অলিম্পিকে কেন নেই ক্রিকেট!
দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বলা হয় অলিম্পিককে। যেখানে বিশ্বের প্রায় সবগুলো খেলারই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। রিও অলিম্পিকে ২৮ খেলায় তিনশ’রও বেশি ইভেন্ট রয়েছে। ১১২ বছর পর এই রিওতে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে গলফ। রাগবি সেভেনও যোগ হয়েছে এবারই প্রথম। অথচ এত বড় আসরে নেই ক্রিকেট।
অনেক দিন থেকেই অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠছে। সে আলোকে ২০২০’র টোকিও সামার অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আলোচনা উঠেছিল একবার। তবে টোকিও আসরেও ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ২০২৪’র ইতালি কিংবা লস এঞ্জেলেসে আসর বসলে ক্রিকেট যুক্ত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
ইতালি ক্রিকেট ফেডারেশনের সভাপতি সিমন গামবিনো জানিয়েছিলেন, রোমে যদি অলিম্পিকের আসর বসে, তাহলে তারা ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করবেন। লস এঞ্জেলেসের আয়োজকরা একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা চাইলেও কী ক্রিকেট চাইছে অলিম্পিকে যোগ দিতে? মূলতঃকোন কারণগুলো ক্রিকেটের পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার জন্য? আসুন দেখে নেয়া যাক-
*ক্রিকেট এমন একটি খেলা যার জনপ্রিয়তা নিয়ে মাঝে মধ্যে ফুটবলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ক্রিকেটপ্রেমে বুঁদ হয়ে থাকেন; কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে এই জনপ্রিয়তা কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিশ্ব দরবারে ক্রিকেটের সমাদর সেভাবে নেই বললেই চলে। অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ বলে মনে করেন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা।
* অন্যান্য খেলাধুলার তুলনায় ক্রিকেট অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত খেলা বলে পরিচিত। বিশেষ করে অলিম্পিক আয়োজক দেশের পক্ষে আদর্শ ক্রিকেট পিচ তৈরি করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
*ক্রিকেটের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম ও মাঠের প্রয়োজন, যেটা আয়োজক দেশের ক্ষেত্রে ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে বলে মনে করা হয়। আবার অলিম্পিক শেষ হলে সেই মাঠ পড়ে থাকবে অব্যবহৃত।
* বিভিন্ন খেলাধুলা একই স্টেডিয়ামে হয় সাময়িক প্রস্তুত্তি নিয়েই; কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচের জন্য স্টেডিয়াম, পিচ, মাঠ ও নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রস্তুতি দরকার অনেক আগে থেকে।
* এখন ক্রিকেট তিনটি ফরম্যাটে খেলা হয়ে থাকে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আসার আগে ওয়ানডে কিংবা টেস্ট যে কোনও খেলা থেকে বেশি সময় ধরে হয়ে থাকে। এটি একটি কারণ বলে মনে করা হত; কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আসার পর অলিম্পিক ক্রিকেট নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়।
* অলিম্পিক ইভেন্ট সাধারণত আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়। এখানেই বিপত্তি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি)। তাদের মৌসুম শুরু হয় এ সময় থেকেই। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চায়।
* অলিম্পিকে ক্রিকেট খেলা হলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আন্তজার্তিক অলিম্পিক কমিটি। কারণ? সমীক্ষা বলছে, সাধারণত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বড় ক্রিকেট ম্যাচ হলেই দর্শক বেশি থাকে। তাছাড়া অলিম্পিকে যদি এ বা বি দল পাঠায় কোনও দেশ, তাহলে টেলিভিশন দর্শকও অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
* প্রথমবার এবং শেষবারেরমত একবারই অলিম্পিক্সে ক্রিকেট খেলা হয়েছিল ১৯০০ সালে। গ্রেট ব্রিটেন ১৫৮ রানে ফ্রান্সকে হারিয়ে সোনা জেতে সেবার; কিন্তু তারপর থেকে অলিম্পিকে বাদ যায় ক্রিকেট। তবে, আইসিসি’র উদ্যোগের থেকে বিসিসিআই এবং ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যদি বেশি উৎসাহ দেখায়, তাহলেই পরবর্তীকালে কোন অলিম্পিকে হয়তো ক্রিকেটকে দেখা যেতেও পারে।
আইএইচএস/এবিএস