মাঠের বাইরে ধোনি-কোহলি অন্য লড়াই
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মাঠে একের পর এক সিরিজ হারছেন। ভারতীয় ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞরা ইতিম্যে দাবি তুলছেন, অনেক হয়েছে। এবার সীমিত ওভারের ফরম্যটেও বিরাট কোহালিকে অধিনায়ক করা হোক। এমনকি মাঠের বাইরের পৃথিবীও ভাল যাচ্ছে না ধোনির। সেখানেও তাকে লড়তে হচ্ছে কোনও এক বিরাট কোহালির সঙ্গেই!
পেপসিকো’র ঘটনাটা যেমন। দীর্ঘ এগারো বছর গাঁটছড়া অক্ষুণ্ণ থাকার পর তারা ধোনির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল। নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নিবার্চন! তাও সমাপ্ত এবং সেটা অন্য কেউ নন, বিরাট কোহালি! যে পরিবর্তন দেখার পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ক্রিকেটার ধোনির মতো ব্র্যান্ড ধোনিও কি স্লগ ওভারে ঢুকে পড়লেন? বিজ্ঞাপন বাজারে ধোনির চাহিদার গ্রাফ কি তবে নিম্নমুখী?
কেউ বলছেন, এটাই স্বাভাবিক। টেস্ট ক্রিকেট আর খেলেন না ধোনি। মানে, বছরের বেশ কিছুটা অংশ তাকে ভারতের জার্সিতে আর দেখতে পান না ক্রিকেটপ্রেমীরা। চাহিদার বাজার তো আর এক থাকতে পারে না! কেউ কেউ আবার বলছেন, একটা পেপসিকো চলে গেল মানে হইচই ফেলে দেওয়ার কোনও মানে নেই।
সংশ্লিষ্ট সংস্থা বরাবর তারুণ্যের উপর জোর দিয়ে এসেছে। বরাবর যুবসমাজকে টার্গেট করে এসেছে। তারা যে ক্রিকেট-ফর্মের শৃঙ্গে থাকা তরুণ কোহালিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করবে, এতে আর আশ্চর্য কী? কিন্তু তাই বলে যে ব্র্যান্ড ধোনি চুরমার হয়ে গেল, ভাবার কোনও কারণ নেই। তাকে শুধু টার্গেট অডিয়েন্স পাল্টাতে হবে। পরিণতদের দুনিয়ায় ঢুকতে হবে।
ব্র্যান্ড ধোনির কী হবে না হবে, সময় বলবে; কিন্তু একটা জিনিস এখনই বলে দেওয়া যায় যে, ধোনির ঘনিষ্ঠমহল পেপসিকোর এমন সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয়। কেউ কেউ দাবি করলেন যে, চুক্তি নিয়ে দু’পক্ষে মতনৈক্য হয়েছে বলেই পেপসিকোর সঙ্গে ধোনি আলাদা হয়ে গিয়েছেন। বলা হচ্ছে, মাস দেড়েক আগে শুরু হওয়া হওয়া ব্র্যান্ড ‘সেভেন’ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী হওয়া যায়।
ধোনির ম্যানেজার অরুণ পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভারতীয় মিডিয়াকে তিনি বললেন, ‘ধোনির ব্র্যান্ড ভ্যালু পড়ছে বলে আমরা মনে করি না। এটা নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। বরং ধোনির সঙ্গে যে পার্টনারশিপে সেভেন নামে যে ব্র্যান্ড এসেছে, তা ভাল করবে বলেই আমরা মনে করি।’
বিজ্ঞাপন-গুরু রাম রায়েরও মনে হচ্ছে যে, পেপসিকো চলে গেল বলে ধোনির ব্র্যান্ড ভ্যালু পড়ে যাবে, ভাবাটা ঠিক হবে না। ‘এটা একটা সিগন্যাল অবশ্যই; কিন্তু ধোনির ব্র্যান্ড ভ্যালু শেষ কোনও ভাবে বলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে ব্র্যান্ডরা হয়তো ওকে নিয়ে আবার নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে; কিন্তু ব্র্যান্ড ভ্যালু শেষ হয়ে যাবে না।’
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘বেজলাইন’-এর ডিরেক্টর রামকৃষ্ণন আবার বললেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই কোহালিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেছে পেপসিকো। পেপসি এমন একটা ব্র্যান্ড যা সব সময় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় যুবসমাজকে টার্গেট করে। শচীনও কম বয়সে পেপসির বিজ্ঞাপন করেছেন। ধোনির বয়স হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা তরুণ তারকা বিরাটকে বেছে নিয়েছে।’
তবে বিপরীতধর্মী ধারণা আছে। বিজ্ঞাপন বাজারের একটা অংশের মনে হচ্ছে, মাঠের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে ধোনির বিজ্ঞাপনী জীবনে। বিজ্ঞাপন-বিশেষজ্ঞ শৌভিক মিশ্র আনন্দবাজারকে বলছেন, ‘ফ্যান বেজ তৈরি হয় পারফরম্যান্সে। তাই পারফরম্যান্স পড়লে ফ্যান বেজেও প্রভাব পড়ে। ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতাও কমে যায়। ধোনির ক্যারিয়ারর শেষের দিকে এখন। বিরাট তো অটোমেটিক চয়েস হবেই।’
ধোনি, শচীন দু’জনের সঙ্গেই বিজ্ঞাপনী ছবি পরিচালনা করেছেন যিনি, সেই নরেন মুলতানির বক্তব্য খুব সহজ। শচীন টেন্ডুলকার, অমিতাভ বচ্চনরা ব্যতিক্রম। যাদের বয়স বাড়ে কিন্তু ভক্তদের কাছে চাহিদা পড়ে না। ব্র্যান্ড ভ্যালুও তাই থেকে যায় অটুট; কিন্তু সবাই তা নয়। সবার তা হয় না। মুলতানি শেষে যা বললেন, শুনলে ধোনি সমর্থকদের দুঃখ লাগবে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোথাও যেন খুব প্রাসঙ্গিক।
মহেন্দ্র সিং ধোনি
ব্র্যান্ড : ১০
প্রধান ব্র্যান্ড: এক্সাইড ইনশিওরেন্স, লাভা মোবাইল, ম্যাকডাওয়েলস সোডা, বুস্ট, রিভাইটাল, টিভিএস মোটরবাইক।
হাতছাড়া: পেপসি, লেস, অম্রপালি গ্রুপ, স্পার্টান (শোনা যাচ্ছে নতুন করে চুক্তি হবে), ডাবর, সনি টিভি।
ব্র্যান্ড প্রতি বছরে আয় : ৫ থেকে ৬ কোটি। প্রচারের ফি বাবদ, দিনে ১ থেকে দেড় কোটি।
বিরাট কোহলি
ব্র্যান্ড: ১৩-১৫টি
প্রধান ব্র্যান্ড : পেপসি, অ্যাডিডাস, অডি, এমআরএফ, তিসো, কোলগেট, হার্বালাইফ, ভিকস।
ব্র্যান্ড প্রতি বছরের আয় : ৬ থেকে ৮ কোটি। প্রচারের ফি: দিনে দেড় থেকে দুই কোটি।
আইএইচএস/এবিএস