রোনালদোকে ছোঁয়ার আকুতি মেসি সমর্থকদের
কে সেরা? মেসি না রোনালদো? রোববার রাতে প্যারিসের স্টেডে ডি ফ্রান্সে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্নটার সমাপ্তি ঘটে গেছে। পর্তুগালকে ইউরো চ্যাম্পিয়ন করার পর ভক্তদের কাছে এখন এই দু’জনের লড়াইয়ে স্কোরলাইন- রোনালদো ১, মেসি ০।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্তকুলের উল্লাস আর মেসি সমর্থকদের ক্রমশ পিছু হঠার দৃশ্যটা এখন সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই, গোটা ফুটবলবিশ্ব জুড়েই একরকম। রোনালদোকে জিতিয়ে দিয়ে মেসি সমর্থকদের বিদ্রুপ করতেও ছাড়ছেন না সিআর সেভেন সমর্থকরা। তাদের একটাই কথা, মেসি যেখানে জাতীয় দলের হয়ে কিছু পারেনি, সেখানে রোনালদো তো দেশকে ইউরো জিতিয়েছেন। সুতরাং, তিনিই সত্যিকারের নায়ক।
সোস্যাল মিডিয়ার কোথায় কোনো এক ফুটবল ভক্ত লুনো বলছেন, ‘মেসি কোথায়, আর রোনালদো কোথায়। আজকের পর আশা করি কথাটা আর উঠবে না। আমাদের অধিনায়ক মাঠে থাকুক, না থাকুক, দল ফেলে পালিয়ে যায় না। মাঠে নামতে না পারলেও অন্তত মাঠের বাইরে থেকে দলকে তাতায়। মেসি ভাল খেলোয়াড়, বড় খেলোয়াড়; কিন্তু রোনালদো নন। আমাদের কাছে রোনালদোর কথার মানে অনেক বড়।’
বন্ধুর সঙ্গেই গলা মিলিয়ে বেঞ্জামিনের আবার প্রশ্ন, ‘সবাই বলছিল রোনালদোর ৩১ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। কেউ ওকে পাত্তা দেয়নি। এবার দেখো কী করে দেখাল ও। না খেলতে পারলেও কী ভাবে খেলতে হয়, সেটাও দেখিয়ে দিল। এরপরও তোমরা বলবে মেসি সেরা?’
পাশে দাঁড়ানো তরুণী লিসেস্টিসিয়ারের ঘোর যেন এখনও কাটছে না, ‘রোনালদোর ইনজুরির পর সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভাবতে পারিনি ওকে ছাড়াও দল জিততে পারবে। সবচেয়ে বড় হল দলের অধিনায়কের জন্য জেগে ওঠা। ওর জন্য সবাই এভাবেই লড়তে রাজি থাকে। এটা মেসি কেন, বিশ্বের কোনও ফুটবল অধিনায়কের জন্য হবে না।’
সোস্যাল মিডিয়ার এরা সবাই কিন্তু পর্তুগিজ। চাকরির সূত্রে বসবাস ফ্রান্সে। রোববার রাতে আইফেল টাওয়ারের সামনে ফ্যান জোনে তাদের রোনালদো ম্যাজিকে বুঁদ হয়ে থাকার ছবিটার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য আর একটা ছবিও ভেসে উঠছে। যেখানে মেসিভক্তরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘গোল করল এডের, জিতল পর্তুগাল। এটাই তো দেখল সারা দুনিয়া। এর মধ্যে রোনালদো কী করে মাঠ থেকে উঠে গিয়েও মেসিকে টপকে গেল, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।’
কেউ আবার ফেসবুকে পোস্ট করছেন, ‘গোটা ইউরোয় রোনালদো খেললেন কোথায়! হাঙ্গেরি-ওয়েলস ম্যাচটা ছাড়া তো চোখেই পড়েনি সে ভাবে। ফাইনালেও তাই। এই পারফরম্যান্স দেখিয়ে আর যাই হোক মেসিকে টপকানো যায় না। মেসি কোপায় তার চেয়ে অনেক ভাল খেলেছেন।’
কিন্তু সে যুক্তি উড়েও যাচ্ছে নিমেষে, ‘রোনালদো দেশের জার্সিতে ইউরো জিতেছেন। ভবিষ্যতে আরও জিততে পারেন; কিন্তু মেসি আর্জেন্টিনাকে কোনও ট্রফি দিতে পারেননি। আর পারবেনও না। কারণ মেসি এখন রিটায়ার্ড,’- টুইট এক রোনালদো ভক্তের।
দুই মহানায়কের পৃথিবীরও তো এখন একেবারে উল্টো ছবি। পর্তুগালে ফেরার পর রোনালদো যখন মহানায়ক, ট্রফি নিয়ে সেলিব্রেশনে ব্যস্ত, মেসিকে নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় বার্সেলোনা। কর ফাঁকি কেলেঙ্কারির পর বার্সেলোনা ছাড়তে চলেছেন মেসি- বলে জল্পনা তুঙ্গে।
যার তীব্রতা এতটাই যে বার্সেলোনাকে মেসির সমর্থনে টুইটারে নয়া হ্যাশট্যাগ তৈরি করতে হয়েছে #WeAreAllLeoMessi (আমরা সবাই লিও মেসি)। যাতে মেসির ভক্তকূল কঠিন সময়ে পরপর ধাক্কা সামলাতে প্রিয় তারকার পাশে থাকতে পারেন। তাতেও কতটা লাভ হবে বলা যাচ্ছে না। কেন না ব্রিটিশ মিডিয়ায় জোর জ্বল্পনা শুরু হয়েছে চেলসির সঙ্গে ইতিমধ্যেই মেসির বাবা হোর্হে একপ্রস্ত বৈঠক সেরে ফেলেছেন।
বৈঠকটা নাকি মেসির বার্সা ছাড়া নিয়েই ছিল। মেসি ভক্তদের একটা অংশের আবার ক্লাব নয়, যত আগ্রহ তাকে সাদা-নীল অ্যালবিসেলেস্তে জার্সিতে ফেরানোর, ‘এরপর ক্লাবের হয়ে মাঠে নেমে যত বড় ট্রফিই জিতুক না কেন, রোনালদোকে পেছনে ফেলতে পারবে না। ২৯ বছর বয়স। এখনও মেসির হাতে অনেক সময়। কোপা বা বিশ্বকাপ তো জিততেই পারে। মেসিকে তাই এখনই উচিত অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরে আসা।’
আইএইচএস/এবিএস