শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাড়িতে না আসার অনুরোধ মিরাজের বাবার
আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আঙুল উঁচিয়ে ধরতেই ছুটলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্টিভেন ফিনের রিভিউ নেওয়ার ইশারায় ক্ষণিকের জন্য থমকে যাওয়া। হঠাৎই সবার মনে পড়ল, ইংল্যান্ডের তো রিভিউ নেই। ব্যাটসম্যানের আশপাশেই ছিলেন বেশিরভাগ ফিল্ডার। ছুটে এলেন বাকিরাও। চোখের পলকে স্টাম্পগুলো উঠে এলো হাতে হাতে। উল্লাস বাঁধনহারা।
এ জয় ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের জন্য গৌরবের আর আনন্দের। ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত এনে দেয় এই জয়। শক্তিশালী ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সবচেয়ে আদি দল। সবচেয়ে অভিজাত ইতিহাসের দলও তারা। সেই ইংল্যান্ডকে আজ টেস্টে হারাল বাংলাদেশ।
রকেট সিরিজের দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ হয়েছেন খুলনার ছেলে মেহেদী হাসান মিরাজ, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড। খুলনার কৃতী সন্তান মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরেই ক্রিকেটে বাংলাদেশ এই নতুন ইতিহাস গড়ে।
মিরাজের এই সাফল্যে সারাদেশের সঙ্গে আনন্দে ভাসছে খুলনাবাসীও। টেস্ট শেষ হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটপ্রেমী খুলনাবাসী ভিড় জমিয়েছেন নগরীর খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকায় মিরাজের বাড়ির সামনে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মিষ্টির ছড়াছড়ি। আগের দিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মিরাজের বাড়ির উঠানে এখন কাদায় ভরা। ফলে শুভেচ্ছা জানাতে আসা শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাড়িতে না আসার অনুরোধ জানান মিরাজের বাবা।
সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মিরাজের বাবা মো. জামালের কথা হয়। শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাড়িতে না আসার অনুরোধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো উঠান কাদায় মাখামাখি। অনেক মানুষ আসছে। কোনো সমস্যা যাতে না হয়। সেজন্য সবাইকে বাড়িতে না আসার অনুরোধ করছি।
একমাত্র ছেলের বিশাল এই সাফল্যে তিনি এতোটাই আবেগাপ্লুত যে কী করবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। শুধু এটুকু বলেছেন, ছেলের সাফল্যে দেশবাসী যেমন খুশি তেমন আমিও খুশি। তবে অনেক খুশি। আমার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। মিরাজ আরো এগিয়ে যাবে এই দোয়া করি।
পাশাপাশি এই সাফল্য যেন ধারাবাহিক হয় সেজন্য তিনি দেশবাসীর কাছে ছেলের সাফল্যও কামনা করেন। সোমবার মিরাজ খুলনায় আসবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মিরাজের এক সময়কার কোচ মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা গর্বিত মিরাজকে নিয়ে। এক সময় মিরাজকে ভাড়ায় খেলতে নিয়ে যেতেন। আজকের সাফল্যের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজ মিরাজ চলে গেছে অনন্য উচ্চতায়। আল্লাহ তাকে আরো বড় খেলোয়াড়ে পরিণত করুন এটাই আশা করি।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরাজের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যান খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম। তিনি মিরাজের বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। মিষ্টি তুলে দেন তার মুখে। তার অনেক আগে থেকেই সেখানে চলতে থাকে মিষ্টি বিতরণ। উপস্থিত সবাই মিরাজের শুভকামনা করেন।
আলমগীর হান্নান/এএম/এবিএস