আফগানদের ২৮০ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ
যে স্কোরটা নিশ্চিত ৩০০ প্লাস হওয়ার কথা। সেটাই কি না হলো শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৭৯। তবুও এটা লড়াকু স্কোর। আফগানদের বিপক্ষে এবার বোলারদের লড়াই। পরিকল্পনামতো সব কিছু ঠিক-ঠাক থাকলে জয়টা সহজেই হয়তো ধরা দেবে মাশরাফিদের হাতে।
তামিম ইকবাল আর সাব্বির রহমানের ১৪০ রানের জুটিটা অনেক বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। সাব্বিরের ৬৫ আর তামিমের ১১৮ রানের বড় ইনিংসের ওপর ভর করে সহজেই স্কোরটা ৩০০ পার করার মত ছিল।
কিন্তু শেষ ১০ ওভারে আফগানদের টাইট বোলিং আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় রানটা খুব বেশিদুর এগুলো না। থেমে যেতে হলো ৮ উইকেটে ২৭৯ রানের মধ্যে। তবে এটা স্বস্তির যে, আফগানদের বিপক্ষে ৫ম ম্যাচে এসে এই প্রথম অলআউট হলো না বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তামিমের সেঞ্চুরি। অবশেষে এসে সেঞ্চুরির আক্ষেপটা ঘোচালেন তিনি। ১২ ইনিংস পর এসে ক্যারিয়ারে সপ্তম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল।
সেঞ্চুরি করার পর চেষ্টা করেছিলেন ঝড় তুলে যতটুকু পারা যায় বাংলাদেশের ইনিংসটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। টানা তিনটি চার এবং ছক্কা মেরে সে মানসিকতার বহিঃপ্রকাশও ঘটিয়েছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আউটই হয়ে গেলেন তিনি। ১১৮ বলে আউট হলেন ১১৮ রান করে।
তামিম আউট হওয়ার পরই শুরু হলো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের তথৈবচ অবস্থা। একের পর এক উইকেট হারাতে শুরু করে টাইগাররা।
তামিম আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহীম। জুটি বাধেন সাকিবের সঙ্গে। তবে জুটিটা খুব বেশি বড় হলো না। কেন যেন খুব সংগ্রাম করতে হচ্ছিল সাকিবকে। ৩৫ বল খেলে তিনি ১৭ রান করলেন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন।
সাকিবের পর আউট হলেন মুশফিকুর রহীম। ১৩ বল খেলে ১২ রান করার পর লেগ স্পিনার রশিদ খানের বলে লেগবিফোর আউট হয়ে গেলেন তিনি।
এরপর জুটি বাধেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মোসাদ্দেক হোসেন; কিন্তু দুর্ভাগ্য। ৪ বলে ৪ রান করার পর রশিদ খানের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন মোসাদ্দেক। আফগান স্পিনাররাও বেশ ভালো টার্ন পাচ্ছিলেন এ সময়। বিশেষ করে রশিদ খানকে খেলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। যে কারণে মোশাররফ রুবেল মাঠে নেমে কয়েকটি বিগ শট খেলার চেষ্টা করেও পারেননি। আউট হলেন ছক্কা মারতে গিয়ে।
মাশরাফি এসে যে থিতু হবেন তারও কোন সুযোগ ছিল না যেন। মিরওয়াইজ আশরাফের বলে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। ধরেন নওরোজ মোঙ্গল। শেষ দিকে শফিউলকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ হালকা একটা ঝড় তোলেন। যে কারণে রান ২৮০-এর কোঠায় গিয়ে ঠেকে। ২২ বলে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সৌম্য সরকারকে হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। তবে তিন নম্বরে সাব্বির রহমানকে ব্যাটিংয়ে ফিরিয়ে এনে সাফল্য পেতে শুরু করে টিম বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি গড়ে আফগানদের বিপক্ষে বেশ সাবলিল ব্যাটিং করেন সাব্বির রহমান। এই দুই টপ অর্ডারের ব্যাটে ভর করে বড় ইনিংস গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে টাইগাররা।
সাব্বির রহমানকে কেন তিন নম্বরে খেলানো হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেকেরেই। ভক্তদের দাবি, তাকে তার প্রিয় স্থান তিন নম্বরে তুলে এনে ব্যাট করানো হোক। তাতে বাংলাদেশের চেহারা ফিরলেও ফিরতে পারে।
অবশেষে টিম ম্যানেজমেন্ট সিরিজ জয়ের এবং একই সঙ্গে শততম জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনলো এবং সাব্বিরকে নামানো হলো তিন নম্বরে। তামিমের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৪০ রানের কার্যকরি একটি জুটি গড়েন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, সৌম্যর আউট হওয়ার পর বিপর্যয়ের মুখে পড়তে দিলেন না দলকে।
৬৭ বলে শেষ পর্যন্ত সাব্বির গড়লেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরির পর তিনিও ঝড় তুলতে যান এবং ৭৯ বলে করে ফেলেন ৬৫ রান। এরপর রহমত শাহর ঘূর্ণি বলে ক্যাচ তুলে দেন নওরোজ মঙ্গলের হাতে।
সাব্বির আউট হওয়ার পর উইকেটে নামেন সাকিব আল হাসান। তামিমের সঙ্গে জুটি বাধেন তিনি। গড়েন ৪৯ রানের এক জুটি। এরই মধ্যে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন তামিম ইকবাল। এই ড্যাশিং ওপেনার আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মুশফিকুর রহীম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ : ২৭৯/৮, ৫০ ওভার (তামিম ইকবাল ১১৮, সৌম্য সরকার ১১, সাব্বির রাহমান ৬৫, সাকিব আল হাসান ১৭, মুশফিকুর রহীম ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩২*, মোসাদ্দেক হোসেন ৪, মোশাররফ হোসেন রুবেল ৪, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২, শফিউল ইসলাম ২*; রশিদ খান ২/৩৯, মোহাম্মদ নবি ২/৪১, মিরওয়াইজ আশরাফ ২/৪৩, দৌলত জাদরান ১/৫৮, রহমত শাহ ১/৫৯)।
আইএইচএস/আরআইপি