ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ভারতীয় বোর্ডে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৪:১২ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৬

আইপিএলে ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তদন্ত করতে গঠন করা হয় বিচারপতি লোধা কমিশন। এই কমিশন তদন্ত শেষে সুপারিশসহ রিপোর্ট জমা দিয়েছে অনেক আগে। এরপর এ নিয়ে চলেছে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা। আলোচনা-সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষার অবসান হলো৷ অনেক টালবাহানার পরে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷
লোধা কমিটি সুপারিশই মেনে নিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এবং এই রায়ে পুরোপুরি ব্যাকফুটে বিসিসিআই৷ আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্যও ভারতীয় বোর্ডকে নির্দেশ দিয়ে দিল সুপ্রিম কোট।

সোমবার ভারতের সর্বোচ্চ আদাল রায় দিলো, বোর্ডের কোন পদে রাজনীতিবিদ বা সরকারী কোনও চাকুরিজীবী, আমলা বা শিল্পপতি থাকতে পারবেন না৷ পাশাপাশি বয়স ৭০ বছরের মধ্যে থাকতে হবে৷ ৭০-এর বেশি হলেই বোর্ড থেকে সরে যেতে হবে। তাতেই চুড়ান্ত বিপদে পড়েছে বিসিসিআই৷ ভারতীয় বোর্ডের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকবেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনেরাল (সিএজি) মনোনীত এক ব্যক্তি।

এই ঐতিহাসিক রায় কার্যকর করার জন্য বিসিসিআইকে ছয় মাসের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা যাবে না৷ তবে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা যাবে৷ খুব দ্রুতই রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে চলেছে বিসিসিআই৷

ভারতীয় ক্রিকেটে স্বচ্ছতা আনতে দশটি সুপারিশ দিয়েছিল লোধা কমিটি৷ তারমধ্যে অন্যতম ছিল বোর্ড কর্মকর্তাদের পদে কোনও রাজনীতিবিদ বা সরকারী কোনও চাকুরিজীবী, আমলা বা শিল্পপতি থাকতে পারবে না৷ পাশাপাশি বয়স ৭০ বছরের মধ্যে থাকতে হবে৷ এই সুপারিশটিতেই বড় সমস্যায় পড়ে গেছে বিসিসিআই!

যদি ছ’মাসের মধ্যে বোর্ডের এই সুপারিশ মানতে হয় বিসিসিআইকে তাহলে বোর্ড সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না অনুরাগ ঠাকুর৷ শুধু তাই নয়, বিসিসিআই সচিব অজয় শিরকের আসনও টলে যাবে এই সুপারিশ মানতে হলে৷ এছাড়া ৭০ বছরের সুপারিশ মানতে হলে অনেক নামী-ভারী বোর্ড কর্মকর্তাদের সরে যেতে হবে বিসিসিআই থেকে৷ টিভি সম্প্রচার নিয়েও সমস্যায় পড়তে চলেছে ভারতের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাটি৷ কেন না ওভারের মাঝে কোনও বিজ্ঞাপণ দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ লোধা কমিটির এমন সুপারিশও মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷

লোধা কমিটির সুপারিশগুলি ছিল:

১. প্রতিটি রাজ্য থেকে একটি মাত্র বোর্ড অনুমোদিত সংস্থা থাকবে৷ যার ভোটারাধিকার থাকবে৷
২. বিসিসিআই ও আইপিএল-এর জন্য আলাদা গভর্নিং বডি করতে হবে৷
৩. আইপিএল পরিচালনা করবে গভর্নিং কাউন্সিল৷ যেখানে ৯ জন সদস্য৷ বোর্ড সচিব ও কোষাধ্যক্ষ গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হবে৷ অন্য দুই সদস্য বাকি সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন৷ বাকি পাঁচ সদস্যের মধ্যে দু’জন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি থেকে নির্বাচিত হবেন৷ একজন প্লেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি৷ বাকি দু’জনের মধ্যে একজন কম্পোট্রোলার ও একজন ভারতীয় অডিটর জেনারেল অফিস থেকে নির্বাচিত হবেন৷
৪. আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আদালা ভাবে কাজ করবে৷
৫. খেলোয়াড়দের রক্ষার জন্য মহিন্দর অমরনাথের নেতৃত্বে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করতে হবে৷ যে কমিটিতে থাকবেন অনিল কুম্বলে এবং ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ডায়না এডুলিজি৷
৬. বোর্ড কর্মকর্তাদের জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি স্থির করে দিল লোধা কমিটি৷ অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে৷ বয়স ৭০ বছরের মধ্যে হতে হবে৷ রাজনীতিবিদ বা সরকারী কোনও চাকুরিজীবী বা শিল্পপতি হওয়া চলবে না৷
৭. বোর্ড কর্মকর্তা হিসেবে ৯ বছরের বেশি থাকতে পারবে না৷
৮. তিন বছরের বেশি বোর্ডের কোনও পদে থাকবে পারবে না৷
৯. বোর্ড অনুমোদিত প্রতিটি সংস্থার অ্যাকাউন্ট অডিট করবে বিসিসিআই৷
১০. প্রতিটি সংস্থার ক্রিকেটের উন্নয়নে সাবসিডি দেবে বিসিসিআই৷ তবে তা সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকতে হবে৷

সুপ্রিম কোর্ট এমন রায় ঘোষণার পরে খুব খুশি বিচারপতি আরএম লোধা৷ এই রায় ঘোষণার পরে তিনি বলেন ‘ভারতীয় ক্রিকেট ও খেলার পক্ষে ভালো দিন। সমর্থকদের জন্য আজ খুশির দিন।’

প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি করে ভোট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই রায়ের পরে বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আদিত্য বার্মা বলেন, ‘একশো শতাংশ সঠিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ আমি খুব খুশি৷’

এদিকে আইপিএলের চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টকে সম্মান করি৷ কীভাবে এই রায় কার্যকর করা যায় তা ভাবছি৷’ এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি টিএস ঠাকুর ও ইব্রাহিম কালিফুল্লাহ৷ এখন দেখার বিসিসিআই কীভাবে এই রায় কার্যকর করে৷

আইএইচএস/এবিএস

আরও পড়ুন