ইতিহাস বদলাতে পারবে আর্জেন্টিনা!
তিনি বিশ্বসেরা ফুটবলার। পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহটার সেরা ফুটবলারও বলতে অনেকে দ্বীধা করেন না। একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি যদি হাতে তুলে নিতে পারতেন, তাহলে নিশ্চিত, সবাই তাকে পেলে-ম্যারাডোনার চেয়েও সেরা বানিয়ে ফেলতেন। তিনি লিওনেল মেসি। পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। সেই লিওনেল মেসির কণ্ঠেও কী উদগ্র বাসনা, কেমন হতাশা আর অনুনয়ের সুর, ‘এবার ইতিহাস বদলাতে চাই।’
তার মত একজন ফুটবলার, প্রায় এক দশক ধরে চেষ্টা করছেন, আর্জেন্টিনার ইতিহাসটা বদলাতে পারছেন না। ১৯৯৩ সালের পর এক অলিম্পিকের একটি স্বর্ণপদক ছাড়া ফুটবল বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় দলটির কোন শিরোপা নেই। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই তারকাভর্তি টাইটানিক নিয়ে এসে কোন এক লুকিয়ে থাকা বরফখণ্ডে ধাক্কা লেগে তলিয়ে যাওয়া বরণ করে নিতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
মেসির ছোঁয়ায় অবশ্য ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। উঠেছিল ২০১৫ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও; কিন্তু ভাগ্যের সিকে ছিঁড়তে পারেনি আর্জেন্টাইনরা। বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা অধরা থেকেছে আর্জেন্টিনার কাছে। কোপার ফাইনালে সান্তিয়াগোতে চিলির সামনে পড়েও হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে মেসিদের।
টানা তৃতীয়বার একটি আন্তর্জাতিক ফুটবলের ফাইনালে আর্জেন্টিনা। এবারও কী তবে খালি হাতে ফিরতে হবে লিওনেল মেসিকে? যদিও গত দিনগুলোতে যে আর্জেন্টিনাকে দেখা যাচ্ছে, তাতে আর্জেন্টাইনদের অতি বড় শত্রুও চিলির পক্ষে বাজি ধরতে সাহস পাচ্ছে না। গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ৫ ম্যাচেই প্রতিপক্ষের জালে ১৮ গোল দিয়েছে আর্জেন্টিনা।
শুরুতে ইনজুরির কারণে মেসি খেলতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই তিনি অ্যাকশনে। বদলি হিসেবে নেমে ২৬ মিনিটের ব্যবধানেই পানামার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। এরপর বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরমার বার্সা তারকা। তার সতীর্থরাও রয়েছে সেরা ফর্মে। এ অবস্থায় আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ করা কাউকেই পাওয়া যাবে না।
সান্তিয়াগোয় স্বাগতিক চিলির কাছে হেরে সেই বিষাদময় রাতের কথা এখনও হয়তো ভুলতে পারেননি মেসি। কয়েকশ কিলোমিটার দূরে নিউজার্সিতে সেই আক্ষেপ দূর করার মিশনে এখন মেসি অ্যান্ড কোং। গত এক বছরে মুখে চাপা দাড়ি ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন আসেনি মেসির। দেশকে ট্রফি দেয়ার অদম্য জেদও কমেনি। প্রমাণ করার তাগিদও কমেনি যে দেশকেও তিনি সোনার রাত উপহার দিতে পারেন। সেই মিশন সফল করে সত্যি সত্যি কী মেসি পারবেন ইতিহাসটা বদলে দিতে!
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসিকে নিয়ে যা প্রায় ভাবা যায় না, দেশের জার্সিতে নামলে সেসব শুনতে হয় তাকে। সমালোচকদের বুলেটগুলো তখন অনেক বেশি করে বিদ্ধ করে তাকে লক্ষ্য করে। মাত্র কয়েকদিন আগেই তো দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিও মেসির নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই ম্যারাডোনা আবার মেসিদের উদ্দেশ্ করে বললেন, এবার কোপার শিরোপা নিয়ে আসো, না হয় দেশেই ফিরো না। সুতরাং ফাইনালে তাই মাঠের ভেতরের পাশাপাশি বাইরের চ্যালেঞ্জটাও সামলাতে হবে মেসিকে।
১৯৯৩-র পর আর্জেন্টিনা পারেনি; কিন্তু ফ্রান্স-স্পেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ব্রাজিল দুইবারসহ মোট পঞ্চমবার বিশ্বকাপ জিতেছে। কোপা জিতেছে দুইবার। কনফেডারেশন কাপ তো টানা তিনবার; কিন্তু আর্জেন্টিনা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। মেসি বলছেন, ‘আর্জেন্টিনার যে ফুটবল ঐতিহ্য, তাতে আমাদের আরও ট্রফি জেতা উচিত। ট্রফি জেতার দিক দিয়ে আমরাও বাকি বড় দেশগুলোর সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে থাকতে চাই।’
অনেকের মতেই এটাই হয়তো আর্জেন্টিনা তারকার শেষ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ। মেসি অবশ্য এগুলো নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘জানি না এটাই আমার দেশের হয়ে ট্রফি জেতার শেষ সুযোগ কি না; কিন্তু আমাদের সব কিছু উজাড় করে দিতে হবে শতবর্ষের কোপা জিততে। এ নিয়ে চতুর্থবার কোনও ফাইনাল খেলছি। এবার ইতিহাসটা বদলাতে চাই।’এবার দেখার বিষয়, মেসি সত্যি সত্যি পারেন কি না ইতিহাসটা বদলে দিতে!
আইএইচএস/আরআইপি