অলিম্পিকের চোখ ধাঁধানো উদ্বোধন শুক্রবার
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন’ আর্থ বলে কথা। এর উদ্বোধনি অনুষ্ঠানটাই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বেইজিং অলিম্পিকে চীন দেখিয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কত নতুনত্ব আনা যায়। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা তাই ছাড়িয়ে যায় সব আকর্ষণের মাত্রা। আয়োজক দেশকে এই এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পেছনেই ব্যয় করতে হয় কয়েক কোটি ডলার। বেইজিংয়ের পথ ধরে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনীতেও ছিল এই জৌলুসের মাত্রা।
তবে রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কতটা আকর্ষণীয় হবে, সেটা নিয়েই তৈরী হয়েছে প্রশ্ন। কারণ, ইতিমধ্যে রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান ফার্নান্দো মেইরেলেস জানিয়ে দিয়েছেন, রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বাজেট হচ্ছে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের চেয়ে ১২ গুণ আর বেইজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের চেয়ে ২০ গুণ কম। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, জৌলুসের দিক থেকে লন্ডন কিংবা বেইজিংকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই রিওর।
তবুও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলে কথা। এ কারণেই সারা বিশ্বের চোখ পাখির মতই নিবদ্ধ থাকবে রিও ডি জেনিরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামের ওপর। ফুটবলের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন এটা হয়ে গেছে অলিম্পিক স্টেডিয়াম। এখানেই জ্বলবে অলিম্পিকের মশাল। ফুটবল কিংবদন্তী পেলের হাতেই জ্বলে ওঠার কথা রিও গেমসের মশাল।
সময়টা ৫ আগস্ট হলেও স্থানের বিচারে বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৫টায় শুরু হবে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে, এবারের অনুষ্ঠানে নতুন কী কী থাকছে। মূলতঃ প্রত্যেকটি গেমসেই ফুটিয়ে তোলা হয় স্বাগতিক দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। সে আলোকে এবার রিও অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী সাজানো হয়েছে লাতিনের ইতিহাস-ঐতিহ্য দিয়েই।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে আমাজন অরণ্যের ভয়ঙ্কর সুন্দর আবহও ফুটে ওঠার কথা মারাকানার সবুজ ঘাসে। ব্রাজিলিয়ান সুপার মডেল জিসেল বুন্দচেনের ক্যাটওয়াক, সে দেশের সঙ্গীতের জনপ্রিয় নাম কায়তানো বেলোসো, গিলবার্তো গিলদের পারফরম্যান্সও দেখা যাবে। তেমনই অলিম্পিক উদ্বোধন প্রথমবার দেখা যাবে কোনও রূপান্তরকামী পারফরর্মার, ব্রাজিলের ফ্যাশন ব্যক্তিত্ব লি টি।
ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী সাম্বা নৃত্যতো থাকছেই। থাকছে অনেক চমক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে হাজির থাকবেন প্রায় ৭৮ হাজার দর্শক। বিশ্বের তিন বিলিয়ন মানুষ টিভিতে সরাসরি এই অনুষ্ঠানটি দেখবেন।
তবে রিও অলিম্পিকে নিশ্চিত একটি ব্যতিক্রম থাকছে। আকর্ষণের ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে তা। গান গাইবেন ৭৯ বছর বয়সী এলজা সোরেস। তাকে ঘিরে কেন এত আকর্ষণ? তিনি যে মানে গারিঞ্চার স্ত্রী! ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার। বলা হয়ে থাকে, ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলেকে যখন মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, তখন ব্রাজিলকে একাই বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন গারিঞ্চা। অসাধারণ, স্কিল আর ড্রিবলিংয়ের জন্য কিংবদন্তী হয়ে আছেন তিনি।
যদিও তিনি এখন আর ইহজগতে নেই। তবে তার স্ত্রী এখনও বেঁচে। তিনিই রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইবেন। স্বামীর মৃত্যুর পর বহু দিন আড়ালে ছিলেন এলজা। আবার প্রকাশ্যে আসছেন অলিম্পিকের উদ্বোধনে। শুধু গারিঞ্চার স্ত্রী বলেই নয়, ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা গায়িকাদের একজন ভাবা হয় তাকে। এক সময় লাতিনের ঘরে ঘরে মানুষ শুনতো তার গান। এলজার সঙ্গে থাকবেন তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে এমসি সোফিয়া। যে কি না কথা বলবেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বিশ্বের নামকরা সব রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্র প্রধান। স্বাগতিক ব্রাজিল থেকে শুরু করে, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, জার্মানি, ভারতসহ বিশ্বের তাবৎ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আসছেন অতিথি হয়ে। এমনকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশাল বহন করার কথা রয়েছে জাতিসঙ্গ মহাসচিব বান কি মুনেরও। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকেও মশাল বহন করেছিলেন তিনি।
এবারের অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে সবচেয়ে বেশি ২০৬টি দেশ। দল থাকবে ২০০৭টি। একটি হবে অলিম্পিকের। যাদের কোন দেশ নেই এমন কিছু অ্যাথলেট বহন করবেন অলিম্পিকের পতাকা। অ্যাথলেটও সবচেয়ে বেশি। ১০ হাজার ৫০০। শুরুতেই থাকবে পতাকা নিয়ে অ্যাথলেটদের মার্চপাস্ট। দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এই মার্চপাস্ট। প্রতিটি দেশের অ্যাথলেটরা তাদের দেশের পতাকা নিয়ে প্রবেশ করবেন গেমসের মূল ভেন্যু মারাকানায়।
মার্চপাস্ট শেষে শুরু নানা রংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। সব শেষে থাকবে বর্ণীল আতশবাজি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন ‘সিটি অব গড’ বিখ্যাত চলচিত্রের পরিচালক ফার্নান্দো মেইরেলেস। তার সঙ্গে থাকবেন আন্দ্রুচা ওয়াডিংটন, ড্যানিয়েলা থমাস। কোরিওগ্রাফার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাজিল বিখ্যাত দেবর্নাহ কুকার। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ফুটিয়ে তুলবেন ৬ হাজার ভলান্টিয়ার।
মজার ইভেন্টে গান করবেন সাম্বা সিঙ্গার এলজা সোয়ারেস। যার আরও একটা পরিচয় আছে। যিনি ব্রাজিলের সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার গারিঞ্চার স্ত্রী। তার সঙ্গে থাকবে ১২ বছর বয়সী এমসি সোফিয়া। যে কিনা কথা বলবেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। এরপর একে একে মঞ্চ মাতাবেন ক্যারল কনকা, লুডমিলা, গিলবার্তো গিল, কায়েটানো ভ্যালোসো। সুরের মায়াজালে দর্শকদের মোহিত করতে থাকছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত সব সঙ্গীতশিল্পী।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী আয়োজনে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনাই অধিক গুরুত্ব পাবে। সহস্রাধিক অ্যাথলেট জাতীয় পতাকা হাতে প্যারেড করবেন। লাইট এন্ড সাউন্ড শো এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে ব্রাজিলে পর্তুগীজ উপনিবেশের ইতিহাস। উদ্বোধনী মঞ্চ আলো করবেন ব্রাজিলের সুন্দরী এবং সুপার মডেলরা।
কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান মডেল বান্ডচ্যান ক্যাটওয়াকের মাধ্যমে মঞ্চ আলোকিত করবেন। ক্যাটওয়াকের বড় একটি অংশজুড়ে থাকবেন মেইনস্ট্রিম ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত ধারণা বদলে দেওয়া ট্রান্সজেন্ডার মডেল লি-টি। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত কোনও ট্রান্সজেন্ডার মডেল মঞ্চ মাতাবেন।
অলিম্পিক নিয়ে জাগো চ্যাম্পিয়নের বিশেষ এই আয়োজন পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…
আইএইচএস/পিআর