অনেক ভেবেই ৪৭তম ওভারে সাকিবকে বোলিংয়ে এনেছিলাম : মাশরাফি
সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদের ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্সের প্রশংসা সবার মুখে মুখে। অধিনায়ক মাশরফি বিন মর্তুজাও পিছিয়ে নেই। তার বন্দনাও হচ্ছে চারদিকে। তার নেতৃত্বও হচ্ছে প্রশংসিত।
অনেকেই বলছেন, আফগানিস্তানের সাথে হারা ম্যাচ জেতার পেছনে সাকিব-তাসকিনের বোলিং কার্যকরিতাই শুধু নয়, অধিনায়ক মাশরাফির ভূমিকাও কম নয়। আফগানরা যখন সামনের পায়ে তখনো সাহস, উদ্যম না হারিয়ে ঠান্ডা মাথায় সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফল্য ত্বরান্বিত করেছেন টাইগার ক্যাপ্টেন। ৪৭ নম্বর ওভারে সাকিব দারুণ বল করে আফগানদের ওভার পিছু রান তোলার গতি বাড়িয়ে চাপে ফেলে দিয়েছেন এমন কথা সবাই বলছেন।
কিন্তু ম্যাচের ঐ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাকিবের হাতে বল তুলে দেয়ার সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। সাফল্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হবার স্বীকৃতির দিনে এক বিরাট অগ্নী পরীক্ষায় উত্তীর্ন চিত্রা নদীর পাড়ের এ সাহসী যুবা।
কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি যে একটা খুব বড় কাজ করে ফেলেছেন, প্রয়োজনের সময় তার নেয়া সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই জয় ধরা দিয়েছে এমন ভাবার মানুষ মাশরাফি নন। নিজের সিদ্ধান্তর প্রশংসা বহুদূরে, জাগো নিউজের সাথে সোমবার রাতে দীর্ঘ আলাপচারিতায় একবারের জন্য নিজের কথা বলেননি। ভাবটা এমন, আমি অধিনায়ক। মাঠে দল জেতানোই আমার কাজ। সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে দলকে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার কাঁধে নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব। ‘শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি এর কৃতিত্ব পুরো দলের। সবাই জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছে বলেই শেষ পর্যন্ত ফল আমাদের অনুকুলে এসেছে।’
ঠিক আছে, তা নয় মানা গেল। কিন্তু দলে তো আরও বোলার ছিল। তাদের কাউকে ব্যবহার করেও দেখতে পারতেন। কিংবা সাকিবকে শেষ ওভার না হয় ৪৯ নম্বর ওভারেও বোলিংয়ে আনা যেত। ৪৭ নম্বর ওভারে কেন ?
এসব প্রশ্নের জবাব দিতে এক মুহূর্ত বিলম্ব হয়নি। চট জলদি ব্যাখ্যা দাড় করালেন। বোঝা ঘেল, হুট করে কিংবা আবেগতাড়িৎ নয়, অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই সাকিবের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। সে বিষয়ের মাশরাফির ব্যাখ্যটা এমন, `এটা ঠিক রহমত শাহ আর হাসমতউল্লাহর জুটি জমে গিয়েছিল। আমরা খানিক ব্যাকফুটেই চলে গিয়েছিলাম। তবে বিশ্বাস করেন, জিতবো, মনে এমন বিশ্বাস পুরোপুরি না থাকলেও আমার একটা ধারনা ছিল, যে খেলায় ফাইট হবে। ম্যাচ শেষ দিকে ক্লোজ হবে। তাই আমি সাকিবের ১ ওভার রেখে দিয়েছিলাম। এর পিছনে কারণ একটাই। তাকে এমন সময় ব্যবহার করাবো যখন হয় ম্যাচ আমাদের দিকে ঝুঁকেবে। না হয় আফগানদের হাতে চলে যাবে। তা ভেবে ৪৭ নম্বর ওভারে সাকিবের হাতে বল তুলে দেয়া। তখন তাদের ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। সাকিব অসাধারণ বোলিং করে মাত্র ১ রান দেয়ায় আফগানদের ওভার পিছু রান তোলার টার্গেট বেড়ে যায়। আর আমরাও বাড়তি সাহস পাই। উদ্যম বেড়ে যায়।`
তবে কি ঐ একটি ওভারই টার্নিং পয়েন্ট? মাশরাফির অবশ্য তা মনে হয় না। আমি কোন একটি নির্দিষ্ট ওভার বা উইকেটের পতনকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ভাবতে চাই না। ভাবা ঠিকও হবে না। হ্যা এটা ঠিক ৪৭ নম্বর ওভারে সাকিবের ১ রান দেয়াটা অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তবে তার আগে সাকিব যে রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহর ১৪৪ রানের লম্বা জুটি ভাঙ্গে, সেটার গুরুত্বও কম নয়। আর শেষ দিকে ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওভারে রুবেল ও তাসকিনের বোলিংয়ের কথা না বললেই নয়। ম্যাচের অতি গুরত্বপূর্ণ সময়ে তারা দুজনই দুর্দান্ত বোলিং করেছে।
কেউ কেউ ফোরন কাটছেন, ‘আইসিসির সহযোগি সদস্য দেশ আফগানিস্তানের সাথে খুরিয়ে ৭ রানের জয়, এর আর এমন কি? তা নিয়ে হৈ চৈ করার কিইবা আছে? কিন্তু টাইগার অধিনায়ক সেভাবে দেখতে নারাজ। তার কথা, `কার বিপক্ষে জিতেছি, তার চেয়ে কিভাবে, কোন অবস্থা থেকে কেমন করে জিতেছি সেটা খুটিয়ে দেখা উচিৎ। আমি মনে করি অনেক বড় বড় দলকে হারানোর চেয়েও রোববার শেরে বাংলায় আফগানিস্তানের সাথে আমরা যে অবস্থায় পড়ে যেভাবে জয়ের বেশে মাঠ ছেড়েছি, তা অনেক বড়। আমার কাছে অনেক বড় দলের সঙ্গে জয়ের চেয়েও বড়। কারণ এভাবে অর্জিত সাফল্য অনেক দিন মনে থাকে। একটা ইতিবাচক উদাহরন হয়ে থাকে। মনে সাহস সঞ্চারিত হয়। আত্ববিশ্বাস বাড়ে। নিজ সামর্থের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস জন্মে। মনে হয়, প্রতিপক্ষ যেই হোক, আর অবস্থা যত প্রতিকুলই থাকুক না কেন, আমরা পরবো। আমরা জিতবো। কাজেই এমন ধরনের জয়েরও দরকার আছে।`
জয়ের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে অন্যরকম পুলক জাগলেও মাশরাফি পারফরমেন্সে চরম অসন্তুষ্ট।
তার অনুভব, `সত্যি বলতে কি আমরা নিজেদের সামর্থের অর্ধেকও খেলতে পারিনি। ব্যাটিংটা তবু সামর্থের ৫০ ভাগ হয়েছে। কিন্তু বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের মান ছিল সামর্থের ৫০ ভাগেরও কম।’
এতটা খারাপ অবস্থার কারণ তার জানা। তাই চিন্তিত নন। তার ভাষায় `বিচলিতও হবারও কিছু নেই। কেন আমরা নিজেদের সামর্থের সেরাটা উপহার দিতে পারিনি, কিংবা সেরার ধারের কাছ দিয়েই যাওয়া সম্ভব হয়নি, তা আমার ভালই জানা। এর পিছনে কারণ একটাই, দীর্ঘ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা। যত অনুশীলনই হোক না কেন, অনেক দিন পর ম্যাচ খেলতে নামলে এমনই হয়। আপনি যখন নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকবেন, তখন এমন হবে না। বেশ লম্বা সময় পর খেললে খাপছাড়া লাগে।
আমাদের সবাইকেও কেমন যেন খাপছাড়া খাপছাড়া লাগছিল। সাধারণত নিয়মিত খেলার ভিতর থাকলে চার্জড আপ লাগে।
অনেক কিছু করার তাগিদ থাকে ভিতরে। নিজ থেকে বাড়তি কিছু করার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু অনেক দিন পর খেলতে নামলে তা থাকে না। আফগান্তিানের সাথে প্রথম দিন আমাদের ভিতর অনেক কিছুই আসেনি।`
এআরবি/এমআর/পিআর