সমসাময়িক মুশফিক-কুক অথচ কত ব্যবধান!
মুশফিকের বয়স ২৯ বছর ১৩২ দিন। কী আশ্চর্য! মুশফিকুর রহীমের চেয়ে ৯ মাস পর অভিষেক হওয়ার পরও অ্যালিস্টার কুক খেলেছেন ১৩৩টি টেস্ট। আর মুশফিকের টেস্ট সংখ্যা কত জানেন! মোটে ৪৮টি। ভাবা যায়!
যে কোনো হিসাব কিংবা সমীকরণে মেলানো কঠিন। ইতিহাস বলছে, বর্তমানে ৩১ বছর ২৯৯ দিন বয়সী ইংলিশ অধিনায়কের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ১০ বছর আগে; ২০০৬ সালের ১ মার্চ।
আর বর্তমান বাংলাদেশ টেস্ট ক্যাপ্টেন লংগার ভার্সনের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তারও নয় মাস আগে, ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে; কিন্তু তাতে কি? এ দীর্ঘ সময়ে মুশফিকের প্রায় তিনগুণ টেস্ট খেলেছেন অ্যালিস্টার কুক। বেশি ম্যাচ খেলার কারণে খুব স্বাভাবিকভাবে কুকের পরিসংখ্যানও অনেক সমৃদ্ধ।
৪৮ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি আর ১৫ হাফ সেঞ্চুরিতে মুশফিকের রান ২৬৫০। সর্বোচ্চ ২০০। গত ১১ বছরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলেছেন মোটে ৫ টেস্ট। যার তিনটি ইংল্যান্ডের মাটিতে। ইংলিশ কন্ডিশনে টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে ৩ টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে না পারা মুশফিকের সংগ্রহ ছিল ৬ ইনিংসে ৬২ রান। সর্বোচ্চ ছিল ১৯।
অবশ্য ঘরের মাঠে বাকি দুই টেস্টে মোটামুটি উজ্জ্বল মুশফিক; করেছেন ২০৭। সর্বোচ্চ ৯৫। প্রসঙ্গক্রমে বলা, এখনো অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেস্ট খেলা হয়নি মুশফিকের। অসিদের বাইরে গত ১১ বছরে মুশফিক ভারতের বিপক্ষে ৩, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬, শ্রীলংকার বিপক্ষে ৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬ টেস্টে অংশ নিয়েছেন।
ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রয়েছে একটি করে টেস্ট সেঞ্চুরি। দেশের মাটিতে তার টেস্ট সংখ্যা ২৯। আর দেশের বাইরে ১৯। অন্যদিকে অ্যালিস্টার কুক মুশফিকের চেয়ে নয় মাস কম সময়ে ১০ বছর ৭ মাসে অস্ট্রেলিয়া (৩০ টেস্টে ৪ সেঞ্চুরি), বাংলাদেশ (৪ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি), ভারত (২০ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরি), নিউজিল্যান্ড (১৩ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি), পাকিস্তানের (১৮ টেস্টে ৫ সেঞ্চরি), দক্ষিণ আফ্রিকা (১৫ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি), শ্রীলঙ্কা (১৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৭ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি)।
কুক শুধু ৮৫ টেস্টই বেশি খেলেননি। রানও করেছেন চারগুণ বেশি, ১০ হাজার ৫৯৯। সেঞ্চুরিও মুশফিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি; ২৯টি।
এই বৈপরিত্য কেন? মুশফিকের চেয়ে নয় মাস পরে ক্যারিয়ার শুরু করেও অ্যালিস্টার কুক এতো বেশি সংখ্যক টেস্ট খেললেন কি করে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। আজ দুই দেশের অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনেও উঠল এ প্রশ্ন। একই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল মুশফিক এবং কুকের কাছেও।
মুশফিকের কাছে প্রশ্ন, আপনার ৯ মাস পর টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেও কুকের ১৩৩ টেস্ট, আর আপনার ৪৮। কীভাবে দেখছেন?
মুশফিক বিষয়টিকে মোটেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে নারাজ। তার চোখে অ্যালিস্টার কুক তরুণদের আদর্শ হতে পারেন।
তারচেয়ে কম সময়ে প্রায় তিনগুণ টেস্ট খেলে ১০ হাজারি ক্লাবে পা রাখা কুকের সাফল্যের প্রশংসা করে মুশফিক বলেন, ‘কুক অবশ্যই যে কোনো তরুণ ক্রিকেটারের জন্য রোলমডেল। যেভাবে গত ১০-১২ বছর ধরে খেলছে, তার প্রশংসা করতেই হয়। আমার পরে অভিষেক ওর, তারপরও ১৩৩ টেস্ট খেলে ফেলছে। আমি খেলেছি ৪৮ টেস্ট। এতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা টেস্ট সে খেলেছে এবং অর্জন করেছে অনেক কিছু।’
একই প্রশ্ন ছিল কুকের সামনেও। ইংলিশ অধিনায়কের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘কি আর বলবো বলুন! আসল সত্য হলো ইংল্যান্ড অনেক বেশি টেস্ট খেলে। বাংলাদেশ সে তুলনায় খেলেছে অনেক কম। সে কারণেই হয়তো আমি ১০ বছরে ১৩৩ ম্যাচ খেলেছি। আর একই সময়ে মুশফিকের টেস্ট সংখ্যা মোটে ৪৮টি।’
এআরবি/আইএইচএস/এবিএস