নাদিফ-শুভ-ডলারের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ!
প্রিমিয়ার লিগ শেষে ক্লাব পাড়ায় এখন একটাই খবর- ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, কলাবাগান একাডেমি এবং ক্রিকেট কোচিং স্কুল (সিসিএস)-এর ক্রিকেটাররা তাদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পাওনা পায়নি। ওই চার ক্লাব এখনও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি।
বিসিবি থেকে ওই চার ক্লাবকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে; কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। রোববার বিকেল পর্যন্ত ক্রিকেটারদের পাওনা অর্থ মেলেনি। এদিকে রোববার ক্লাব পাড়ায় ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা! ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব তাদের তিন সিনিয়র ক্রিকেটার অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দী শুভ ও ডলার মাহমুদের বিরুদ্ধে বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
ক্লাব সভাপতি নেসার আহমেদ কাজল জাগো নিউজের কাছে সে অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। আলোচিত এই তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কি সেই অভিযোগ? ভিক্টোরিয়া সভাপতি এ প্রশ্নের জবাবে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো- নাদিফ, সোহরাওয়ার্দী শুভ এবং ডলার মাহমুদ ইচ্ছে করেই ম্যাচ হারিয়ে দিয়েছেন।
সেটা কীভাবে?
নেসার আহমেদের ব্যাখ্যা, ‘আমরা বোর্ডের কাছে তা তদন্ত করার আবেদনই জানিয়েছি।’ কাজলের অভিযোগ, আমাদের মনে হয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে দুই পর্বের ম্যাচেই আমাদের কিছু কিছু ক্রিকেটার ইচ্ছে করে খারাপ খেলে দলকে হারিয়ে দিয়েছেন।
সেটা কি অর্থের বিনিময়ে? নেসার আহমেদ কাজল অবশ্য সরাসরি সে অভিযোগ তোলেননি। তার ব্যাখ্যা, রূপগঞ্জের সাথে প্রথম পর্ব ও সুপার লিগে আমাদের নাদিফ এবং ডলার মাহমুদ খুব ভাইটাল সময়ে লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন। যেখান থেকে ম্যাচ ফস্কে গেছে। তাই আমাদের সন্দেহ হয়েছে, তারা ইচ্ছে করেই দলের সর্বনাশ করেছে। প্রথম পর্বে ৩১৫ রানের পাহাড় সমান আর সুপার লিগে ২৫৮ রানের বড় স্কোর গড়েও পারিনি। দুবারই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের ফিল্ডাররা ক্যাচ ফেলে দিয়েছিল। সুপার লিগে রূপগঞ্জ ২৫৯ রানের টার্গেট তাড়া করে ৮২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও আমাদের হারিয়েছে। সে ম্যাচে মোশাররফ রুবেলের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিল ডলার। তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল বলেই আমরা নাদিফ চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দী শুভ এবং ডলার মাহমুদসহ কয়েকজনকে শো ‘কজ করেছিলাম; কিন্তু তারা শো’কজের কোন জবাব দেয়নি।’
সে কারণেই নাকি বোর্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ। তবে নাদিফ, শুভ ও ডলার যে রূপগঞ্জের বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে দিয়েছেন, বোর্ডের কাছে দেয়া চিঠিতে সরাসরি তেমন অভিযোগ নেই।
নেসার আহমেদ কাজল জানান, ‘আমরা ঠিক নিশ্চিত না যে আসলে কি ঘটেছে? নাদিফ, ডলার ও শুভ কি আসলে রূপগঞ্জের সাথে টাকা খেয়ে ম্যাচ ছেড়েছে। না কি, নিজেদের পাওনা সময় মত না পেয়ে রাগে ইচ্ছে করে খারাপ খেলে ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে।’
কাজলে শেষ কথা, আমরা বলছি না নাদিফ, শুভ ও ডলার ভিন্ন কোন ক্লাবের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এমন করেছে। তবে তাদের বাজে ও অপ্রত্যাশিত পারফরমেন্সই আমাদের অমন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা বোর্ডে চিঠি দিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছি। বোর্ড খুঁটিয়ে দেখবে আসলে কি ঘটেছে? ডলার, নাদিফ ও শুভ আসলে কি করেছিল?’
এদিকে যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তাদের একজন সোহরাওয়ার্দী শুভ এ অভিযোগ গায়ে মাখতে নারাজ। জাগো নিউজের কাছে তার সোজা সাপ্টা কথা, ‘এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা। এসব আসলে অর্থ না দেবার পাঁয়তারা। আমরা সময়মত টাকা চেয়ে পাইনি। যেখানে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ অর্থ পাবার কথা সেখানে সেই শুরুতে যে ৩০ শতাংশ অর্থ পেয়েছিলাম, সেটাই আছে। আর এক টাকাও পাইনি। সময় মত টাকা তো মেলেইনি, উল্টো কারণ দর্শাও নোটিশ মিলেছে।’
কিন্তু ক্লাব সভাপতির অভিযোগ আপনারা নাকি ওই শো’ কজের জবাব দেননি? ‘হ্যাঁ দেইনি। কেন দেব? আমরা পাওনা টাকা চেয়ে পাইনি। আবার শো’ কজ- তার জবাব দিতে যাব কোন দুঃখে?’
ভিক্টোরিয়া সভাপতির জোর দাবি, ‘ আমরা অবশ্যই টাকা দিয়ে দেব। অর্থ দেব না- এমন কথা কখনই বলিনি।’ কিন্তু বোর্ডের বেধে দেয়া শর্ত মেনে তো দেননি। এ প্রসঙ্গে নেসার আহমেদ কাজলের ব্যাখ্যা, হ্যাঁ তা দিতে পারিনি। সেটাও ইচ্ছে করে নয়। ঠেকে। আমাদের তো আর নির্দিষ্ট কোন স্পন্সর বা খাত নেই- যেখান থেকে অর্থ আসে। ডোনেশনই ভরসা; কিন্তু এখন রোজার মাস। আমাদের ডোনারদের কেউ কেউ ওমরাহ করতে চলে গেছেন। ঈদ সামনে তাই কেউ প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে পারছেন না। তাই দেরি হচ্ছে। আশা করছি ঈদের পর পাওনা শোধ হয়ে যাবে।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি