প্রিমিয়ার লিগে জাগো নিউজের সেরা একাদশ
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জমজমাট আসর শেষ হয়েছে বুধবার। শুরু থেকে নানা বিতর্ক জন্ম দেওয়া এ লিগের শিরোপা জিতে নিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনী লিমিটেড। তবে দারুণ জমজমাট এ আসরে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত শিরোপা দৌড়ে ছিল আরও দুটি দল। গত এক দশকে এবারই প্রথম জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটার খেলেছেন এ লিগে।
যদিও জাতীয় দলের তারকাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন নবীনরাও। সুতরাং নবীন-প্রবীণদের নিয়ে জাগোনিউজ২৪.কম তৈরি করেছে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের সেরা একাদশ।
দেশের স্বনামধন্য সাতজন সাংবাদিকদের বিবেচনায় তৈরি করা হয়েছে এ একাদশ। ওপেনিং জুটি নির্বাচন করতেই ঘাম ছুটে গেছে নির্বাচকদের। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনায় ছিলেন ভিক্টোরিয়ার আব্দুল মজিদ এবং প্রাইম দোলেশ্বরের রকিবুল হাসান। তবে লিগের শেষদিকে এসে ওপেনিংয়ে খেলা রকিবুলের জায়গায় নিয়মিত ওপেনিংয়ে খেলা আব্দুল মজিদকেই বেছে নিয়েছেন তারা।
এছাড়াও উইকেট রক্ষক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের মধ্যে। যদিও লিগের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার কারণে মুশফিককেই বেছে নিয়েছেন নির্বাচকরা। একাদশে অধিনায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
একাদশে দু’জন পেসারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে থাকছেন তাসকিন আহমেদ। তবে বিশেষ প্রয়োজনে দ্বাদশ খেলোয়াড় কামরুল ইসলাম রাব্বিকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হতেও পারে। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে থাকছেন লিগের সর্বোচ্চ শিকারী চতুরঙ্গ ডি সিলভা। বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন এই লংকানই।
একাদশে তিনজন নবীন তারকা স্থান করে নিয়েছেন। আব্দুল মজিদের সঙ্গে রয়েছেন ভিক্টোরিয়ার আরেক নবীন ব্যাটসম্যান আল-আমিন। এছাড়াও রয়েছেন এবারের লিগে আবাহনীকে দারুণ ফিনিশিং এনে দেয়া ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই একাদশে চারজন করে ক্রিকেটার রয়েছেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব এবং আবাহনী লিমিটেড থেকে। একজন করে রয়েছেন মোহামেডান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্র এবং শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের। অবশ্য দ্বাদশ ক্রিকেটারকে হিসেবে ধরলে ভিক্টোরিয়ার ৫ জন।
কে কে আছেন জাগো নিউজের সেরা একাদশে?
তামিম ইকবাল খান (আবাহনী লিমিটেড), আব্দুল মজিদ (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), মুমিনুল হক (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), আল-আমিন (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), মুশফিকুর রহিম (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব), সাকিব আল হাসান (আবাহনী লিমিটেড), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (আবাহনী লিমিটেড), চতুরঙ্গ ডি সিলভা (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), মাশরাফি বিন মর্তুজা (কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, অধিনায়ক) এবং তাসকিন আহেমদ (আবাহনী লিমিটেড)
দ্বাদশ : কামরুল ইসলাম রাব্বি (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
তামিম ইকবাল খান (আবাহনী লিমিটেড)
৪৭.৬০ গড়ে ৭১৪ রান, দুইটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৯০.৭২
এবারের লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ব্যাট হাতে যেকোনো সময় ঝড় তুলতে পটু তিনি। লিগে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের অধিকারীও তিনি।
আব্দুল মজিদ (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
৪৪.১২ গড়ে ৭০৬ রান, দুইটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৮৫.৬৫
টানা দুইটি সেঞ্চুরি করেছেন এবারের লিগে। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে লিগের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।
মুমিনুল হক (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
৪১.৯৩ গড়ে ৬৭১ রান, একটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৯৫.৯২
ওয়ানডেতে তার সঙ্গে যায় না, এমন তকমা দিয়েই জাতীয় দল থেকে বিচ্যুত তিনি। তবে এবারের লিগে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে জায়গা করে নিয়েছেন জাগো নিউজের সেরা একাদশে। লিগের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।
আল-আমিন (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
৪৮.০০ গড়ে ৬৭২ রান, একটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৮৮.০৭, ৩৪.৪৩ গড়ে ১৬ উইকেট, ইকোনমি ৪.৮৭
ব্যাটে বলে দারুণ ধারাবাহিক তিনি। এবারের লিগে হয়েছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারী। প্রয়োজনের সময় বল হাতেও তুলে নিতে পারবেন।
মুশফিকুর রহিম (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব)
৪৫.৮৪ গড়ে ৫৯৬ রান, একটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৮০.৯৭, ক্যাচ ১৫, স্ট্যাম্পিং ৭
ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে সক্ষম। এবারের লিগের অষ্টম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। উইকেটের পেছনেও বিশ্বস্ত। লিগের সর্বাধিক ২২টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি।
সাকিব আল হাসান (আবাহনী লিমিটেড)
৩০.০০ গড়ে ২১০ রান, দুইটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ১৩১.২৫, ১৩.৭৭ গড়ে ১৮ উইকেট, ইকোনমি ৪.৩৮
এবারের লিগে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন তিনি। লিগের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। বল হাতে আরও মারাত্মক এ স্পিনার। মাত্র ৮ ম্যাচেই স্থান করে নিয়েছেন সেরা তালিকায়।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব)
৪৯.৭০ গড়ে ৪৯৭ রান, দুইটি সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৭৭.৮৯, ১৯.০৪ গড়ে ২১ উইকেট, ইকোনমি ৫.৩৮
লিগের সেরা অলরাউন্ডার। ব্যাট-বল দুটোতেই প্রথম পর্ব শেষে সেরা পাঁচে ছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে দল সুপার লিগে উঠতে না পারায় নিজেকে ছাড়িয়ে যাতে পারেননি তিনি।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (আবাহনী লিমিটেড)
৭৭.৭৫ গড়ে ৬২২ রান, পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ১০৪.৮৯, ২৮.৮৬ গড়ে ১৫ উইকেট, ইকোনমি ৪.২০
দুর্দান্ত ফিনিশিং দেয়ায় জুরি নেই তার। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতেও পারেন যখন তখন। পাশাপাশি বল হাতেও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন।
চতুরঙ্গ ডি সিলভা (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
২৪.১৬ গড়ে ২৯০ রান, স্ট্রাইক রেট ১০৯.৪৩, ১৮.৯০ গড়ে ৩০ উইকেট, ইকোনমি ৪.৭৪
দলের একমাত্র বিদেশী খেলোয়াড়। এবারের লিগের সর্বাধিক উইকেট শিকারি। স্পিনের মায়াজালে যে কোন দলকে করে দিতে পারেন বিধ্বস্ত।
মাশরাফি বিন মর্তুজা (কলাবাগান ক্রীড়া চক্র)
২০.২২ গড়ে ২২ উইকেট, ইকোনমি ৪.৮৩
প্রথম পর্ব শেষে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যেই তিনি ছিলেন সেরা। লিগে ধারাবাহিকভাবেই দারুণ বোলিং করেছেন তিনি। প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও হতে পারেন ভয়ঙ্কর। লিগের দ্রুততম সেঞ্চুরিটি হাঁকিয়েছেন তিনি।
তাসকিন আহেমদ (আবাহনী লিমিটেড)
২১.০৭ গড়ে ২৬ উইকেট, ইকোনমি ৪.৭৮
দুর্দান্ত গতি আর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে যে কোন দলকেই বিপদে ফেলতে সিদ্ধহস্ত এ পেসার। প্রয়োজনীয় সময়ে তুলে দিতে পারেন ব্রেক থ্রু।
দ্বাদশ : কামরুল ইসলাম রাব্বি (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)
২৭.৯২ গড়ে ২৭ উইকেট, ইকোনমি ৫.৪৮
এবারের লিগে বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট শিকারি। ধারাবাহিকভাবেই পুরো লিগে দারুণ বল করেছেন তিনি।
আরটি/আইএইচএস/বিএ