‘পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দুর্বল নাসির, তাই...’
‘আচ্ছা ভাই বলতে পারেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি সফর ও নিউজিল্যান্ডে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে নাসির নেই কেন?
একজন অলরাউন্ডার যার টেস্ট গড় ৩৭.৩৪ করে। আর ওয়ানডে গড় ৩২.৩৫। অভিজ্ঞতাও কম নয়। জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ৫ বছর আগেই। নিজের মেধা প্রজ্ঞার প্রমাণ সে আগেই দিয়ে রেখেছে। তাকে বাইরে রাখার কারণ কী? তার বদলে যাকে নেয়া হয়েছে সেই শুভাগত হোম কী নাসিরের চেয়ে ভালো?’
কাল রাতে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য দল ঘোষণার পর থেকে ক্রিকেট অনুরাগীদের কৌতূহলি প্রশ্নমালা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়েব দুনিয়ায় ক্রিকেট অনুরাগীদের রাজ্যের ক্ষোভ। সমালোচনার ঝড়। টিভি-পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকা অফিসগুলোয় অনুরাগি-ভক্তদের ফোনের পর ফোন। রাজ্যের প্রশ্ন।
নাসিরকে নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ ইতিহাস আর পরিসংখ্যান জানাচ্ছে নাসিরের সামর্থ্য প্রমাণিত। একজন অলরাউন্ডার হলেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের তুলনায় অবশ্যই পিছিয়ে তিনি।
পারফরম্যান্সকে মানদণ্ড ধরলে এখন নাসিরের চেয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও এগিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে একদিনের সীমিত ওভারের পাশাপাশি দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটেও মোসাদ্দেকের পারফরম্যান্স নাসিরের তুলনায় নজরকাড়া। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সও মোসাদ্দেকেরই বেশি।
আর একই ক্যাটাগরির (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার) তৃতীয় পারফরমার হিসেবে দলে ঢুকলেও ইংল্যান্ডের সাথে দুর্দান্ত বল করা মেহেদী হাসান মিরাজও বনে গেছেন অটোমেটিক চয়েজ। কাজেই ওই তিনজনের কারো জায়গায় নাসিরের ঢোকার কোনো সুযোগ নেই।
তা না হয় মানা গেল; কিন্তু শুভাগত হোমের বদলে কি তাকে নেয়া যায় না? নাসির কি শুভগত হোমের চেয়েও খারাপ? এটা সত্যি, দু-এক বছর আগে নাসির যেমন মাঠে নামলেই কিছু একটা করে ফেলতেন, নিকট অতীত কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে তা চোখে পড়েনি। এখন ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- এই তিন ডিপার্টমেন্টেই তাকে কিছুটা নিস্পৃহ মনে হয়।
কিন্তু সেটাও নিশ্চয়ই শুভাগত হোমের চেয়ে পিছিয়ে নেই। শুভাগত হোম তো ইংল্যান্ডের সঙ্গে শেষ টেস্টেও খেলেছেন। কি করেছেন? নাসির কী এর চেয়ে খারাপ খেলতেন? এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সাথে আলাপে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর পাল্টা প্রশ্ন- ‘আরে নাসির কার জায়গায় খেলবে?’
প্রধান নির্বাচক মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান সম্পর্কে কোন কথা না বলে সাব্বির রহমান রুম্মন, সৌম্য সরকারও মোসাদ্দেক সৈকতের সাথে নাসিরের তুলনায় গিয়ে বলেন, সাব্বিরের ফাস্ট বোলিং খেলার ক্ষমতা অনেক বেশি। সৌম্য সরকারের সাত নম্বরে খেলার দক্ষতাও অনেক বেশি। মোসাদ্দেক সৈকত শেষ ঘরোয়া আসরগুলোয় ভাল খেলে পরীক্ষিত পারফরমার।’
মিনহাজুলের দাবি, ‘আমরা সবাই জানি যে, নাসিরের ফাস্ট বোলিংয়ে একটু দুর্বলতা আছে। আর তার অভিজ্ঞতার ধুয়ো তুলে লাভ কী? গত এক বছরে, নাসিরের পারফরম্যান্সটা দেখেন, কি করেছে? এক বছরে কয়টা ম্যাচ নিয়মিত খেলছে? কয়টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে? আপনি অভিজ্ঞতার কথা যে বলবেন, একটা ছেলেকে তো খেলতে হবে নিয়মিত। কয়টা ম্যাচ খেলছে, কয়টা ম্যাচে পারফরম্যান্স করেছে। নাম দিয়ে তো অভিজ্ঞতা হয় না। খেলতে হবে। আর নাসিরের পেস বোলিংয়ে দুর্বলতা আছে, তা জানি। এ জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার চিন্তা করছি না। তার বিষয়টা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই স্থির হয়েছে।’
শুভাগত হোমকে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিনহাজুল জানান, শেষ টেস্টের পারফরম্যান্সের বিবেচনায় শুভাগত হোমকে রাখা হয়েছে। তার ব্যাখ্যা, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টের পারফরম্যান্স দেখুন, দেখবেন শুভাগত হোমকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতেই হবে। কারণ ইংলিশদের সাথে শেষ টেস্টে সে কার্যকর অবদান রেখেছে। ব্যাট হাতে কিছু রান করে দিয়েছে। আবার কিছু ভাল ক্যাচও নিয়েছে।’
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে শেরেবাংলায় শেষ টেস্টে দুই ইনিংসে শুভাগত হোম করেছেন মোটে (৬+২৫)। আর দুই ইনিংসে (৪-০-৮-০, ৬-০-২৫-০) ১০ ওভার বল করে একটি উইকেটও পাননি। হ্যাঁ এটা সত্যি, ক্লোজ ইনে ফিল্ডিং করে দুটি কঠিন ক্যাচ ধরেছেন সাফল্যের সঙ্গে।
তাতেই কি প্রমাণ হয়, নাসিরের চেয়ে শুভাগত হোম বেটার?
এআরবি/আইএইচএস/এবিএস