সিরিজের সঙ্গে শততম জয় বাংলাদেশের
সিরিজ জয়টা অবধারিতই ছিল। শুধু মাঝে একটু কালি ছিটিয়ে দিয়েছিল দ্বিতীয় ম্যাচে ২ উইকেটে পরাজয়। যদিও সেটা যে বাংলাদেশের আসল ক্রিকেট ছিল না, তা প্রমাণ হয়ে গেলো সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এসে। ২৮০ রানের লক্ষ্য বেধে দিয়ে আফগানিস্তানকে অলরাউট করে দিল ১৩৮ রানে। ১৪১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে নিলো মাশরাফি বিন মর্তুজারা। একই সঙ্গে গৌরবময় শততম জয়ের দেখাও পেয়ে গেলো বাংলাদেশ।
২৮০ রানের চ্যালেঞ্জটা ছিল অনেক বড়। বিশাল এই চ্যালেঞ্জ পাড়ি দেয়া আপাতত আফগানিস্তানের পক্ষে ছিল দুঃসাধ্য। যদিও যোদ্ধা জাতি তারা। শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে চায়। সেই লড়াই অকালেই শেষ হয়ে গেলো স্পিনারদের ঘূর্ণি আর তাসকিন-মাশরাফির পেস তোপে পড়ে। মাত্র ৩৩.৫ ওভার খেলে ১৩৮ রানেই অলআউট হয়ে গেলো আসগর স্টানিকজাইয়ের দল।
আট বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মোশাররফ হোসেন রুবেল নিজেকে ছিনিয়েছেন নতুন করে। ৮ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। তাসকিন আহমেদ ৩১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। মাশরাফি, শফিউল এবং মোসাদ্দেক হোসেন নিলেন ১টি করে উইকেট।
তৃতীয় ওয়ানতে মাঠে নামার আগেই বেশ হুমকি ছেড়েছিল আফগানরা। প্রথমবারেরমত কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতবে তারা। কিন্তু জয়ের জন্য ২৮০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই তাদের দৈন্যদশা ফুটে উঠতে শুরু করে।
ইনিংসের শুরুতেই বড় ধাক্কাটি খায় তারা। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে সরাসরি বোল্ড করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। পরের বলেই হা হড়েকে মাটিতে পড়ে যান মাশরাফি। সবার মধ্যেই আতঙ্ক ভর করেছিল, এই বুঝি বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে গেলেন আবার মাশরাফি; কিন্তু সবাইকে আশ্বস্ত করে আবারও বোলিং করতে উঠে দাঁড়ান ক্যাপ্টেন মাশরাফি।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই আফগান ইনিংসে আঘাতটি হানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার করা গুড লেন্থের বলটি জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে যান শাহজাদ। কিন্তু ব্যাট আর প্যাডের মাঝে রাখেন বিশাল একটি গ্যাপ। সুতরাং, বলটি ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানলো স্টাম্পে।
আফগানদের দলীয় ৫ রানে পড়লো প্রথম উইকেট। শাহজাদ ৭ বল খেলে ফেরেন শূন্য রানে। এরপর অবশ্য নওরোজ মোঙ্গল আর রহমত শাহ মিলে বিপর্যয় কাটানোর ইঙ্গিত দিযে বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করেন। দু’জন মিলে গড়ে ফেলেন ৪৭ রানের জুটিও।
এরপরই আট বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মোশাররফ হোসেন রুবেলের ঘূর্ণি ফাঁদ। নওরোজ মোঙ্গলকে ফেলেন লেগবিফোরের ফাঁদে। এরপর তার বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাট তুলে দেন হাশমতুল্লাহ শহিদি। ৫২ রানে বসিয়ে রেখেই দুই উইকেট তুলে নেন রুবেল হাশমতুল্লাহর আউটের পর আফগান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাই হলেন দুর্ভাগ্যের শিকার। ১৭তম ওভারে রহমত শাহের সঙ্গে একটি দ্রুত রান তুলতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের সরাসরি থ্রোতে হলেন রানআউট।
এরপর অবশ্য রহমত শাহ আর সামিউল্লাহ সেনওয়ারি মিলে গড়েন ২৮ রানের জুটি। বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করছিল যখন আফগানরা, তখন তাসকিন আহমেদকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মাশরাফি। জুটিটা ভাঙেন তাসকিনই।
তার একটি বাউন্সারে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগান সেনওয়ারি। বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের হাতে। বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিচ্ছিলেন রহমত শাহ। অবশেষে তাকেও ফেরালেন তাসকিন। তার বলে খেলতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে দেন রহমত শাহ। ক্যাচটি তালুবন্দী করেন অতিরিক্ত ফিল্ডার নাসির হোসেন। ৭৩ বলে ৩৬ রান করে আউট হন রহমত শাহ।
আফগানদের অন্যতম ভরসার প্রতীক মোহাম্মদ নবীকে রিটার্ন ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠালেন মোশাররফ রুবেল। ১০ বলে মাত্র ৩ রান করেন নবি। এরপর নজিবুল্লাহ জাদরান আর রশিদ খান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। ৪৩ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে রানআউট হয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরে যান রশিদ খান।
মোসাদ্দেকের বলে অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে নজিবুল্লাহ জাদরানকে প্যাভিলিয়নে ফেরান সাব্বির রহমান। শেষ পর্যন্ত দৌলত জাদরানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শফিউল ইসলাম। আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান রহমত শাহের। ৩৩ রান করেন নওরোজ মোঙ্গল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ : ২৭৯/৮, ৫০ ওভার (তামিম ইকবাল ১১৮, সৌম্য সরকার ১১, সাব্বির রাহমান ৬৫, সাকিব আল হাসান ১৭, মুশফিকুর রহীম ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩২*, মোসাদ্দেক হোসেন ৪, মোশাররফ হোসেন রুবেল ৪, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২, শফিউল ইসলাম ২*; রশিদ খান ২/৩৯, মোহাম্মদ নবি ২/৪১, মিরওয়াইজ আশরাফ ২/৪৩, দৌলত জাদরান ১/৫৮, রহমত শাহ ১/৫৯)।
আফগানিস্তান : ১৩৮/১০, ৩৩.৫ ওভার (মোহাম্মদ শাহজাদ ০, নওরোজ মোঙ্গল ৩৩, রহমত শাহ ৩৬, হাশমতুল্লাহ ০, আসগর স্টানিকজাই ১, সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ১৩, মোহাম্মদ নবি ৩, নজিবুল্লাহ জাদরান ২৬, রশিদ খান ১৭, মিরওয়াইজ আশরাফ ৪*, দৌলত জাদরান ০; মোশাররফ রুবেল ৩/২৪, তাসকিন আহমেদ ২/৩১, মোসাদ্দেক ১/৫, মাশরাফি ১/১৫, শফিউল ১/২৮)।
ফল : বাংলাদেশ ১৪১ রানে জয়ী।
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল। সিরিজ সেরা: তামিম ইকবাল।
আইএইচএস/আরআইপি