স্পিনেই শেষ ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম দিনটা যদি মিরাজের হয় তাহলে দ্বিতীয় দিনটা তাইজুলের। প্রথম দিনে পাঁচ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন মিরাজ। আর দ্বিতীয় দিনে দুই উইকেট নিয়ে তিনশোর আগেই ইংলিশদের আটকে রাখেন তাইজুল। প্রথম দিনের ২৫৮ রানের সঙ্গে আর ৩৫ রান যোগ করে ২৯৩ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের প্রথম ইনিংস।
প্রথম দিনে শেষে সাত উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রানে খেলতে নামা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই ক্রিস ওকসকে হারান। একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বল এগিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ক্রিস ওকস। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল যায় শর্ট লেগে মুমিনুল হকের হাতে। এরপর তাইজুল ইসলামের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে আদিল রশিদকে (৫৪ বলে ২৬) বিদায় করেন সাব্বির রহমান।
আর ইনিংসের ১০৬ তম ওভারে মিরাজের বলে স্টুয়ার্ট ব্রডের ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ আসে মুশফিকের কাছে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন অধিনায়ক। তাতে সিদ্ধান্ত পাল্টায়, ৩৭ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ব্রড। প্রথম ইনিংস শেষে মিরাজ ৬ টি আর সাকিব-তাইজুল নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। ইংলিশদের ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন মিরাজ আর সাকিব। ফলে টস হারার দুঃখটা আর থাকেনি। মিরাজ ও সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ২১ রানেই ফিরে যান প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান।
দশম ওভারে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বেন ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন এ নবীন। এরপরের ওভারেই ইংলিশ অধিনায়ক কুককে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান সাকিব।
পরের ওভারে আবার মিরাজ। গ্যারি ব্যাল্যান্সকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ওভারের শেষ বলে ব্যাটে বলে সংযোগ করতে না পারায় ব্যাল্যান্সের প্যাডে লাগে বল। জোরালো আবেদনের পর আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় রিভিউর আবেদন করে টাইগাররা। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে ফলটা এলো বাংলাদেশের পক্ষেই।
এরপর জো রুটের সঙ্গে ইংলিশদের হাল ধরেন মঈন আলি। ৬২ রানের জুটি গড়ে দলের চাপ কিছুটা সামলে নেয়ার ইঙ্গিত দেন তারা। তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পর দলীয় ৮৩ রানে ইংলিশ শিবিরে আবার আঘাত হানেন মিরাজ। তার বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান রুট। ৪৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪০ রান করেন তিনি।
এরপর বেন স্টোকসকে নিয়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মঈন আলি। এদিন ভাগ্যকে সঙ্গে নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন সম্ভবত তিনি। দুই পক্ষ মিলিয়ে মোট পাঁচবার রিভিউর কবলে পড়েন তিনি। প্রত্যেকবারই সফল। তাইজুলের করা ২৪তম ওভারে মঈনের বিপক্ষে প্রথম রিভিউটি নেন বাংলাদেশ; কিন্তু, রিভিউতে আম্পায়ারের দেয়া নট আউটের সিদ্ধান্তই সঠিক হিসেবে প্রমাণ হয়।
এরপর সাকিবের করা ২৭তম ওভারে আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন মঈন। এবারও রিভিউতে নটআউট ঘোষণা হন তিনি। ২৯তম ওভারে আবার আম্পায়ারের বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে জয় হয় তার। এরপর একই ওভারে আবারো রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। ৪৮তম ওভারে আবার বাংলাদেশের রিভিউর মুখোমুখি হন, এবারও যথারীতি ভাগ্য তাকেই সঙ্গ দেয়।
এরই মাঝে ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক ফ্লাইটে স্টোকসকে পরাস্ত করেন করেন সাকিব। সরাসরি বোল্ড হয়েই সাজঘরে ফেরেন স্টোকস (১৮)। স্টোকসের বিদায়ের পর জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন মঈন। ৮৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দিতে দারুণ ভূমিকা রাখেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
মিরাজের করা ৬৭তম ওভারে দলীয় ১৯৪ রানে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মঈন। ১৭০ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৬৮ রান করেন তিনি। এরপর ক্রিস ওকসকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়ে আউট হন বেয়ারস্টো। নতুন বল নেয়ার দ্বিতীয় ওভারেই মিরাজের বলে বোল্ড আউট হন তিনি। ১২৬ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৫২ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
এদিকে গত জুলাইয়ে এ মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে অল আউট করে নিজেদের প্রথম ইংসে ৩২৬ রান করে ৭৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। এবার দেখার বিষয় ইংল্যান্ডের ২৯৩ অতিক্রম করে লিড নিতে পারে কি না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
এমআর/পিআর