সাকিব-তাইজুলের সঙ্গে তৃতীয় স্পিনার মিরাজ!
রাত পোহালেই টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা। শনিবার বিকেল থেকেই ব্যতিব্যস্ত মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এন্ড কোং। নির্বাচকদের দীর্ঘ বৈঠক। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো, তবুও চললো মিটিং।
সন্ধ্যা ৬টার পরও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে ফোনে পাওয়া গেল না। ‘ভাই এখনো মিটিং চলছে। পরে কথা বলি ।’ এ কথা বলেই ফোন রেখে দিলেন তিনি। নির্বাচকরা এমন ব্যস্ত হতেই পারেন, যা করার আজ রাতেই করতে হবে। কেমন হবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট দলের গঠন শৈলি?
১৪ জনের দলে কজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান নেয়া হবে? পেসার ক’জন? স্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গী কে বা কারা- এসব নিয়ে নানা আলোচনা। পর্যালোচনা। শেষ টেস্ট স্কোয়াডের সাথে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে কিছু পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগতে পারে।
গত বছর জুলাই-আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে শেষ টেস্টে ৭ ব্যাটসম্যান, দুই পেসার ও দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার ফর্মুলায় সাজানো হয়েছিল একাদশ। ১৪ জনের দলে ছিলেন ৯ উইলোবাজ- তামিম, ইমরুল, মমিনুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, সৌম্য, লিটন ও নাসির। আর পেসার হিসেবে ছিলেন মোস্তাফিজ-শহীদ ও রুবেল।
আর সাকিব আল হাসানের বাইরে স্পেশালিস্ট স্পিনার ছিলেন তাইজুল জুবায়ের। প্রায় অপরিহার্য হয়ে ওঠা তামিম ইকবাল- ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটির পর তিন নম্বরে খেলানো হয়েছে মমিনুল হককে। পরিসংখ্যান পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, কক্সবাজারের এ যুবাই টেস্টে গত দু’বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটিং পারফরমার।
এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান- অটোমেটিক চয়েজ। এই ছয় ব্যাটসম্যানের সাথে শেষ টেষ্টে লিটন দাস ও সৌম্য সরকার খেলেছেন। এর মধ্যে লিটন দাস বিবেচনায় ছিলেন উইরেক্ষক কাম ব্যাটসম্যান। আর সৌম্য খেলেছেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে।
নির্বাচকরা দল সম্পর্কে আগাম কোন পূর্বাভাষ না দিলেও তাদের ঘনিষ্ট সূত্রের খবর, এবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও টিম কাম্বিনেশনটা তেমনই হবে। অর্থাৎ ১৪ জনের দলে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহকে অলরাউন্ডার ধরে আরও সাত ব্যাটসম্যান রাখার জোর চিন্তা চলছে। সঙ্গে তিন পেসার ও দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার।
সাকিবের সঙ্গে বাঁ-হাতি তাইজুলের টেস্ট দলে থাকাও প্রায় নিশ্চিত। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে আরেক স্পেশালিষ্ট স্পিনার কে? যতদুর জানা গেছে, এখানেই একমাত্র নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। তৃতীয় স্পিন অপশন হিসেবে লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনকে বাদ দিয়ে নির্বাচকরা এখন মেহেদি হাসান মিরাজের দিকেই তাকিয়ে।
যতদুর জানা গেছে, বিশ্ব যুব ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়া মিরাজের টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যেহেতু জুবায়ের হোসেন লিখনের সাম্প্রতিক ফর্ম তেমন ভাল নয়, তাই বিকল্প চিন্তা। সে কারণেই মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ এসেছেন বিশেষ বিবেচনায়।
প্রসঙ্গতঃ ইংলিশদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে যে ক্যাটাগরিতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অন্তর্ভুক্তি, ঠিক সে একই ক্যিাটাগরির পারফরমার হিসেবে টেস্ট দলে জায়গা পেতে পারেন জাতীয় যুব দলের অধিনায়ক মিরাজ। তার ব্যাটিং সামর্থ্যের পাশাপাশি অফস্পিন বোলিংটার দিকেই নাকি নির্বাচকদের নজর বেশি।
জানা গেছে, মাহমুদউল্লাহর পাশাপাশি মেদেদি হাসান মিরাজকেও অফস্পিনার হিসেবে নিতে আগ্রহী মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার ও সাজ্জাদ আহমেদ শিপন।
এদিকে গত বছর জুলাই-আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সর্বশেষ টেষ্ট সিরিজে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম কীপিং করেননি। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন। তার জায়গায় উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়েছিলেন লিটন দাস। তার সাথে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন সৌম্য সরকার। অবশ্য শেষ টেস্টে নাসিরকেও সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
ধারনা করা হচ্ছে, এবার মুশফিকই কিপিং করবেন। মুশফিকের হাতে গ্লাভস থাকার অর্থ বিকল্প কীপারের অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। ফর্মহীন লিটন এবার আলোচনার বাইরে। সৌম্য সরকারের ফর্মও খুব ভাল নয়। তাকেও রাখা হবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে? তা নিয়েও বিস্তর কথা-বার্তা চলছে।
এ দু’জনার বিকল্প হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সাব্বির রহমান রুম্মন আছেন বিবেচনায়। তাদের দিকে চোখ রয়েছে নির্বাচকদের।
এতকাল সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট ভাবা হলেও এবার ইংলিশদের সাথে দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের একটিতে সাব্বিরকে অধিনায়ক করা হয়েছে। এবার তাকে টেস্ট দলেও দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নাসির বাদ পড়বেন। মোসাদ্দেক সৈকত, মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির ছাড়া আরও একজনের দলভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে- তিনি শাহরিয়ার নাফীস। এ বাঁ-হাতি টপ অর্ডার আজও প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।
একই ক্যাটাগরির মোসাদ্দেক সৈকত ও মেহেদি হাসান মিরাজের যে কোন একজনের বদলে টপ অর্ডারে ব্যাকআপ হিসেবে শাহরিয়ার নাফীসও আছেন বিশেষ বিবেচনায়। জাতীয় লিগে নজরকাড়া শাহরিয়ার নাফীস দলে ঢুকে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি