ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

মেসির আবেগ এবং অভিমান

প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ০২ জুলাই ২০১৬

ব্রাজিলের স্থানীয় একটি দৈনিক। লাঞ্চে। পর্তুগিজ ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাটির হোম পেজেই একটি বিশেষ শিরোনাম। ফিকা। যার বাংলা, ‘থাকো।’ এই এক শব্দের শিরোনামেই যেন পুরো পৃথিবীর কোটি ভক্তের মনের কথা জানিয়ে দিয়েছে লাঞ্চে। পত্রিকাটির পক্ষ থেকে মেসির কাছে আর্জি জানানো হয়েছে, ‘আমরা ব্রাজিলিয়ানরা রোববার রাতের এমন হারে খুব মর্মাহত। শত্রুতা দূরে ঠেলে, প্রতিবেশী আর্জেন্টিনাকে আমরা সহানুভূতির দিক দিয়ে নিজেদের পরই স্থান দিয়েছি। আমরা তোমাকে অনুরোধ করছি, আর্জেন্টিনার দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য।’

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের কল্যাণে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের বন্ধুত্ব হয়। যদিও সংখ্যায় সেটা খুবই কম। এছাড়া ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সম্পর্ক যেন ভারত-পাকিস্তান। কেউ কারও দিকে ঢিল ছুড়লে উল্টো পাটকেলটি খেতে হয়। সেই ব্রাজিলের কাছ থেকে মেসির ফিরে আসার এমন অনুনয়- নিশ্চিতভাবেই বিশ্বব্যাপী তার জনপ্রিয়তাকে পরিমাপ করে।

রোনালদিনহো, রোনালদো, নেইমার, আলভেজদের কথা না হয় নাই বা বলা হলো। কারণ, এরা ব্রাজিলিয়ান হলেও চোখ বন্ধ করে মেসির গুণমুগ্ধ। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি পেলের মত ঠোঁটকাটা এবং অন্যের শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নিতে না পারা মানুষও মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছেন। নিজেকে রাজা বলে মেসিকে ফুটবলের রাজপুত্র আখ্যায়িত করেছেন তিনি। এমনকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর চেয়েও তাকে সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সান্তা ফে’র রোজারিও থেকে উঠে আসা সেই ছোট্ট বালকটি গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভুগতে শুরু করেন ১০ বছর বয়সেই। চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন কম করে হলেও এক হাজার ডলার। নিজের ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ প্রথমে রাজি হয়েছিল। পরে নিজেরাই অপারগতা প্রকাশ করে। মেসির বাবা নিরুপায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে গেলেন বুয়েন্স আয়ার্সের বিখ্যাত ক্লাব রিভার প্লেটে। তারাও এক কথায় বের করে দিলেন মেসি এবং তার বাবাকে।messi

এ সময় বার্সেলোনা কর্মকর্তার চোখে পড়েন মেসি এবং ঘটনাচক্রে মেসি উড়াল দিলেন রোজারিও থেকে বার্সেলোনায়। ২০০০ সাল থেকে লা মাসিয়ায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে শুরু করেন এক ফুটবলার। আগামীর বিশ্ব হবে যার পদানত। কেউ হয়তো তখন কল্পনাও করতে পারেনি, লা মাসিয়ায় কে গড়ে উঠছে!

ফ্রান্সের ডেভিড ত্রেজেগের মত মেসিও হতে পারতেন স্প্যানিশ ফুটবলার। ত্রেজেগে আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত হয়েও ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলাকে বেছে নেন। মেসির কাছেও প্রস্তাব ছিল, কিন্তু দেশপ্রেম বলে একটা কথা আছে। যেটা মেসির মধ্যে জাগ্রত। তিনি স্পেনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন আর্জেন্টিনার জার্সিই গায়ে তুলে নেবেন। ২০০৫ সালে জিতেছিলেন যুব বিশ্বকাপ।

২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন স্বর্ণপদক। আর্জেন্টাইনরা প্রমাদ গুনতে শুরু করলো, ১৯৯৩ সালের পর যে হাহাকার সেটা হয়তো এই মেসির পায়ের জাদুতেই কেটে যাবে; কিন্তু বার্সেলোনার মেসি যেন কোনভাবেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারলেন না রাজকীয় আকাশি-সাদা জার্সিটা পরে।

২০১০ বিশ্বকাপে হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল জার্মানির কাছে হেরে। ২০১৪ বিশ্বকাপে এসে ঠিকই পারলেন খোলস ছাড়তে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আলসেলেস্তেদের নিয়ে গেলেন ফাইনালে; কিন্তু ফাইনালটা প্রহসন হয়েই থাকলো ওই সময় পর্যন্ত টানা চারটি ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ীর কাছে। পুরস্কার বিতরণীতে মেসি যখন বিশ্বকাপ ট্রফিটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, ট্রফিটা নিজেই ¤্রয়িমাণ হয়ে পড়ছিল তার সামনে।

পরের বছর কোপা আমেরিকার ফাইনাল। চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে। প্রতিপক্ষ স্বাগতিকরা। এই ম্যাচেও টাইব্রেকারে হেরে হতাশায় মুষড়ে পড়তে হলো মেসিকে। এক বছর পর কোপার শতবর্ষী টুর্নামেন্ট বসলো যুক্তরাষ্ট্রে। এবারও ফাইনালে উঠে গেলেন মেসি এবং তার সতীর্থরা।

পুরো টুর্নামেন্ট যেভাবে মাতাচ্ছিল আর্জেন্টিনা, তাতে নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন ধরে নেয়া হয়েছিল তাদের; কিন্তু ফাইনালে আবারও খেলা ট্রাইব্রেকারে। এখানে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শটটা নিতে এসে মেসি উড়িয়ে দিলেন বারের ওপর দিয়ে। ব্যস! আর্জেন্টিনার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেলো তখনই।

লিওনেল মেসি সঙ্গে সঙ্গেই জার্সি টেনে তুলে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে কিন্তু পরাজয় কোনভাবেই ঠেকানোর মত নয়। অবিন্যাস্ত মুখভর্তি দাড়ির ফাঁকে চলচল করা মেসির দুটি চোখ তখন জানান দিচ্ছিল, এই ট্রফি আর তার নয়।

ট্রফি নিয়ে চিলির আনন্দ উদযাপনের মধ্যেই মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি যা যা পারি। সব করেছি। জাতীয় দলের হয়ে আমার দিন শেষ। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছি। অথচ একবারও জিততে পারলাম না। অন্য যে কোন কিছুর চেয়ে এই একটা জিনিসই আমি চেয়েছি সবচেয়ে বেশি।’

টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেও যখন একজন যোগ্য সতীর্থের অভাবে শিরোপাটা হাতে তোলা যায় না, তখন মেসির মত ফুটবলারেরও অভিমান হতে পারে। আবেগে ভেসে যেতে পারেন তিনিও। সুতরাং তিনি হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আর্জেন্টিনা এবং বাকি বিশ্ব মেনে নিতে পারছে না মেসির এই চলে যাওয়া। পুরো ফুটবল বিশ্বই এখন সমস্বরে আওয়াজ তুলছে, ‘ফিরে এসো মেসি।’

জাগো চ্যাম্পিয়নের ৬ষ্ঠ সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

আইএইচএস/এবিএস

আরও পড়ুন