‘দলে টিকে থাকা নিয়ে চলছে সুস্থ প্রতিযোগিতা’
গত এক দেড় বছর সত্যিই ভালো ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। কিভাবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিততে হয়, প্রতিপক্ষকে কাবু করতে কিংবা কখন কী অস্ত্রের সফল ও স্বার্থক প্রয়োগ ঘটাতে হবে- মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজদের তা ভালোই জানা হয়ে গেছে।
মোটা দাগে বলা যায়, ব্যক্তিগত বা বিচ্ছিন্ন নৈপুণ্যের দিন শেষ। এখন দল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাই তো কেউ কেউ এখন মাশরাফি-মুশফিক বাহিনীকে ‘টিম বাংলাদেশ’ও নাম দিয়ে ফেলেছেন।
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বেশি থাকায় দলে রদবদলও কমেছে বেশ। ফরম্যাটের পার্থক্যর কারণে হাতে গোনা ক’জন স্পেশালিস্ট পারফরমার ছাড়া মোটামুটি একটা লাইন আপও তৈরি হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
এরকম অবস্থায় দলে নতুন মুখের অন্তর্ভূক্তি ও পুরনো কারো নতুন করে দলে ঢোকা কঠিন। তবুও এবার কন্ডিশনিং ক্যাম্পে কয়েকজন পরিণত, অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারকে ডাকা হয়েছে, যারা এক সময় ছিলেন অপরিহার্য। অথচ আজ তাদের গায়ে ‘সাবেকের’ তকমা।
এই তালিকায় তিনটি নাম সবার ওপরে; শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান ও সোহরাওয়ার্দী শুভ। তাদেরকে হঠাৎ ডাকা কেন? কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। না-কি তারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেছেন, না ডাকলে খারাপ দেখায় তাই?
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য-পরিকল্পনায়ই তাদের কয়েক বছর পর কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে।
এর মধ্যে বাঁ-হাতি টপ অর্ডার শাহরিয়ার নাফীস ও ডানহাতি মিডল অর্ডার রকিবুলকে টেস্টের ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভাবার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচক। আর বাঁ-হাতি সোহরাওয়ার্দী শুভকে আবার ক্যাম্পে ডাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক জাগো নিউজকে প্রায় মাস খানেক আগে জানিয়েছেন, সাকিবের সঙ্গে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ব্যাকআপ বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে শুভর কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচক তেমন ব্যাখ্যা দিলেও প্রশিক্ষক চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কী ভাবছেন? ওই সাবেক হয়ে পড়াদের নিয়ে কোচের চিন্তা কী? তিনিও কি শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল ও শুভকে দলে নেয়ার কথা ভাবছেন? এ কৌতুহলি প্রশ্নর জবাব জানা হয়ে গেল মঙ্গলবার।
সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন উঠলো। কোচ চন্ডিকা তার জবাবে একটা ছোট্ট বক্তৃতা দিয়ে ফেলেছেন। তবে কূটনৈতিক ভাষায়। যাদের আবার ডাকা হয়েছে, তারা যে এমনি এমনি ডাক পেয়েছেন, তাদের কোনোই সম্ভাবনা নেই। এমন কথা না বলে হাথুরু জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যারা আবার ডাক পেয়েছে, তাদের অবশ্যই বাংলাদেশ দলে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।’
একথা বলার পাশাপাশি তিনি আরও দুটি কথা বলেন। প্রথম কথা হলো, ‘প্রথমত তারা আগেও ভূমিকা রেখেছে। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেই বিবেচনায় এসেছে।’
দ্বিতীয় কথা হলো, ‘তাদের এই ভালো খেলে আবার ক্যাম্পে ডাকা পাওয়ার মাঝেও আছে একটা ইতিবাচক দিক। এই যে তারা ভালো খেলে আবার প্রাথমিক ক্যাম্পে, তাতে করে দলে থাকাদের মাঝেও একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারাও নড়ে চড়ে বসবে। তাদেরও ভালো করার তাগিদ তৈরি হয়েছে। এতে করে দলে থাকার ও ঢোকার একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমি মনে করি যেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অবশ্যই ভালো ও ইতিবাচক দিক। আমি মনে করি যারা আবার নতুন করে ডাক পেয়েছে, তাদের জন্যই এ ভালো দিক উন্মোচিত হয়েছে।’
কিন্তু তারা বা তাদের কেউ কি জায়গা করে নিতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘তারা হাত উঠিয়ে রেখেছে এবং দলে থাকার তাদেরও সমান সুযোগ আছে।’
তবে একদম শেষ অংশে গিয়ে হাথুরু একটি নির্জলা সত্য কথা বলেছেন, ‘তবে এটাও সত্য, গত দেড় বছর আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এরকম খেলতে থাকা দলে আবার কারো জায়গা করে নেয়া কঠিন। তারপরও একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়েছে।’
এআরবি/আইএইচএস/এবিএস/বিএ