তিন মার্কিন সাঁতারুকে রিও ছাড়তে দিচ্ছে না ব্রাজিল
রিওর অলিম্পিক আসরে নতুন বিতর্ক। বিতর্কের কেন্দ্রে তিন মার্কিন সাঁতারু। বুধবার দেশে ফেরার বিমানে চড়তে দেওয়া হল না জ্যাক কনজার, গুনার বেঞ্জ এবং জেমস ফেইগনেনকে। মার্কিন অলিম্পিক কমিটির তরফ থেকে বুধবার রাতে জানানো হয়েছে, ব্রাজিলীয় প্রশাসনের তরফ থেকেই আটকে দেওয়া হয়েছে এই তিনজনকে।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে গেমসের একটি নাইট ক্লাবে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের জেরার মুখে আমেরিকার এই তিন সাঁতারু যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে ঘোর অসঙ্গতি ধরা পড়াছে। এ কারণেই যত বিপত্তি। বুধবার ব্রাজিলের একটি আদালতের বিচারক কেইলা ব্লাঙ্ক এমনকি বিখ্যাত মার্কিনী সাঁতারু রায়ান লোকটে এবং ফেইগনেনের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন।
বিচারক তার আদেশে স্পষ্ট করে দেন, গত রোববারের ডাকাতি নিয়ে আমেরিকার সাঁতারুরা পুলিশের কাছে যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তাতে যথেষ্ট অমিল ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের ওয়েবসাইটে এই পুরো ঘটনার বিবরণ পেশ করা হয়েছে। জানা গেছে, বিচারপতি ব্লাঙ্ক তার রায় ঘোষণার সময় জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে লোকটে যে বিবৃতি দিয়েছেন তার সঙ্গে একেবারেই মিলছে না ফেইগনেনের কথাবার্তা।
লোকটে জানিয়েছেন, ‘রোববার রাতে তারা যখন নৈশক্লাবটি থেকে ফিরছিলেন, এক দুষ্কৃতি এসে তাদের পথ আটকায়। তাদের কাছে থাকা ৪০০ মার্কিন ডলার ছিনিয়ে নিতে চায়।’ ফেইগনেন আবার পুলিশের কাছে অন্যভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য, ‘সংখ্যায় এক নয়, একাধিক দুষ্কৃতিকারী ছিল। তবে, তাদের মধ্যে একজনের হাতেই শুধু অস্ত্র ছিল।’
রোববার আমেরিকান সাঁতারুদের ওপর ছিনতাইকারীদের চড়াও হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই গোটা ব্রাজিল জুড়ে রীতিমতো হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। যদিও, প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির তরফ থেকে বিষয়টিকে আমলই দেওয়া হয়নি। এ ধরনের কোনও ঘটনা আদৌ ঘটেছে তাও স্বীকার করতে চায়নি আইওসি। পরে অবশ্য অলিম্পিক সংস্থার পক্ষ থেকে ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, এক জন্মদিনের পার্টি সারতে ‘ক্লাব ফ্রান্স’ নামের ওই নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন লোকটে এবং অন্য তিন আমেরিকান সাঁতারু। সেখানে হাজির ছিলেন ব্রাজিলীয় সাঁতারু থিয়াগো পেরেরা এবং তার স্ত্রী গ্যাব্রিয়েলাও। ব্রাজিলীয়রা পার্টি সেরে ক্লাব থেকে ফিরে যাওয়ার পরও লোকটেরা থেকে যান। এরপর গেমস ভিলেজে ফেরার জন্য ট্যাক্সি ধরেন। মাঝপথে ট্যাক্সি থামিয়ে ছিনতাইকারীরা তার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ধরেন, এমনটাই অভিমত লোকটের।
রহস্য ঘনিয়েছে অন্যত্র। সিকিউরিটি ক্যামেরা ফুটেজে ধরা পড়েছে, যে ছবি তাতে দেখা যাচ্ছে, লোকটেরা ভিলেজে ফিরেছেন সকাল সাতটায়। অর্থাৎ সেই রাতের নৈশ পার্টি থেকে বেরোনোর প্রায় চারঘণ্টা পর! ঠিক এ জায়গাতেই যত ধোঁয়াশা। তার ওপর সাঁতারুদের বক্তব্যে অনেক অমিল পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সত্যিই ঘটনাটা নিয়ে গভীর রহস্য দানা বেঁধেছে।
এরইমধ্যে, রায়ান লোকটে ফেরত এসেছেন নিজের দেশে। ফেইগনেন এখনও ব্রাজিলেই। এদিকে, আইওসি’ও মার্কিন সাঁতারুদের হাল-হাকিকত নিয়ে এ মুহূর্তে পর্দা ফাঁস করতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়।
আইএইচএস/এবিএস