ইংল্যান্ডকে ২৭৮ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ
শুরুর সঙ্গে শেষটাও ভালো হলো বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারে এসে আর ভেঙে পড়লো না টাইগাররা। বিশেষ করে রান খরায় ভুগতে থাকা মুশফিকুর রহিমের ফর্মে ফেরার সঙ্গে শেষ মুহূর্তে মোসাদ্দেকের দারুণ ধৈয্যশীল ব্যাটিংই বাংলাদেশকে পৌছে দিয়েছে সম্মানজনক স্কোরে। ইংল্যান্ডের সামনে বেধে দিয়েছে ২৭৮ রানের লক্ষ্য।
শুরুতেই ৮০ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। মাঝে কিছুটা ঝড় তুলেছিলেন সাব্বির রহমান। শেষ দিকে একে সেই ঝড়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন মুশফিকুর রহিম আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দু’জন গড়েন ৮৫ রানের জুটি। মুশফিক করলেন ৬২ বলে ৬৭ রান। মোসাদ্দেক করেন ৩৯ বলে ৩৮ রান।
তামিম-ইমরুলের ব্যাটে সূচনাটা ভালোই করেছিলো বাংলাদেশ। ১৯ ওভারে দু’জনের ৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের স্বপ্নই দেখিয়েছিল। তবে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছিল টিম বাংলাদেশকে।
১৯তম ওভারের শেষ বলেই বেন স্টোকসের বলে ইমরুল কায়েস ক্যাচ দিয়েছিলেন পরিবর্তিত ফিল্ডার লিয়াম ডসনের হাতে। তার ৫৮ বলে খেলা ৪৬ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪টি বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কায়।
ইমরুল আউট হয়ে গেলেও নিজের হোম গ্রাউন্ডেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজারি ক্লাবে নাম লেখালেন তামিম ইকবাল। মাইলফলকে পৌঁছাতে এই ম্যাচে ৩৮ রান প্রয়োজন ছিল তার। ২২তম ওভারে ক্রিস ওকসকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েই মাইলফলক স্পর্শ করেন এই ড্যাশিং ওপেনার।
এরপরই যেন ফেরার তাড়া শুরু হয়ে যায় তামিমের মধ্যে। আদিল রশিদের বলে জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন লোকাল বয় তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৫টি বাউন্ডারিতে করেন ৪৫ রান।
তামিম আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সাব্বির রহমানের সঙ্গে জুটি বাধেন। আগের মাচে ৭৫ রান করার কারণে তার ওপর অনেকটাই আস্থা তৈরী হয়েছিল সবার। কিন্তু ৭ বলে ৬ রান করে উচ্চভিলাষি শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন তিনিও। আদিল রশিদের বলে তার ক্যাচ ধরেন জনি বেয়ারেস্ট।
মাহমুদুল্লাহর পর মাঠে নামেন মুশফিকুর রহীম। ১২২ রানে মাহমুদউল্লাহকে হারানোর পর সাব্বির রহমানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়েন সাব্বির। তবে দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন এরপরই। ৪৬ বলে ৪৯ রান করেন আউট হয়ে যান তিনি। আফসোস সাব্বিরের জন্য। ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দুরে থাকতে আউট হয়ে গেলেন তিনি, আদিল রশিদের বলে উইকেটের পেছনে জস বাটলারের হাতে ক্যাট দিয়ে।
আদিল রশিদের আউট সুইঙ্গার বলটি শেষ মুহূর্তে ছাড়তে গিয়েও কেন যেন ব্যাটের খোঁচাটা লাগিয়ে দিলেন। বল গিয়ে জমা পড়ে বাটলারের গ্লাভসে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫টি বাউন্ডারিতে।
সাব্বির আউট হওয়ার পর মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে জুটি বাধেন সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ডের স্পিনারদের সামনে ঠিক স্বচ্ছন্দে ব্যাট করতে পারছিলেন না সাকিব। এ কারণেই ৩৬তম ওভারে মঈন আলির বলে পরাস্ত হলেন সাকিব। তার সুইং বলটি একটু এগিয়ে এসে খেলতে যান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে হয়নি। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে এবং সেটা ধরেই স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন বাটলার। ১০ বলে ৪ রান করে ফিরে যান সাকিব।
নাসিরকে আজ নামানো হয়েছিলো একটু এগিয়ে এনে, মোসাদ্দেকের ওপরে। তবে ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে আসাটা তার জন্য সুখকর হলো না। আউট হয়ে গেলেন মাত্র ৪ রান করে। ১৭৬ থেকে ১৯২- এই ১৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। নাসির আউট হওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
মোসাদ্দেব যখন মাঠে নামেন তখন বাংলাদেশের রান ৩৮.১ ওভারে ১৯২। এই জুটিই বাংলাদেশের ইনিংসকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হলো। শেষ ১১.৫ ওভারে মোসাদ্দেক এবং মুশফিক মিলে ইনিংসের সঙ্গে যোগ করেন ৮৫ রান। শেষ ১০ ওভারে যে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তো, সেটা আর হয়নি এই ম্যাচে এসে। মুশফিক-মোসাদ্দেক জুটি বেশ ভালোভাবেই সামলে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস গিয়ে থাকে ৬ উইকেটে ২৭৭ রানে।
ইংলিশদের পক্ষে একাই ৪ উইকেট নেন আদিল রশিদ। তার লেগ স্পিনই ঠিকভাবে পড়তে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাকি দুই উইকেটের একটি নেন বেন স্টোকস এবং অন্যটি নেন মঈন আলি।
এর আগে দুপুরে বৃষ্টির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই ভরে গিয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি। বৃষ্টি থেমেছিল সময়মত এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানডেটিও শুরু হয়েছে সময়মত।
আগের দুই ম্যাচের মতই এই ম্যাচে টস হেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইংল্যান্ড টস জিতেই প্রথমে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ব্যাট করার জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : ইংল্যান্ড (ফিল্ডিং)
বাংলাদেশ : ২৭৭/৬, ৫০ ওভার (মুশফিক ৬৭*, সাব্বির রহমান ৪৯, ইমরুল কায়েস ৪৬, তামিম ইকবাল ৪৫, মোসাদ্দেক হোসেন ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ৬; আদিল রশিদ ৪/৪৩, মঈন আলি ১/৪২, বেন স্টোকস ১/২৪)।
Series decider: Mashrafe & Co set England 278 -run target
আইএইচএস/এবিএস