চাপ কমাতেই আদিলকে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলাম : ইমরুল
কাকে দুষবেন ইমরুল কায়েস? নিজেকে? অমন সাজানো গোছানো সেঞ্চুরি করেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরতে না পারার জন্য কে দায়ী? ভাগ্য, নাকি ইনজুরি ? কার ওপর সব দোষ চাপাবেন মেহেরপুরের ২৯ বছর বয়সী এই ওপেনার ? নিশ্চয়ই খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না।
তাহলে শুনুন, ছয় বছর নয় মাস পর আবার শতরান করেও দল হারায় মন ভাল নেই ইমরুলের। শুক্রবার প্রায় নির্ঘুম কেটেছে। সকালে নাস্তা শেষ করে জাগো নিউজের সঙ্গে মুঠোফোনে একান্ত আলাপে ধরা গলায় সে কথাই জানালেন, ‘কি ভাই অনেকদিন পর সেঞ্চুরি পেলেন, কেমন লাগছে ?
ইমরুলের ধরা গলার জবাব, `কি আর বলবো ভাই ? দল হারলে কি আর নিজের সেঞ্চুুরির আনন্দ থাকে ? ম্যাচ জিতলে মনটাই থাকে অন্যরকম। খুশি খুশি লাগে। মনে হয় দলের জন্য , দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। কিন্তু তা আর হলো কই ? বরং খুব খারাপ লেগেছে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতেও পারিনি। ছটফট করেছি। বার বার মনে হয়েছে, ইশ যদি ম্যাচটা ফিনিশ করে ড্রেসিং রুমে ফিরতে পারতাম।`
তবু দীর্ঘ দিন পর আবার শতরানের দেখা মিললো, এটাও নিশ্চয়ই একরকম সান্ত্বনা ? ইমরুল এ প্রশ্নের জবাবটা ভিন্ন ভাবে দিয়েছেন। এ সেঞ্চুরিটা দলের কাজে লাগেনি। সে বোধ ও উপলব্ধিটাই বেশি কাজ করছে। তাই আনন্দ-উল্লাসের বদলে ভিতরে হতাশার কাল মেঘ।
তবে না পাবার অতৃপ্তি হতাশার বিপরীতে একটা অস্ফুট স্বস্তির পরশও আছে। আর তাই মুখে এমন কথা, `সত্যি কথা বলতে কি সেঞ্চুরিটা দলের কাজে আসেনি। এ জন্য অবশ্যই মন খারাপ। তবে একটা স্বন্তি আছে, তাহলো অনেকদিন পর সেঞ্চুরি পেলাম। আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা সামনের ম্যাচ গুলোয় ভাল খেলার একটা রসদ অন্তত জন্মেছে।`
কিন্তু আপনিতো হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির শিকার। মাত্র ৪৮ ঘন্টায় কি পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে মাঠে নামতে পারবেন ? ইমরুলের চোয়াল শক্ত করা আশাবাদী উচ্চারণ, অবশ্যই পারবো। ইনশাআল্লাহ আমি খেলবো।`
ওয়ানডেতে তার শেষ তিন ইনিংস ৭৬+৭৩+৩৭। একদম শেষ ইনিংসটি আফগানিস্তানের সঙ্গে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলায়। তার আগের দুুটি ১১ মাস আগে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৯ ও ১১ নভেম্বর। ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক। তার পর আট বছরে ৬০ ওয়ানডে খেলা। অভিষেকে চমক দেখাতে না পারলেও ৫ নম্বর ম্যাচে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি (২০১০ সালের ৭ জানুয়ারী ভারতের বিপক্ষে ৭০, ১০ নম্বর খেলায় নিউজিলান্ডের ক্রাইষ্টচার্চে ব্লাক ক্যাপদের বিপক্ষে প্রথম শতরান ( ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী।)।
এরপর ১১ বার পঞ্চাশে পা রাখলেও একবারও তিন অংকে পৌছানো সম্ভব হয়নি। তবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর পরই (১৩ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেরেবাংলায়) প্রায় সেঞ্চুরি করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু ৭ রান দূরে থেকে সাজঘরে ফেরা। অবশেষে তার ৪৯ ম্যাচ পর কাল সেই শেরে বাংলায় সে শতরান করতে না পারার আক্ষেপ ঘুচলো।
শুক্রবার যখন ব্যাট করছিলেন, তার মাঝামাঝি সময়ই মনে হয়েছে আজ কিছু একটা হতে পারে। সে সম্পর্কে ইমরুলের কথা, ‘যখন দেখলাম ও অনুভব করলাম , বল মাঝ ব্যাটে হচ্ছে। তখনই মনে হলো আজ যদি লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারি, তাহলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা হয়েও যেতে পারে। ’
ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে না পারার যন্ত্রণায় ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তবে তার আগে ইমরুল মনে মনে দুষছেন ভাগ্যকে। বার বার মনে হচ্ছে ইস কেন যে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি হলো। তার স্থির বিশ্বাস, হ্যামস্টিং সমস্যা আক্রান্ত না হলে নিশ্চয়ই ম্যাচ শেষ করে ফিরতে পারতেন। সে আক্ষেপটাই পোরাচ্ছে ।
‘আমি সুস্থ্য থাকলে আরও গোটা দশেক সিঙ্গেলস নিতে পারতাম। কিছু বিগ শটও খেলা যেত। তাহলে অবশ্যই আরও খানিকটা পথ এগিয়ে যেতে পারতাম। হিসেবটাও সহজ হয়ে যেত। ’
কারো কারো মত ইমরুল একটু রয়ে সয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খেললে দল জিতিয়ে আসতে পারতেন। তাদের কথা, আপনি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে খানিকটা সময় খেলার পর সেঞ্চুরি করেছেন। সে ভাবে খেললেইতো দল জয়ের কাছাকাছি চলে যেতে পারতো। তা না করে হঠাৎ ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়া কেন ?
ইমরুলের ব্যাখ্যা, আমি ডাউন দ্যা উইকেটে গিয়ে ছয় মারতে গিয়েছিলাম। সেটা যে উচ্চভিলাশি শট ছিল তা বলবো না। কারণ অন্যদিকে রুবেল ভাই ( মোশাররফ রুবেল ) ডট বল দিচ্ছিলেন। আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। এক দিকে রান আসছে না। আমি যদি লেগস্পিনার আদিল রশিদের ঐ ওভারে ১০/১২ নিয়ে নিতে পারি তাহলে ওভার পিছু রান তোলার হিসেবটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাই ছক্কা হাকাতে যাওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা, প্র্যাকটিস ম্যাচে আমার হাকানো ছয় ছক্কার দুটি ছিল আদিল রশিদের বলে। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম। পারব। হয়নি।`
শতরান বিফলে। দলেরও তীরে এসে তরী ডুবেছে। সামনের দুই ম্যাচে কি হবে ? টাইগাররা ঘুরে দাড়াতে পারবে? ইমরুলের আশাবাদী উচ্চারণ, `এখনো সিরিজ জেতার মত পর্যাপ্ত সাহস, উদ্যম ও সামর্থ্য আছে আমাদের।`
এআরবি/এমআর/আরআইপি