মাইলফলকের ম্যাচেও মুশফিকের ভাবনায় দল আগে
রাত পোহালেই ৫০তম টেস্ট। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মোহাম্মদ আশরাফুল আর হাবিবুল বাশারের পর তিনিই হবেন এমন কৃতিত্বের তিন নম্বর অধিকারী। এমন মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে কী ভাবছেন মুশফিকুর রহীম? নিশ্চয়ই খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না!
তাহলে শুনুন, আজ দুপুরে প্রেস কনফারেন্সেও উঠলো এ প্রশ্ন। শুক্রবার ৫০তম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন, অনুভূতি কেমন জানাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা মুশফিকের, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। বাংলাদেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট খেলা খুব সহজ নয়। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।’
ইতিহাস পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ১১ বছর আগে এই ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট অভিষেক তেমন ভালো হয়নি।
কী করে হবে? দল হেরেছিল ইনিংস ও ২৬১ রানে। ইংলিশদের একবারে তোলা ৫২৮ রানের জবাবে প্রথমবার ১০৮ আর পরের বার ১৫৯ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে ১৭ বছর ৩৫১ দিনের কিশোর পাড় করা ছেলের পক্ষে আর কিই বা করার ছিল?
তার ব্যাট থেকে দুই ইনিংসে এসেছিল ( ১৯+৩) = ২২ রান। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তার। ক্রিকেট তীর্থ ও বহু বড় ক্রিকেটারদের স্বপ্নের ভেন্যুতে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নেমে কিন্তু ভড়কে যাননি। ম্যাথিউ হগার্ড, স্টিভেন হারমিসন এবং অ্যান্ড্রু ফ্লিনটপের গড়া ধারালো ইংলিশ ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে সেদিনের মুশফিক সবার চেয়ে বেশি ৮৫ মিনিট ক্রিজে থেকে জানান দিয়েছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ বোলিং লাইনআপে কারা আছেন, তাদের শক্তি, সামর্থ্য ও কারিশমা দেখে ভড়কে যাবার পাত্র নই আমি। থাকতে এসেছি। টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়াই আমার লক্ষ্য।’
সেদিনের সে অল্প বয়সী অনভিজ্ঞ ও অপরিণত মুশফিক সময়ের প্রবাহতায় অনেক পরিণত। অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অফস্পিনার গারেথ ব্যাটির গুডলেংথ থেকে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে আউট না হলে হয়তো দল জিতিয়ে মহানায়ক বনে যেতে পারতেন।
তার জায়গায় যে কেউ হলে ৫০তম টেস্টের আগে বড় গলায় বলতেন, ‘ইংলিশদের সঙ্গে আমার অনেক পুরনো লেনা-দেনা। এবার সব চোকানোর সময় এসেছে। ঢাকা টেস্টে আমি ....... করতে চাই।’ কিন্তু বিনয়ী মুশফিক তার ধারকাছ দিয়েও গেলেন না। শুধু এটুকু বলেই শেষ করলেন, ‘চেষ্টা করবো ব্যক্তিগতভাবে ভালো খেলতে।’
এর পরপরই চলে গেলেন দলের প্রসঙ্গে, ‘আমার আশা, দল যেন ভালো করে। এবং আমি যেন দলের ভালো হই, কাজে লাগে, এমন কার্যকর অবদান রাখতে পারি।’
একদিকে আনন্দের ছোঁয়া, অন্যদিকে নিরানন্দ। তার চেয়ে ১০ মাস পর টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা অ্যালিস্টার কুক টেস্ট খেলেছেন প্রায় আড়াইগুণ; ১৩৪টি। আর ১৯ মাস পর টেস্ট জীবন শুরু করা স্টুয়ার্ট ব্রডের টেস্ট সংখ্যা তার দ্বিগুণ ৯৯টি।
এ নিয়ে আক্ষেপ থাকারই কথা। টেস্ট বেশি খেলতে পারলে রেকর্ড-পরিসংখ্যানও হতো আর সমৃদ্ধ।
ইংলিশদের সাথে তুলনা করে লাভ নেই। কারণ ইংল্যান্ড সারা বছর প্রচুর টেস্ট ম্যাচ খেলে। এমনিতে অন্য সব দেশগুলোর সঙ্গে গড়পড়তা হিসেব করলে মুশফিকের অন্তত ২৫ টি টেস্ট বেশি খেলা উচিৎ ছিল। এখন যে হিসেবে রান তুলেছেন, তা বজায় থাকলেও ৪০০০ টেস্ট রান হয়ে যেত। এ নিয়ে আক্ষেপ আছে। দুঃখও আছে। তবে সে অর্থে হতাশা নেই।
তাইতো মুখে এমন কথা, ‘দুঃখ আছে অবশ্যই। আমার একার শুধু নয়, বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারেরই দুঃখ। এটা (টেস্ট) আমরা খুবই কম খেলি। আমি অনেকবারই বলেছি, যত বেশি টেস্ট খেলবো, তত বেশি শিখবো। সামনের বছর আমাদের অনেক টেস্ট আছে। আশা করবো, এই টেস্ট ভালো খেলতে পারলে ছন্দটা থাকবে। এবং দল হিসেবে আত্মবিশ্বাস থাকবে যে টেস্টেও আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারি।’
এআরবি/এনইউ/পিআর