ক্লাবগুলোর টালবাহানা বন্ধ হবে কবে
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আসলে কি? ঘরোয়া ক্রিকেটে সীমিত ওভারের ফরম্যাটের এক নম্বর আসর, নাকি এর আরও কোন পরিচয় আছে? ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যাদের নীবিড় সম্পর্ক, রাজধানীর ক্রীড়াঙ্গনের খুটিনাটি যাদের নখদর্পনে তারা বলবেন- ফুটবল-হকির মত ক্রিকেটে প্রিমিয়ার লিগও শুধুই একটি আসর নয়।
ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় অংশের রুটি-রুজির উৎস। এ আসর খেলে অন্তত ১৫০ ক্রিকেটার জীবন ধারণ করেন। এটাই তাদের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম। এই লিগ খেলে পাওয়া অর্থ দিয়ে নিজের পকেট খরচ চালানোর পাশাপাশি অনেকের পরিবারের ভরণ-পোষন হয়।
তাই ক্রিকেটারদের মূল অংশ সারা বছর মুখিয়ে থাকেন, কবে হবে ক্রিকেটের দলবদল। নতুন বছর কত অর্থ মিলবে? ভাববেন না, সব ক্রিকেটারেরই বুঝি এমন অবস্থা। তাদের মধ্যে যাদের গায়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারের তকমা, তাদের সমস্যা নই। তারা ভাল আছেন। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা মানেই বেশ বড় অংকের ম্যাচ ফি, দৈনিক ভাতা ও বোনাস।
আজকাল জাতীয় দল , ‘এ’ দলে খেলেও অর্থ মেলে। আর বিসিবির চুক্তির আওতায় আসতে পারলে তো কথাই নেই। ক্যাটাগরি ভেদে একেক শ্রেণির মাসোহারা একেকরকম। তারপরও গড়পড়তা লাখ খানেক টাকা মেলে হয়তো; কিন্তু সে সংখ্যা খুবই সীমিত।
ওপরে যাদের কথা বলা হলো তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ২৫ থেকে ৩০ জন। তার মানে ১৫০ থেকে ১৬০ জনের মত ক্রিকেটার আছেন, যাদের ঢাকা লিগ ছাড়া ৃসে অর্থে টাকা প্রাপ্তির সুযোগ নেই। কেউ কেউ হয়ত বলবেন, কেন জাতীয় লিগ-এনসিএল আর বিপিএলেও তো অর্থ মেলে। তা মেলে; কিন্তু মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটারদের বড় অংশ বিপিএল খেলার সুযোগই পান না। বিসিএলেও অনেকটা তাই। কাজেই ক্রিকেটারদের মূল ও বড় অংশের কাছে ঢাকা লিগ হলো ‘হারাধনের একটি ছেলে।’
সেই বহুল কাঙ্খিত পারিশ্রমিক পেতে যদি ক্রিকেটারদের পদে পদে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। পাওনা পেতে এর- ওর কাছে ধরনা দিতে হয়। দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ না কাল, কাল না পরশু- শুনে শুনে হতাশায় দিন কাটে- তখন কার ভালো লাগে? দুঃখজনক হলেও সত্য আজকাল লিগ শেষে এমন ভোগান্তির মুখেই ক্রিকেটাররা। কেউ কেউ এটাকে ‘বিপিএলের বাতাস’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে আসল সত্য হলো, ক্লাবগুলোর এ নেতিবাচক মানসিকতা তৈরিই হয়েছে প্লেয়ার্স বাই চয়েজ সিস্টেমে দল বদল হওয়ায়। গতবারের মত এবারো কিছু ক্লাব বোর্ডের বেঁধে দেয়া শর্ত মেনে পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। ওই তালিকায় ভিক্টোরিয়া, কলাবাগান একাডেমি, সিসিএস ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের নাম আছে। অভিযোগ আছে, এই চার ক্লাব বোর্ডের দেয়া চুক্তি অনুযায়ী মোট পেমেন্টের ৩০ ভাগ শোধ করেছে লিগ শুরুর আগে। তারপর মাঝামাঝি ও শেষে যে অংশ পরিশোধের কথা ছিল, তা দেয়াতেই আপত্তি।
রোজার মাস। ঈদ সমাগত। বছরের এই একটি দিনকে কেন্দ্র করে অন্য পেশাজীবিদের মত ক্রিকেটাররাও উৎসব আনন্দে মেতে উঠতে চান। অথচ হাতে পয়সা নেই। এমন নিদারুণ অর্থ কষ্টে অন্তত ৫০/৬০ ক্রিকেটার। সেই তালিকায় ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, তুষার ইমরানের মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাদিফ চৌধুরী, মমিনুল ও ডলার মাহমুদের মত প্রায় প্রতিষ্ঠিত পারফরমার এবং আল আমিন, আবদুল মজিদ, মেহেদি হাসান লিমন, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাইফ হাসান, সাইফউদ্দীনের মত তরুণরাও আছেন।
পাওনা অর্থ চেয়ে না পেয়ে কেউ কেউ উল্টো ক্লাব কর্তাদের রোষানলেও পড়েছেন। ভিক্টোরিয়ার কর্মকর্তারা তাদের অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরী আর দুই সিনিয়র ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ ও ডলার মাহমুদের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছেড়ে দেবার অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, হয় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে না হয় পাওনা টাকা না পেয়ে দুঃখে- ক্ষোভে ইচ্ছে করে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে বোর্ডে লিখিত অভিযোগও করেছে ভিক্টোরিয়া।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ক্রিকেটারদের পাওনা নিয়ে ক্লাবগুলোর টালবাহানা আগেও ছিল। তবে তার একটা মাত্রা ছিল। তখন বড়জোর ২০-২৫ ভাগ কিংবা তারও কম টাকা পেতে কষ্ট হতো; কিন্তু এখন প্লেয়ার্স বাই চয়েজে দল বদল হওয়ায় সে অর্থ প্রাপ্তির ভাগ কমেছে অনেক। এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে আবার আগের মত ফ্রি ট্রান্সফার সিস্টেমে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই।
যেখানে ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা থাকবে। ইচ্ছেমত দল বেছে নিতে পারবেন। মর্জি মাফিক দর হাঁকানোর ক্ষমতাও থাকবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই প্রক্রিয়ার দল বদলের সময় ক্লাবগুলোকে মোটা অংকের অর্থ গুনতে হয়। কারণ বেশিরভাগ ক্রিকেটার অন্তত ৭৫ভাগ অগ্রীম নিয়ে তারপর সই করেন।
সে কারণেই বড় ক্লাবগুলো কৌশলে প্লেয়ার্স বাই চয়েজে দলবদল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্লেয়ার্স বাই চয়েজে বলে দেয়া আছে, প্রথম কিস্তিতে ৩০ শতাংশ অর্থ পাবেন ক্রিকেটাররা। আর কোন ক্লাব টাকা পরিশোধ না করলে বিপিএলের মত বোর্ড দিয়ে দেবে। না হয় মধ্যস্ততা করবে।
এতে করে ক্রিকেটারদের অগ্রীম বড় অংক টাকা পাবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ক্লাবগুলো প্রথম কিস্তি দিয়ে তারপর গড়িমসি শুরু করে দেয়। এটাই আসলে প্লেয়ার্স বাই চয়েজের নেতিবাচক দিক। আগের মত দলবদল হলে ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা থাকতো। আগাম অর্থ লাভের সুযোগটাও থাকতো বেশি। এখনকার মত পাওনা শোধে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো না।
জাগো চ্যাম্পিয়নের ৬ষ্ঠ সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
আইএইচএস/এবিএস