ম্যাচটা আমাদেরই হাতে আসার কথা ছিল
টার্গেট যত বড় (৩১০) আর কঠিনই হোক না কেন, দুই বাঁ-হাতি ইমরুল কায়েস আর সাকিব আল হাসান ঠিক কক্ষপথেই ছিলেন। তাদের বুক চিতানো ব্যাটিং স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। পুরো দেশ ও জাতি এক ঐতিহাসিক জয়ের প্রহর গুনছিল। ইমরুল ও সাকিবের আত্মবিশ্বাসী আর সাবলীল ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল নিশ্চিত জয়ের পথে বাংলাদেশ।
কিন্তু হায় ৪১.৩ ওভারে সাকিব আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে ভোজবাজির মত বদলে গেল দৃশ্যপট। ইংলিশ ফাস্ট বোলার জ্যাক বালকে পুল করে খেলতে গিয়ে আকাশে ক্যচে তুলে সাকিব যখন বিদায় নিলেন, তখনো খেলা হাতে। সাকিবের ৭৯ রানের (৫৩ বলে ১০ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়) ঝড়ো ইনিংস যখন শেষ হলো তখন বাংলাদেশ জয় থেকে মাত্র ৩৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে। বল তখনো বাকি ৫১টি। একদম ‘জলবৎ তরলং’ অবস্থা।
সেখান থেকে হারাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে সে অস্বাভাবিক হারই থাকলো সঙ্গী। ২৭১ রানে সাকিব আউট হবার পর মাত্র ১৭ রানে পতন ঘটল শেষ ৫ উইকেটের। এ যেন ‘তীরে এসে তরি ডোবা।’
এমন জেতা ম্যাচ হারলে কার না খারাপ লাগে? টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও মন খারাপ। ইনজুরি, অতৃপ্তি, দুঃখ, কষ্ট- কোন কিছুই যাকে দমাতে পারে না, নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ের সেই সাহসী যোদ্ধার চোখে মুখেও আজ রাজ্যের হতাশা। খেলা শেষের প্রেস কনফারেন্সে কথা বললেন ধরা গলায়।
মাশরাফিও মনে করেন, তার দল জেতা ম্যাচ হেরেছে। তাই খেলা শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে টাইগার অধিনায়কের হতাশার সুর, এ ম্যাচটা আমাদের হাতে আসা উচিৎ ছিল।
প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন উঠল, তাহলে আসলো না কেন? কোন জায়গায় গিয়ে ঘটল বিপত্তি? মাশরাফির ব্যাখ্যা, আর একটু অন্যভাবে চেষ্টা করে দেখা যেত।
সেটা কেমন? তার ব্যাখ্যাও আছে। নড়াইল এক্সপ্রেস মনে করেন, ইমরুল ও সাকিব জুটি ভাঙ্গার পরও খেলা তার দলের হাতে ছিল। ওই সময়ের সমীকরণও সহজ ছিল। রানের চেয়ে বল অনেক বেশি বাকি ছিল। তখন তেড়েফুড়ে ব্যাট না ছুড়ে একটু রয়ে সয়ে ঠান্ডা মাথায় সিঙ্গেলস-ডাবলসের ওপর খেলার চেষ্টা করে একদম শেষ দুই ওভারে টেনে নিয়ে যাওয়া যেত।
তখন ১৫/১৬ রান দরকার পড়লেও হয়ত হয়ে যেত। কারো কারো মত অনেক লম্বা সময় ক্রিজে কাটিয়ে সেঞ্চুরি করা ইমরুল কায়েস একদিক আগলে থাকতে পারলেই হয়ে যেত। বাকিরা তাকে একটু সঙ্গ দিলেই হয়ত দল জিতিয়ে ফেরত আসতে পারতেন ইমরুল। কিন্তু কোনটাই হয়নি। সাকিবের পর মোসাদ্দেক সৈকৎ প্রথম বলেই আউট। অধিনায়ক নিজেও কিছু করতে পারেননি। আর যিনি জয়ের মঞ্চ প্রায় তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেই ইমরুল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কঠিন কাজটুকু সেরে শেষ দিকে অল্প কটা রান বাকি থাকতে ধৈর্য হারালেন।
মাসল ক্র্যাম্প করার পর দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছিল, তারপরও লেগস্পিনার আদিল রশিদের বলে উইকেটে ছেড়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হয়েছেন ইমরুল। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি যথারীতি কাউকে দোষ দিতে নারাজ। তার সোজা সাপটা কথা, কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এর আগেও এমন হয়েছে। কিছুদিন ধরেই এমন হচ্ছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে, আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
এআরবি/আইএইচএস/এএম