মুরালি-ওয়ার্নকেও ছাড়িয়ে গেলেন হেরাথ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়। শুধু সিরিজই জয় নয়, রীতিমত হোয়াইটওয়াশ করেছে শ্রীলংকা। এমন অসাধারণ এক জয়ে অসামান্য অবদান যার, তিনি রঙ্গনা হেরাথ। মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবসরের পর যারা শ্রীলংকান স্পিন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন, হেরাথ তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- কিভাবে মায়াবি ঘূর্ণির জালে আচ্ছন্ন করতে হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে।
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একাই ২৮ উইকেট নিয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ। পুরো সিরিজে মূলতঃ তার কাছেই হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ টেস্টে তো একাই নিয়েছেন ১৩ উইকেট। শেষ ইনিংসে নিয়েছেন ৭ উইকেট। তার ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।
বাম হাতি লংকান এই অর্থোডক্স একটি কীর্তিও গড়ে ফেলেছেন এরই মধ্যে। স্পিনের দুই কিংবদন্তী স্বদেশি মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং অস্ট্রেলিয়ান শেন ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। এক কথায় এখন তাকে বলা যায় চতুর্থ ইনিংসের রাজা। চতুর্থ ইনিংসে ৫টি কিংবা তারও বেশি উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে এতদিন যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন মুরালিধরন এবং শেন ওয়ার্ন। মোট সাতবার করে চতুর্থ ইনিংসে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন এই দুই কিংবদন্তি।
পাল্লেকেলেতে এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই দুই কিংবদন্তিকে ছুঁয়ে ফেলেন রঙ্গনা হেরাথ। এবার কলম্বো টেস্টে ছাড়িয়ে গেলেন এ দু’জনকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে ৮ বার ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন হেরাথ।
শতবর্ষের একটি রেকর্ডও ভেঙ্গেছেন হেরাথ। এই সিরিজে হেরাথের বোলিংয়ের গড় ৩১ করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত ১০০ বছরেও কোন স্পিনার ১৫ কিংবা তার বেশি উইকেট নিতে গিয়ে এত কম গড়ে বোলিং করেনি। এর আগে মাত্র দু’জন এত কম গড়ে বোলিং করেছিলেন। তারা হলেন ইংল্যান্ডের ববি পিল এবং কলিন ব্লিথ। দু’জনই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই বোলিং করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে।
তিন ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরাথের চেয়ে মাত্র দু’জন বোলার সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন। তারা হলেন রিচার্ড হ্যাডলি এবং হরভজন সিং। হ্যাডলি নিয়েছিলেন ৩৩ উইকেট এবং হরভজন সিং নিয়েছিলেন ৩২ উইকেট। হেরাথের স্বদেশি মুত্তিয়া মুরালিধরনও একবার নিয়েছিলেন ২৮ উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোন শ্রীলংকান হিসেবে সেরা বোলিংটা করে ফেললেন রঙ্গনা হেরাথ। এর আগে অসিদের বিপক্ষে সেরা বোলিং ছিলো মুরালি ধরনের। ২১২ রানে ১১ উইকেট। ২০০৩-০৪ সালে গল টেস্টে এই বোলিংটা করেছিলেন মুরালি। কলম্বোয় এই টেস্টে এসে ১৪৫ রানে ১৩ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন মুরালিধরনকে। তবে টেস্টে শ্রীলংকার হয়ে এটা ৫ম সেরা বোলিং।
অস্ট্রেলিয়ার করুণ চেহারাটা এই টেস্টে আরও বেশি ফুটে উঠেছে। চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ১৩৬ বলের মধ্যে অলআউট হয়েছে দলটি। নিজেদের ইতিহাসে এটা তৃতীয় বাজেভাবে অলআউট হওয়ার ঘটনা। এর আগে গত বছর নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৯ বলে এবং ২০১১-১২ মৌসুমে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ বলে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
আইএইচএস/পিআর