রেকর্ডের কথা মনেই রাখেননি বিদ্যুৎ
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম একজন নক্ষত্র। তবে ক্রিকেটটা ছেড়েছিলেন খুব অল্প বয়সে। মাত্র ২৮ বছর বয়সে অভিমান করে খেলা থেকে সরে গিয়েছিলেন এ কীর্তিমান ক্রিকেটার। এরপর থেকেই দূরে সরে আছেন তিনি। তবে কক্সবাজারে মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালে দেখা মিললো তার।
একসময়ে যাদের সঙ্গে মাঠ দাবড়ে বেড়িয়েছেন তাদের ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি বিদ্যুৎ। কক্সবাজারেই তিনি ধরা পড়লেন জাগোনিউজের ক্রীড়া প্রতিবেদক রামিন তালুকদারের সামনে। বন্ধু অপির সঙ্গে করা ১৭০ রানের জুটিটি যে আজও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে সেরা- নিজের গড়া কীর্তির কথা বেমালুম ভুলে গেছেন এ অভিমানী ক্রিকেটার। এছাড়াও ক্রিকেট জীবনের কিছু মধুর স্মৃতি, মান-অভিমান উঠে আসলো জাগো নিউজের সঙ্গে নানা কথায়। তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য...
প্রশ্ন: কেনিয়ার বিপক্ষে ৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন; কিন্তু সেঞ্চুরি পাননি। মনে পড়ে?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ: মেরিল কাপে ৯৫ রানের ইনিংসটি আমার অসাধারণ একটি ইনিংস ছিল। সেঞ্চুরিটা হয়নি, ব্যাড লাক। এটা চিন্তা করিনি যে সেঞ্চুরি হলে আমার রেকর্ড হবে। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সুপার ব্যাটিং করেছিলাম। সেট ছিলাম। হয়ত সেঞ্চুরিটা হয়নি। ক্রিকেট মাঠে ৫ রান বড় কোনো বিষয় নয়। এ রকম অনেক হইছে। আমার মাথায় ছিল না যে সেঞ্চুরি হলে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যাবো। আফসোস করার কিছু নেই তাই।
প্রশ্ন: ওয়ানডেতে ওই ইনিংসটি আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ইনিংস। এটাই কি ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং ছিল?
বিদ্যুৎ: না, আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ একবার ওয়ানডে খেলতে এসেছিল। লারা অধিনায়ক ছিল। দুটা ওয়ানডে। ৪৫ আর ৪৭ কিংবা ৪৮ এর মত করেছিলাম। ওই ম্যাচটিতেই আমার জীবনের সেরা ব্যাটিং করেছিলাম। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার টিম। যেমন লারা, ওয়ালশ, অ্যামব্রোস ছিল। এত পিটাইছিলাম ওদের। শট খেলছিলাম। মাস্টার ব্লাস্টার। ওটাই আমার সেরা ইনিংস।
প্রশ্ন: ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন, একটুও কি আফসোস হয় না? হয়তো মেহরাব হোসেন অপির জায়গায় আজকে আপনার নাম আসতো। বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতেন!
বিদ্যুৎ: আউট হওয়ার পর আমি ওরকম চিন্তা করিনি যে সেঞ্চুরিটি মিস করেছি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সবাই ড্রেসিং রুমের সামনে দাঁড়িয়েছিল। তখনও জানতাম না কি হইছে। এরকম তো অনেক আগেই হয়েছে। সবাই বলছিল,বিদ্যুৎ ৫টা রান করতে পারলি না। প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতি। তখন আমার মাথায় এলো আসলেও তো ৫ রান! কি আর করা উঠে এলাম। এসে পড়ছিলাম। সিঁড়ি দিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকার সময় দেখলাম গর্ডন গ্রিনিজ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে খুব আদর করত। আমার ব্যাটিং খুব পছন্দ করত। ও কখনোই আমাকে এত কিছু শেখাতো না। ব্যাটিংয়ের ভুল শুধু ধরিয়ে দিত। এই আর কিছু না। বলত,তোর মত তুই ব্যাটিং কর। তারপরে ড্রেসিং রুমে ঢুকলাম, সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে একটা লাথি! যেনতেন লাথি না। বুঝতেই তো পারছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দানব! তাকিয়ে দেখি গর্ডন গ্রিনিজ। সঙ্গে সঙ্গে বললো,আর পাঁচ রান হলে তো সেঞ্চুরিটি হয়ে যায়। তখনও মনে হয়নি আমি কি মিস করেছি। এখনও মনে হয় না আমি কি হারিয়েছি। তারপরে অপি সেঞ্চুরি করলো। আমি ৬৮ করলাম।
প্রশ্ন: আপনি করতে না পারলেও তার পরেই সেঞ্চুরি করেন অপি। বন্ধু অপি নাকি আপনার সেঞ্চুরি চায়নি, তো আপনি কি তার সেঞ্চুরিতে খুশি হয়েছিলেন?
বিদ্যুৎ: যতদিন ক্রিকেট খেলেছি ততদিন অপির সঙ্গে আমার উঠা-বসা। অবশ্যই ও সেঞ্চুরি করাতে আমি খুশি হয়েছি। অপির বাবার খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিটা উনার ছেলেই করুক। এ কারণেই ও চায়নি। আর এ কথাটা ও তখন আমাকে বলেওনি। একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার আর অপির বর্তমান সম্পর্ক সম্পর্কে যদি একটু বলতেন?
বিদ্যুৎ: অপি আর আমি দুজনই খুব ভালো বন্ধু। জাতীয় দল, ক্যাম্প, ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই একসঙ্গে খেলেছি তখন থেকেই আমরা দুজন একসঙ্গে থাকতাম। এই যে দেখেন এখানে (মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল) এসেছি, এখানেও দুজন এক রুমে উঠেছি। দুজন দুজনের সঙ্গ উপভোগ করতাম। আগের মত এখনও করি।
প্রশ্ন: যে ম্যাচে অপি সেঞ্চুরি করলেন, সে ম্যাচে আপনাদের দুই জনের একটা রেকর্ড হয়। যেটা আজও অমলিন। ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ১৭০ রানের দারুণ সে জুটিটি এখনও সর্বোচ্চ। এটা ভাবতে কেমন লাগে?
বিদ্যুৎ: ১৭০ রানের জুটি এখানো ভাঙেনি! কি বলেন! আরে না ভেঙে গেছে। সেই কত বছর আগের কথা। সত্যিই আছে! এখনকার খেলা তো আরও এগ্রেসিভ। ভেঙে যাওয়া কথা। উচিতও ছিল। কারণ এত ম্যাচ খেলছে, এত আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তাতে ভেঙে যাওয়া উচিত ছিল। হ্যাঁ ওই ম্যাচে আমরা দারুণ ব্যাটিং করেছিলাম। অপির সেঞ্চুরি ও আমার ৬৮ রান। দূর্দান্ত কিছু শট খেলেছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি যখন ব্যাটিং করতেন তখন বেশ আক্রমণাত্মক খেলতেন। আরেকটু থিতু হয়ে খেললে হয়তো আরও বড় বড় ইনিংস দেখা যেতেও পারতো। আপনাকে এ নিয়ে কখনো কেউ কিছু বলতো না?
বিদ্যুৎ: আমি ক্রিকেট খেলেছি শুধুমাত্র উপভোগ করার জন্যে। কখনো চিন্তা করিনি যে, আমার এখান থেকে আয় করতে হবে। কারণ এখান থেকে আয়ের কিছু নেই। ক্রিকেটাকেই উপভোগ করতাম। আমার নিজের মত করে খেলতে পছন্দ করতাম। আমাকে অনেকেই বলত, অনেক চাপ দিত যে, ক্রিজে থেকে রান করতে; কিন্তু আমি কখনোই কারও কথা শুনিনি। কারণ একটাই- আমি আমার নিজের জিনিসটাই আগে শুনি। কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজারের কথা আমি খুবই কম শুনতাম। আমার নিজের স্টাইল ধরে রাখতাম। আউট হয়ে গেলে আউট। একটা পজিশনে গেলে এমনিতেই একটা ইনিংস বড় হয়ে যায়। ধরেন আমাদের লক্ষ্য ৩০০। আমি প্রথম দশ ওভারেই যদি কিছু করতে না পারি তাহলে তো কোনোভাবেই এ রান তাড়া করত পারব না। দশ ওভারে আমার পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে হবে। ওভাবেই খেলতাম।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ব্যক্তিগতভাবে আপনি অনেকের সঙ্গে ওপেনিং করেছেন। কার সঙ্গে ব্যাটিং করতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন?
বিদ্যুৎ: অপি আমার সঙ্গে ছিল, সবাই জানত আমরা পাওয়ার হিটিং করতাম। কোনো চাপ আমাদের থাকত না। একদিকে হয়ত আমি খানিকটা চাপে থাকলে অপি সেটা কমিয়ে দিত। আবার অপি খেলতে না পারলে ওটা আমি পুষিয়ে দিতাম। দুইজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটাও ভালো ছিল। প্রেসার নিতাম না। মারার বলে বোলারকে কোনো মাফ দিতাম না। দুজন ব্যাটিংয়ে থাকলে দলের প্রেসারও কমে যেত।
প্রশ্ন: অপির সঙ্গে আপনার দারুণ জমতো। বিশেষ করে দুই প্রান্ত থেকেই আপনারা আক্রমণে যেতেন। দুজনই অনেক বড় বড় ইনিংস খেলেছেন। তাই অপির সঙ্গে ওপেনিং করতে চাইতেন, অন্য কাউকে বিশেষ করে গোল্লার সঙ্গে খেলতে চাইতেন না।
বিদ্যুৎ: এটা সবার মুখের কথা। গোল্লা আমাদের সঙ্গে অনেক দিন খেলছে। পছন্দ করতাম না একটু স্লো খেলতো আর কি। আমরা সেটা পুষিয়ে দিতাম। অসুবিধা ছিল আবার ছিল না। পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক কিছু নির্ভর করত। এক দিক থেকে যদি ৫/৬ বল রান না হত, তাহলে আমাকে অন্যদিক থেকে বাউন্ডারি মারতেই হত। অটোমেটিক চাপ চলে আসে। ও একটু স্লো ছিল। সেটআপ হতে একটু ভালো সময় লাগত। ৫-৬ ওভার পর ও স্বাভাবিক হয়ে যেত। তখন আমার ঠিক হয়ে যেত; কিন্তু ওই ৫-৬ ওভারে আমরা সার্কেলের সুবিধা কাজে লাগাতে পারতাম না। আমি চাইতাম চাপটা আগে নিয়ে পরের দিকে রিলাক্সে খেলার জন্যে। আমার একটা মনে থাকত। যেদিন রান করব সেদিনই প্রথমে কাভার করে নিব। দলকে একটা ভালো পজিশনে দিতে পারতাম। এজন্য শুরুর দিকে উঠিয়ে উঠিয়ে খেলতাম।
প্রশ্ন: একটু বেশি আগেই খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। ইচ্ছে করলে আরও বেশ কিছুদিন দলে থাকতে পারতেন। এটাকি কোন অভিমান?
বিদ্যুৎ: আসলে পিছনে আর যেতে চাই না। আমার সঙ্গে সবার এখন অনেক ভালো সম্পর্ক। ২০০১ সালে টেস্ট খেলার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি আহামরি খারাপ খেলিনি যে আমাকে বাইরে থাকতে হবে। আমাকে সাপোর্ট করলে ২০০৪ সালের পর আরও খেলতে পারতাম। ঝামেলা দেখাত, ফিটনেস নিয়ে কথা বলতো। এগুলোর কারণেই শেষ হয়ে যাই মূলত। তখন ফারুক ভাই নির্বাচক কাম ম্যানেজার, সুমন ভাই অধিনায়ক।
প্রশ্ন: কিন্তু আমরা শুনেছিলাম আপনি অনেকটা অভিমান করেই জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন। একটু যদি ঘটনাটা বলতেন?
বিদ্যুৎ: জাতীয় লিগের খেলা হল কুমিল্লায়। চট্টগ্রামের বিপক্ষে আমি সেঞ্চুরি করলাম। আমাকে কুমিল্লা থেকে সরাসরি বিকেএসপিতে ক্যাম্পে নিয়ে আসল। তখন দল অস্ট্রেলিয়ায় যাবে। আসলাম বিকেএসপিতে; কিন্তু বিকেএসপিতে গিয়ে শুনি যে ‘এ’ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে । আমাকে যাওয়ার জন্যে। দীপু রায় কোচ ছিল। বলা হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর কর। ওখান থেকে পরবর্তীতে আবার বাংলাদেশ দলে নিয়ে আসব। আমি বললাম ‘এ’ দলে যাবো না। সরাসরি বলছিলাম,জাতীয় দলে ঢোকার মত পারফরম্যান্স আছে। ‘এ’ দলে যাবো কেন? গাড়ী নিয়ে সরাসরি চলে আসি ঢাকায়। এরপর থেকে সবার আড়ালে চলে যাই। রাগ-জেদ সবার উপরে তখন থেকেই।
প্রশ্ন: এরপর...?
বিদ্যুৎ: এরপর চিন্তা করলাম জাতীয় দলে খেলেই অবসর নেব। তারপর দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গেলাম। সেখানে আবার গিয়ে ঝামেলা হল। ওয়ানডে খেলার পর বলা হল টেস্টে নিবে না। তারপর দেশে ফিরে অবসর নিয়ে নেই। ওয়ানডেতে হাল্কা ইনজুরি ছিল। কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই সুস্থ হয়ে দলে খেলতে পারতাম; কিন্তু বয়স, ফিটনেস, পারফরম্যান্সের দোহাই দিয়ে ফারুক ভাই আমাকে আর নেয়নি। তবে শুনেছিলাম কোচ আমাকে রাখতে চেয়েছিল; কিন্তু ফারুক ভাই চায়নি। এরপর দেশে ফিরে অবসরের চিঠি বোর্ডকে দিয়ে দেই।
প্রশ্ন: ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। তখন সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম-উল হক, ওয়াসিম আকরাম, সাকলায়েন মুস্তাক ও ওয়াকার ইউনুসের মত খেলোয়াড়রা ছিলেন। সবাই বলে, সেই ম্যাচের জন্যই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাসের আবেদন করতে পেরেছিলাম...।
বিদ্যুৎ: না আমার এটা মনে হয় না। বিশ্বকাপের পর এমসিসি (মেরিলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব) বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল। বিসিবি একাদশের হয়ে নাঈমুর রহমান দূর্জয় ভাই ১২১ রান করেছিল। বাংলাদেশের হয়ে আমি দেড়শর মত (১৩৩), আমিনুল ইসলাম সেঞ্চুরি (১১৩) করেছিল। আসলে ওই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে আমরা বিশ্বকে জানাতে পারি যে, আমরা বড় খেলা খেলতে পারি। এরপর সাবের ভাই (সাবের হোসেন চৌধুরী, তৎকালিন বোর্ড প্রেসিডেন্ট) টেস্ট স্ট্যাটাস আনার জন্যে অনেক কষ্ট করেছেন। পাশাপাশি ডালমিয়াও (জগমোহন ডালমিয়া, আইসিসির সাবেক চেয়ারম্যান) বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি প্রায় দীর্ঘদিন ব্রাদার্সের হয়ে খেলেছেন। তখন অনেকে আবাহনী-মোহামেডানে খেলতে চাইতো। আর ক্রিকেটপাড়ায় এটা গুঞ্জন ছিল আবাহনী-মোহামেডানে খেললেই জাতীয় দলে সহজে খেলা যায়। তারপরও ব্রাদার্সে এতোদিন খেলেছেন বিশেষ কোন কারণ?
বিদ্যুৎ: ব্রাদার্স আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি যতটুকু পারছি সেটা করেছি। মোহামেডান, ওয়ারি, বিমানেও খেলেছি; কিন্তু ব্রাদার্স সবার থেকে আমাকে বেশি সাপোর্ট করেছে। ব্রাদাসের কী প্লেয়ার আমি ছিলাম। আমাকে ছাড়া তারা ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারত না। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সময় ভালো করেছি। ব্রাদার্স আমার লাকি টিম ছিল। আমি ছাড়তে চাইতাম না। টাকা বড় কোনো বিষয় ছিল না। তখন তো দলবদল গরম ছিল। ওরকম কিছু চিন্তা করতাম না। ভালো খেললে জাতীয় দলে খেলব। আবাহনী-মোহামেডান বড় কিছু না।
প্রশ্ন: দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলেছেন। একজন সফল ক্রিকেটার হিসেবেও পরিচিতি আছে। আপনার ছেলেকেও কি ক্রিকেটার বানাবেন?
বিদ্যুৎ: ছেলেকে (ইয়াসিন শাহরিয়ার) কী বানাব তা বলতে পারব না। তবে ক্রিকেটের দিকে কোনো মন নেই। ব্যাট-বল ধরে না। চার বছর মাত্র। হতে পারে। আবার নাও পারে। বাবার মত হতে পারে। আবার ব্যবসায়ীও হতে পারে। গাড়ি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। ব্লাডে যখন আছে তখন আসতে পারে। তবে আসলে বাবার থেকে ভালো সাপোর্ট পাবে।
প্রশ্ন: কিছুদিন আগে আপনার মেয়ের একটি গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে...।
বিদ্যুৎ: মেয়ের (শায়রা বিনতে শাহরিয়ার অহনা) অ্যালবাম (আবির্ভাব) আমি নিজে বের করছি। আমি আর আমার চাচা স্পনসর ছিলাম। পেশাদারিত্বের জন্যে না। আমরা শখে বের করেছি শুধুমাত্র নিজেরা শোনার জন্যে। অনেক শিখে, হার্ডওয়ার্ক করে। পরিবারের অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও পারফর্ম করে না। শখের বসে শিখা; কিন্তু একটা গুড কোয়ালিটির মধ্যে চলে আসছে। সুপারস্টার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
প্রশ্ন: ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কেন?
বিদ্যুৎ: গুটিয়ে নেয়নি। নারায়ণগঞ্জে আমার প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইস গ্রুপ প্রতিনিয়ত কাজ করছে, স্পনসর করছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ক্রীড়া সংস্থায় আমি দায়িত্ব পালন করেছি; কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সেই সুযোগটি আর হয়নি।
আরটি/আইএইচএস/এমএস