ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ব্রাজিলের সূর্যস্নানের অমরত্বে চুম্বন নেইমারের

প্রকাশিত: ০৭:৩৯ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৬

এভারেস্ট জয়ের পর কি কেউ কেওকারাডংয়ের চ‚ড়ায় উঠতে মরিয়া থাকে? কিংবা সাত মহাদেশ ভ্রমণ শেষে, পাশের দেশ কি আর অতটা টানে? অথবা নোবেল জয়ের পর নিজ দেশের শ্রেষ্ঠ লেখকের শিরোপার জন্য কি আকুল থাকেন কেউ?

সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানের ভাষায়, ‘প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা।’

কিন্তু সহজ প্রশ্নের জানা উত্তরগুলো হোঁচট খায় ব্রাজিলের অলিম্পিক ফুটবল অভিযানে। পাঁচ-পাঁচটি বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে। লাতিন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কোপা আমেরিকা জয় আট বার। সেরাদের সেরা নিয়ে যে কনফেডারেশন্স কাপ, এর ট্রফিও তো পাঁচবার জেতা সারা। আবার তরুণদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছে পাঁচবার। তবু ফুটবল-পাগল ব্রাজিলিয়ানরা বুভুক্ষের মতো অপেক্ষায় ছিল অলিম্পিক ফুটবলের সোনার পদকের জন্য। প্রতীক্ষা  ফুটবল-ধরায় একমাত্র ওই অধরাকে ধরার।

নেইমারের নেতৃত্বে এবারের ব্রাজিলের অলিম্পিক স্বর্ণজয় তাই কেবলই একটি পদক নয়। এর চেয়ে ঢের বেশি কিছু।

সন্ধ্যা পেরিয়ে ততক্ষণে রাতের কোলে ঢলে পড়েছে রিও। ব্রাজিল-জার্মানির ১২০ মিনিটের লড়াইয়ের পরও নির্ধারণ করা যায়নি বিজয়ী-বিজিত। অতপর টাইব্রেকার-শরণ। স্তব্ধ মারাকানা নিস্তব্ধ হয়ে নিঃশ্বাস-বন্ধ করা অপেক্ষায়। কী হয়, কী হয়! প্রথম চার শটে গোল করেন দুই দলের আট জন। জার্মানির নেওয়ার পঞ্চম শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক। তাতেই মহানায়ক হওয়ার মঞ্চটা তৈরী হয়ে যায় নেইমারের জন্য। তিনি গোল করলেই তো...।

championফুটবল-বিধাতা কখনো কখনো বড্ড নিষ্ঠুর। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপেও এমন কিংবদন্তিদের কাতারে উত্তরণের মঞ্চ সাজানো ছিল নেইমারের জন্য; কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আততায়ী ইনজুরিতে শেষ হয়ে যায় তাঁর টুর্নামেন্ট। এবার কী আবারও? নাহ, বিধাতাদের অত নির্দয় হলে চলে না। জীবনের মিনিয়েচার ফুটবলেও পাওয়া যায় দ্বিতীয় সুযোগ। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বল এবার জালে জড়িয়ে দেন নেইমার। পেলে-গ্যারিঞ্চার মতো মহীরুহ যা করার সুযোগ পাননি, রোমারিও-রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোদের মতো মহারথীরা সুযোগ পেয়েও যা করতে পারেননি- তাই তো করে দেখালেন এবার নেইমার। ‘ক্যানারিনহো’দের এনে দেন অলিম্পিক ফুটবলের সোনার পদক। পূর্ণ হয় ব্রাজিলের ট্রফি ক্যাবিনেট।

কিন্তু যত সহজে বলা, এই অর্জনের সৌধ নির্মাণ তত সহজে হয়নি। স্থপতি নেইমারকে বিস্তর বিদ্রুপ শুনতে হয় প্রথম দুই ম্যাচে। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়ে ব্রাজিলের অলিম্পিক অভিযান শুরু। ইরাকের বিপক্ষে পরের ম্যাচও নিষ্ফলা। সমালোচকদের তীক্ষ্ম ছুরি বেরিয়ে আসে তৎক্ষণাৎ। অস্থির ব্রাজিলিয়ান সমর্থক হয়ে ওঠেন অধৈর্য। যে দুই দলের বিপক্ষে সহজ জয় প্রত্যাশিত, তাদের বিপক্ষে কোনো গোল করতে না পারায় নিজেদের দলকে নিয়ে রীতিমতো ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে মেতে ওঠেন সবাই। সবচেয়ে বেশি নেইমারকে নিয়ে। তাঁর বদলে এমনকি মেয়েদের দলের অধিনায়ক মার্তাকে খেলানোর দাবি ওঠে পর্যন্ত!

এরপরই ছাইভষ্মের ফিনিক্স জেগে ওঠে ব্রাজিল। আড়মোড়া ভেঙে সহজাত শ্রেষ্ঠত্বে প্রত্যাবর্তন নেইমারের। তাতে চুরমার হয়ে যায় ডেনমার্ক। চিড়েচ্যাপ্টা কলম্বিয়া। পিষ্ট হন্ডুরাস। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ৪-০ গোলে জয়ের ধারাবাহিকতায় কোয়ার্টার ফাইনালে ২-০ এবং সেমিফাইনালে ৬-০ ব্যবধানের বিধ্বংসী জয় নিয়ে ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। এখানে অবশ্য নেইমারকে একক কৃতিত্ব দিলে চলবে না। সবচেয়ে বড় প্রশংসা প্রাপ্য কোচ হোজারিও মিকালির। সমকালীন ফর্মেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি যে ফেরত যান চিরকালীন আক্রমণাত্মক ৪-২-৪ ফর্মেশনে! নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, গ্যাব্রিয়েল বারবোসার সঙ্গে লুয়ানকে নামিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দেন একের পর এক প্রতিপক্ষ। তাতে সামনে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব নেইমারের, কিন্তু আক্রমণভাগের অন্য তিনজনের অবদানও কম নয়। আবার ফাইনাল পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টে কোনো গোল না খেয়ে ডিফেন্ডাররাও পাশ্বচরিত্রে উতরে যান ঠিকঠাক।

অবশেষে ফাইনাল। অবশেষে অধরাকে মুঠোবন্দী করার উপলক্ষ্য। অবশেষে ইতিহাসের কাছে মাথা নত না করে নতুন ইতিহাস লেখার সুযোগ। এই অলিম্পিক সোনা বারবার সোনার হরিণ হয়ে ছিল ব্রাজিলের কাছে। দেখা দিয়েও গেছে হারিয়ে। যে কারণে তিনবার রূপা আর দু’বার ব্রোঞ্জ পদকের হাহাকার ‘সেলেসাও’দের। ফাইনালের মঞ্চ মারাকানা হওয়ায় ১৯৫০ সালের ‘মারাকানাজো’র দুঃখগাঁথায় এক প্রস্থ আনন্দকাব্য রচনার উপলক্ষ্য আসে। আর প্রতিপক্ষ জার্মানি বলে তৈরী হয় বছর দুয়েক আগের এক টুকরো প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ। না, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ১-৭ গোলে পরাজয়ের লজ্জা তাতে দূর হয় না; কিন্তু খানিকটা হলেও কমে তো।

এই সব কিছু এক বিন্দুতে গিয়ে মেলে টাইব্রেকারের ওই শেষ শটে। মহাকালের কোলাজ তখন স্তব্ধ সেই ক্ষণকালে। পায়ে পায়ে নেইমার এগিয়ে আসেন, ইতিহাসের নানা বাঁকের উঁকিঝুঁকিও শুরু হয়ে যায়। বলটি জায়গায় বসান চুমু দিয়ে, যেন অমরত্বের চুম্বনের আকাঙ্খায়। প্রত্যাশার পাহাড় জয় করে ঠিকই বল জড়িয়ে দেন জালে। এরপর মারাকানার সবুজ ভিজে ওঠে অশ্রুতে। আনন্দাশ্রুতে!

রিওর আকাশে তখন রাতের আঁধার; কিন্তু অদৃশ্যে যে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল-আকাশে আলো ছড়াচ্ছে জ্বলজ্বলে সূর্য! আর সাফল্যের ওই সূর্যস্নানে ভেসে যাচ্ছে গোটা ব্রাজিল!

জাগো চ্যাম্পিয়নের ১০ম সংখ্যা পুরো পড়তে ক্লিক করুন এখানে...

আইএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন