দেখা ও একসঙ্গে খেলা সেরা ব্যাটসম্যান কে?
মাশরাফি : আশরাফুল।
প্রশ্ন : আর বোলার?
মাশরাফি : আব্দুর রাজ্জাক।
প্রশ্ন : আর নিজেকে কোথায় রাখবেন?
মাশরাফি : হ্যাঁ, হ্যাঁ .. চার-পাঁচে।
প্রশ্ন : আর কত দিন খেলতে চান?
মাশরাফি : সিদ্ধান্ত নেইনি। যেটাই হবে হুট করে হয়ে যাবে হয়তো। আমার কাছে তাই মনে হয়। টার্গেট বলতে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত খেলতে চাই। তারপরও ফর্ম ফিটনেসের বিষয় তো থাকবেই। আরও বেশি থাকার ইচ্ছে থাকে। আমারও আছে। আমার ক্ষেত্রে ওটা হবে না হয়তো। আমার সবকিছুই তো হুট করে হয়ে গেছে। এটাও হয়তো হঠাৎই ঘটবে।
প্রশ্ন : ১৫ বছর আগের মতো আজও ক্রিকেট মাঠে খেলার আমেজই থাকছে। এটা কি কাকতালীয়? যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না...
মাশরাফি : এটা মানুষের জীবনে ঘুরে-ফিরে আসে। ঘটনাই মিলে যায়। একই দিনে আমার আর আমার ছেলের জন্ম। ওকরমভাবে আলাদা করে কিছু কাজ করে না। সেদিনও খেলা ছিল। আজও আছে। এটা শুধুই একটা খেলা। কারো জন্মদিনেও খেলা থাকে। সেটাকে হাইপ তুলে আজ ১০০ করতে হবে। এমন কিছু ভাবি না। আমার এসব এমনিতেই কম। আমার খালি মনে হয় খেলা আছে, খেলতে হবে আর ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন : ১৫ বছরেরর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আন্দন্দের দিন...
মাশরাফি : প্রথম আনন্দের দিন বলতে গেলে বলবো, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে হারানো। সেদিনের স্মৃতি সত্যিই অন্যরকম। এরপরই চলে আসবে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জেতার দিনটির কথা। এছাড়া ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানোর ঘটনাও মনে দাগ কেটে আছে। ওই জয়েই আমরা পৌঁছে যাই কোয়ার্টার ফাইনালে। তারপরও এই যে এবার ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারানো। যদিও এই ম্যাচে আমি খেলিনি। এটা অনেক ভালো লাগার। অনেক আনন্দের, স্মরণীয়ও।
প্রশ্ন : আর খারাপ দিন, ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়ার দিন? নাহ মাঞ্জারুল রানা মারা যাওয়ার দিন।
মাশরাফি : বন্ধুর মৃত্যুর চেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনা ও দুঃখের আর কী হতে পারে? আমি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাইনি, তার সঙ্গে কী প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর তুলনা চলে। বন্ধুর অকালে চলে যাওয়া অনেক দুঃখের, কষ্টের ও বেদনার।
এআরবি/এমআর/পিআর