ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

সেঞ্চুরির পরও তামিমের আক্ষেপ!

প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

শুধু পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, এই তিন ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। টেস্টের পাশপাশি ওয়ানডে ( ৫০০৭ রান)  আর টি-টোয়েন্টি (১১৫৪ রান) ফরম্যাটেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান তামিম ইকবালের।

এর মধ্যে টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বরাবরই তার রেকর্ড ভাল। আনুপাতিক হারে ইংলিশদের বিপক্ষেই তামিমের ব্যাট বেশি উজ্জ্বল। টেস্টে তার গড় ৪০.৩৫ হলেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গড় তার চেয়ে অনেক বেশি, ৬৩.২৭।

ঢাকা টেস্টের আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫ ম্যাচে ১০ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি পাঁচ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫৯২ রান ছিল তার; কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিলে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির (২০৬) পর কেন যেন আর সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না তিনি।

মাঝ খানে পাঁচ টেস্টে কোন টেস্ট সেঞ্চুরি নেই। সর্বাধিক ৭৮ ছিল চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে। তার পরের ইনিংসগুলো ছিল এরকম- ৪+৪২+১৯+১৬*+৫৭+৬+৭৮+৯।

নিজ শহর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে শতরানের সুবর্ণ সুযোগ ছিল। নিজে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলে সে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন দেশ সেরা ওপেনার; কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ২২ রানের আক্ষেপ থেকেই যায়। চট্টগ্রামে শতরানের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার পর বলেছিলেন, এমন সুযোগ যেন আর হাতছাড়া না হয়- আগামীতে সে চেষ্টাই থাকবে।

আজ শেরেবাংলায় প্রমাণ হলো সেটা শুধুই কথার কথা ছিল না। তামিম মন থেকেই চেয়েছেন, আরেকবার সুযোগ পেলেই শতরান করে ফেলবো। ঢাকা টেস্টেই ইচ্ছে পূরণ হলো। আজ শেরেবাংলায় সত্যিই শতরান করে ফেললেন তিনি।

তার এই সেঞ্চুরি নিয়ে যতটা হইচই হবার কথা, দিন শেষে তা হলো না। হবে কি করে? তামিমমের সেঞ্চুরি আর তামিম-মমিনুল হকের দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রানের বিরাট জুটির পরও যে বাংলাদেশ ২২০ রানে অলআউট!

তাই দলের সব দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তামিমের খেলা ১০৪ রানের সংগ্রামী ইনিংসটি  দিন শেষে তা সেভাবে পূর্ণতা পায়নি। তাই তো দিন শেষে সেঞ্চুরির আনন্দের চেয়ে তামিমের মুখে শুধু আক্ষেপ আর অনুশোচনা; আর ১০০ রান বেশি করতে পারলে, বলতে পারতাম আমরা ভাল জায়গায় আছি; কিন্তু প্রথম দিন শেষে তা আর বলতে পারছি না।’

সবাই তাকে চেনে ড্যাশিং ওপেনার হিসেবে। সবার জানা, তামিম শটস খেলতে ভালবাসেন; কিন্তু সেই তামিম আজ সকালে খানিকটা সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন। স্ট্রোক খেলা বহুদুরে- রান করার চেয়ে উইকেটে কাটাতেই বেশি মনোযোগি ছিলেন।

সে কারণেই দিনের শুরুতে রানের খাতা খুলতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা। ১৯টি ডেলিভারি কাটল রান না করেই। ২০ নম্বর বলে প্রথম সিঙ্গেলস থেকে রানের খাতা খোলা। দিনের তৃতীয় ওভারে ইমরুল ফিরে যাবার পরও কিছু সময়  শূন্য রানেই কাটল।

২৪-২৫ মিনিট খেলা হবার পর রানের খাতা খুলে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা। সেই তামিম পরের ৪০ বলে ৪৯ রান করে ফেললেন। লাঞ্চের সময় তার ব্যাট অপরাজিত ৬৮ রানে।

লাঞ্চের পরও তামিম সাবলীল। স্বপ্রতিভ। তারপর চা বিরতির আগে তিন অংকে পৌছে যাওয়া। শতরান পূরণের আগের এবং ঠিক পূর্ণ হবার মুহুর্তে মঈন আলির অফব্রেকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে পর পর দুই বলে কভার ও এক্সট্রা কভারের মাঝ খান দিয়ে এজোড়া বাউন্ডারি।

তাতেই পূর্ণ হলো ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি। এমন ঝকঝকে, তকতকে সেঞ্চুরিটা স্বার্থক হবে- ডাবল সেঞ্চুরিতে রুপ নিলে। শুধু প্রেস বক্স নয়, শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা যখন এমন আশার প্রহর গুনছিলেন, ঠিক তখনই আউট তামিম।  

যে মঈন আলিকে উড়িয়ে শতরানে পৌঁছে যাওয়ার পর ঠিক তার বলেই শট না খেলে ছেড়ে দিয়ে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন তিনি।

আগের দিনের বড় সময় বৃষ্টি হয়েছে। ঘন কভারে ঢাকা পিচে কিছুটা হলেও ময়েশ্চার ছিল। তাই সকালে দু`ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস আর স্টিভেন ফিনের বল একটু-আধটু মুভ করেছে। কোনো কোনো ডেলিভারি লাফিয়েও উঠেছে। সেই আধ ঘন্টা নিজেকে গুটিয়ে রাখার কথাই দিন শেষে বললেন তামিম-
‘আমি সব সময় অ্যাটাকিং খেলতে পছন্দ করি; কিন্তু অাজ সকালে আমার রানের খাতা খুলতে ১৮ বল (তিনি ১৮ বল বললেও আসলে ২০ বল) লেগেছে। ঐ সময়টা দারুণভাবে সামলানোর পর সেঞ্চুরি। তাই আমি এটাকেও হাইলি রেট করব। আমি যেভাবে ব্যাটিং করতে পছন্দ করি আজকে সেভাবে ব্যাটিং করেছি। আর শুরুতে রানের খাতা খুলতে দেরি করলেও তারপর আমি নিজের মতই খেলেছি।’

তামিম নিজের মতই খেলে সেঞ্চুরি করেছেন। অতিবড় সমালোচকরা হয়ত বলবেন, যেহেতু তিনি একদিক আগলে ছিলেন, তাই তারই উচিৎ ছিল দিন শেষ করা। ক্রিকেটে, বিশেষ করে টেস্টে যারা যেদিন ভাল খেলে বড় ইনিংস সাজান, তাদেরই নাকি যতটা সম্ভব লম্বা সময় উইকেটে পার করা উচিৎ। সেই আলোকে তামিম তা পারেননি।

কিন্তু আবার অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে বলতে হবে, যা করার তা তামিম একাই করেছেন। মাঝে তাকে ভাল সঙ্গ দিয়েছেন মমিনুল (১১১ বলে ৬৬)। বাকিরা ব্যর্থতার মিছিলে অংশ নিলেন। তাই তো ১৯০ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ২২০ রানে শেষ প্রথম ইনিংস।

এ থেকে তামিমের ১০৪ আর মমিনুলের ৬৬ রান বাদ দিন। সবাই মিলে করেছেন ৫০। না, তাও না। কারণ ওই ৫০-এর মধ্যে ১০ আবার অতিরিক্ত থেকে। তার মানে বাকি ৯ জন মিলে ৪০ রান। যে ইনিংসে ৯ জন মিলে করেন ৪০, সেখানে তামিম একাই ১০৪।

সেটা কি কম? নাহ অনেক বড়। আর কেউ এমন এক ইনিংস খেললেই রান গিয়ে দাঁড়াত ৩৫০ প্লাস-এ।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

আরও পড়ুন