জিততে হলে সাব্বিরের সঙ্গী প্রয়োজন
আগামীকাল সকালে কী ঘটবে? বাংলাদেশ কী জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারবে? নাকি তীরে এসে আবারো তরি ডোবাবে? এমন নানা প্রশ্ন। রাজ্যের জল্পনা কল্পনা। তবে যাই ঘটুক, এ মুহূর্তে সাব্বির রহমান রুম্মন হচ্ছেন সাহসী নাবিক। প্রচণ্ড ঝড়ে উত্তাল সমুদ্রের মাঝেও হিমালয়ের মত অবিচল। অভিষেকে টেস্ট সেঞ্চুরি অগণিত। হাফ সেঞ্চুরিও প্রচুর। সাব্বিরও সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। এটা নিছকই পরিসংখ্যান।
সেটাই তার অর্জন কিংবা কৃতিত্বের মূল্যায়নে যথেষ্ঠ নয়। আজ রাজশাহীর ২৪ বছরের এ সাহসী যুবা টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে যে ইস্পাত সমান দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ সবাই। আর তাই তো, রোববার বিকেল থেকেই প্রশংসার সাগরে ভাসছেন সাব্বির রহমান রুম্মন। যে উইকেটে বল বিষাক্ত সাপের মত এদিক ওদিক একে-বেঁকে আসছে।
কখনো বিষাক্ত ফনা তুলে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করছে। পেস বোলাররা বল পুরনো হতেই রিভার্স সুইংয়ের জাদুতে ব্যাটসম্যানদের বশ করে ফেলছেন- সেখানে সাব্বির অসাধারণ ব্যাটিং করে জ্বালিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের জয়ের প্রদীপ। তাই তো সবার মুখে সাব্বির বন্দনা, ‘সাবাশ সাব্বির! অভিষেকে এরচেয়ে ভাল ব্যাটিং আর কি হতে পারে!’
বাংলাদেশের সম্ভাবনার প্রদীপ তার হাতে; কিন্তু তারপরও জাগে প্রশ্ন, সাব্বির চাইলেই কি একা দলকে জেতাতে পারবেন? একজন সঙ্গী লাগবে না তার? তিনি একা একদিক আগলে রাখলেন, আর অন্য প্রান্তে বাকি দুই উইকেটের পতন ঘটল- তাতে কি আর জয়ের দেখা মিলবে? মিলবে না। পিছন থেকে পরাজয় এসে গ্রাস করবে। তাই বাংলাদেশের জয়ে সাব্বিরের একজন সঙ্গী প্রয়োজন। সে সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার কথা নিশ্চয়ই সাব্বির সবচেয়ে বেশি ভাবছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও সাব্বিরের সঙ্গীর উইকেটে টিকে থাকার কথা বেশি করে ভাবছেন।
তার অনুভব, প্রথম টেস্টে সাব্বির যে সাহস নিয়ে ইংলিশ বোলিং মোকাবিলা করেছে, তা দেখে আর সবার মত আমিও মুগ্ধ।’ আকরাম খান একা নন। সাব্বিরের ব্যাটিং ভাল লেগেছে সবার। একজন যুবা টেস্ট অভিষেকে কঠিন ও টার্নিং উইকেটে যত ভাল ব্যাট করতে পারেন- সাব্বির সেটাই করে দেখিয়েছেন। নতুন বল সামলাতে পারেন। পাশাপাশি স্পিনের বিপক্ষেও তার ব্যাট প্রশস্ত।
এসব ভেবেই তাকে সাত নম্বরের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুযোগ দেয়া। সাব্বির নির্বাচকদের সে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। স্পিন ও পেস- দুই ধরনের বোলিং সামলেছে অসামান্য দক্ষতায়। স্পিনারদের মধ্যে যিনি জেঁকে বসেছেন, দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভুগিেেয়ছেন- সেই মঈন আলিকে লং অফ ও ওয়াইড লং অনের ওপর দিয়ে দুটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ঠান্ডা করে দিয়েছেন। পড়ন্ত বিকেলে যখন স্টোকস আর স্টুয়ার্ট ব্রড রিভার্স সুইং করাচ্ছিলেন, তখনও সাব্বির ঠান্ডা মাথায় তার মোকবিলা করেছেন।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও চট্টগ্রামের সূর্য্য সন্তান আকরাম মনে করেন, সাব্বির যতটুকু করেছে, সে জন্য তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তবে কঠিন সত্য হলো, জিততে হলে হয় তাইজুল না হয় শফিউল- দুজনার যে কোন একজনকে সাব্বিরের সঙ্গী হতেই হবে। একপ্রান্তে সাব্বির যত ভালই খেলুক, লাভ হবে না। অন্যদিকে উইকেট আগলে রাখার কাজটি করতে হবে। আকরামের বিশ্বাস, এখন পর্যন্ত তাইজুল আস্থার পরিচয় দিয়েছে। সাব্বির তার কাছ থেকে ভালই সাপোর্ট পেয়েছে।
সে কারণেই আজ দিন শেষে তাদের ১৫ রানের জুটি অবিচ্ছিন্ন। আকরাম কায়মনো বাক্যে চাচ্ছেন আগামীকাল সোমবার তাইজুল আরও কিছুক্ষণ উইকেট থেকে সাব্বিরকে একটু ফ্রি হয়ে খেলার সুযোগ করে দেবে। আকরাম জাগো নিউজকে জানান, সাব্বির নিজেকে খুঁজে পেয়েছে। ভিতরে সাহস ও আস্থা দুই’ই জন্মেছে, আমি পারবো। ইংলিশ বোলারদের সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে দল জেতাতে পারবো।
শুধু অন্য প্রান্তে সাপোর্ট দরকার। তাইজুল ও শফিউলের কেউ কি দিতে পারবেন সেই সাপোর্ট? পারতে হবেই। বিকল্প পথ খোলা নেই। আবারো বলা, সাব্বির এক প্রান্তে নটআউট থাকলে লাভ হবে না, যদি না তাইজুল ও শফিউলের কেউ একজন তাকে সাহায্য না করেন।
এআরবি/আইএইচএস/এএম