হাথুরু-ওয়ালশদের নিয়ে মিরপুরে যেন চাঁদের হাট
ঈদের আগে বাংলাদেশের পেস বোলারদের দায়িত্ব নিতে যখন ঢাকায় এসেছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ, তখন উপস্থিত ছিলেন না প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ওয়ালশ আসার আগেরদিনই তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়।
ওয়ালশ আসার একদিন আগেই কেন হাথুরু চলে যাবেন, ইচ্ছা করলে কী তিনি আরও একদিন পরে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারতেন না! এমন প্রশ্ন উঠেছিল তখন ঢাকার ক্রিকেটপাড়ায়। শঙ্কা জেগেছিল ওয়ালশের যে বিশালতা, তাতে খেই হারিয়ে ফেলবেন না তো হাথুরু?
জাগো নিউজেই স্পেশাল রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিলো এই শঙ্কা নিয়ে, ‘ওয়ালশের বিশালতায় হারিয়ে যাবেন না তো হাথুরু?’ যদিও কোর্টনি ওয়ালশ বাংলাদেশের মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে এই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘হাথুরুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।’ওয়ালশের এই কথায় শঙ্কা দুরে ঠেলে দিয়ে সবাই একটি সুখি পরিবারেরই চিত্র অঙ্কন করে নিয়েছিল তখন।
অবশেষে সেই সুখি পরিবারের দেখা মিলছে রোববার থেকে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে আগেই ঢাকায় ফিরেছেন কোচিং স্টাফরা। হাথুরুসিংহে, কোর্টনি ওয়ালশ, রিচার্ড হ্যালসল, মারিও ভিল্লাভারায়ন। সঙ্গে যোগ হয়েছেন নতুন ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাভিরা।
সুতরাং, বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ পরিবারে এখন যেন চাঁদের হাট। শুধু একটি অপূর্ণতা বলা চলে। সেটি হচ্ছে কোন স্পিন কোচ নেই এখন। শ্রীলংকান রুয়ান কালপাগের নাটকীয়ভাবে সরে যাওয়ার পর এই জায়গাটি এখনও পূরণ করতে পারেনি বিসিবি।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফদের দিকে তাকালে যে কারোরই ঈর্ষা হওয়ার কথা। প্রথান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এক সময় ছিলেন অচেনা-অজানা এক ব্যক্তি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যখন তাকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল, তখন তা নিয়ে অনেকেই নাক সিটকেছিলেন; কিন্তু গত দু’বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যে তার যে অবদান, সেটা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তার নামও। সুতরাং, তিনিও এখন হাই প্রোফাইল কোচ।
কোর্টনি ওয়ালশের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হলো মাত্র। এর আগে কোচিং ক্যারিয়ার বলতে তার তেমন কোন অভিজ্ঞতাই নেই; কিন্তু তিনি যে মাপের ক্রিকেটার, সেটাই অনেক বিশাল। ক্যারিবীয় স্বর্ণযুগের শেষ প্রতিনিধিও বলা চলে। তার বোলিংয়ের কথা চিন্তা করলে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানেরও রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতো। টানা ১৭ বছর ইনজুরিমুক্তভাবে ১৩২টি টেস্ট খেলেছেন। একজন পেসারের পক্ষে যা রীতিমত অবিশ্বাস্য। উইকেট নিয়েছেন ৫১৯টি। পেস বোলারদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ক্রিকেট ক্যারিয়ারই তাকে হাই প্রোফাইলে পরিণত করেছে।
থিলান সামারাভিরা শ্রীলংকার হয়ে কিছুদিন আগেও টেস্ট খেলেছেন। খুব নামকরা ক্রিকেটার হয়তো ছিলেন না। তবে অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। সেখানেই কোচিংয়ে হাতেখড়ি এবং কিছুদিন আগেও অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। তামিম-সাকিবদের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে তার নিয়োগ কোনভাবেই ছোট করে দেখার নয়।
বাকি দু’জন মারিও ভিল্লাভারায়ন (ট্রেনার) এবং রিচার্ড হ্যালসল (ফিল্ডিং কোচ)। একজন শ্রীলংকান এবং অন্যজন ইংলিশ। খুব বড় কোন নাম নন তারা। তবে, হাথুরুসিংহের সহকারী হিসেবে সত্যিই যথেষ্ট সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তারা। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতিতে তাদের অবদানও কোনভাবে অস্বীকার করার মত নয়।
সব মিলিয়ে বিদেশিদের নিয়ে যে কোচিং টিম তৈরী করেছে বাংলাদেশ, তা রীতিমত ঈর্ষনীয় হয়ে থাকবে অন্য দলগুলোর কাছে। হাথুরু, ওয়ালশ, সামারাভিরা, হ্যালসল আর ভিল্লাভারায়নদের নিয়ে বাংলাদেশের কোচিং টিমকে অবশ্যই চাঁদের হাট বলা যায়।
ঈদের ছুটি কাটিয়ে রোববার থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। তখনই দেখা গেছে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেসহ তার দলের সবাইকে। মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের আরও একধাপ এগিয়ে নিতে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে, সন্দেহ নেই।
আইএইচএস/এবিএস