হতবাক হাবিবুল বাশার!
দুই স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি অনুমোদনই শুধু নয়। দুই স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি হচ্ছে- তা আগেই জানা। বোর্ড প্রধানের কথায় আগেই মিলেছিল সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। সেটাই সত্য হলো। রোববার বিসিবির পরিচালক পর্ষদের সভায় সেটাই অনুমোদন পেল।
যেমনটা শোনা যাচ্ছিল, হয়েছে ঠিক তাই। তিন সদস্যের নির্বাচক প্যানেলের ওপর খবর ও নজরদারি করতে থাকবে আরও তিন জনের গড়া নির্বাচক কমিটি। কাজেই এটা আর চমক জাগানো খবর নয়। তবে একটা চমক আছে। বলা নেই, কওয়া নেই হুট করে তিন সদস্যের নির্বাচক প্যানেল থেকে কাটা গেছে হাবিবুল বাশার সুমনের নাম।
রোববারের বোর্ড সভার পর থেকে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক এখন থেকে আর জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সফল মিশনে নেতৃত্ব দেয়া বাশারকে জাতীয় নির্বাচক প্যানেল থেকে বাদ দিয়ে নারী ক্রিকেট দলের এক সদস্যের নির্বাচক কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচক প্যানেলে বাশারের জায়গায় নেয়া হয়েছে আরেক জাতীয় ক্রিকেটার সাজ্জাদ আহমেদ শিপনকে। হাবিবুল বাশার মহিলা নির্বাচক কমিটির প্রধান হতে পারেন- এমন গুঞ্জন ক্রিকেট পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল আগেই; কিন্তু তাই বলে তাকে মূল নির্বাচক প্যানেল থেকে সরিয়ে দেয়া হবে- এমনটা ভাবেননি কেউ।
কথা-বার্তায় পরিষ্কার বাশার নিজেও। অমন চিন্তা করেননি। রোববার বোর্ড সভায় তাকে জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বিমূঢ় হাবিবুল বাশার নিজেও। তিনি হতবাক। নির্বাক। বোর্ড সভা শেষ হতেই মিডিয়ার একের পর এক ফোন এলো তার কাছে। তবে কারো কাছেই সে অর্থে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। এক কথায় মুখ বন্ধই রেখেছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে শুধু জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। আমাকে জাতীয় দলের নির্বাচক কমিটি থেকে সরিয়ে নারী দলের নির্বাচক কমিটি প্রধান করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কি ই বা বলতে পারি বলুন! বোর্ডের যা মনে হয়েছে করেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনই মন্তব্য করতে রাজি না।’
আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য না দিলেও বাশারের ঘনিষ্টমহল জানিয়েছে, এভাবে নির্বাচক কমিটি থেকে বাদ পড়বেন- বাশার তা স্বপ্নেও ভাবেননি। তার ধারণা ছিল, জাতীয় দলের তিন সদস্যের নির্বাচক কমিটির সদস্য রেখে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে তাকে নারী দলের নির্বাচক কমিটির দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। মানসিকভাবে সে রকম কিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিলেন।
কিন্তু মূল নির্বাক কমিটিতে যে তিনি আর থাকবেন না, তাকে জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল থেকে বাদ দিয়ে শুধু নারী দলের নির্বাচক করা হবে- এটা কখনোই মাথায় আসেনি তার। খবরটা শুনে স্তব্ধ হলেও মনের দুঃখ-যন্ত্রনা নিজের ভেতরে চেপে রেখে মিডিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বিবৃতি দেননি।
তবে মুঠোফোন আলাপে ধরে আসা কণ্ঠই বলে দিচ্ছিল, বাশার যারপরনাই হতাশ। খুব কষ্ট পেয়েছেন। জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়কের মন খারাপ হতেই পারে। তাকে মূল নির্বাচক কমিটির সদস্য থেকে বাইরে নিয়ে এসে নারী দলের নির্বাচক করা হচ্ছে- এমন গুরুত্বপূর্ণ খবরটি বোর্ডের পক্ষ থেকে কেউ তাকে দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি।
একজন দেশ বরেণ্য ক্রিকেটার, যিনি টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সফল ব্যাটসম্যানদের অন্যতম, যার নেতৃত্বে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে প্রথমবার সেরা আটে জায়গা করে নিয়েছিল- তিনি নির্বাচক হিসেবে বেশ ক’বছর দক্ষতার সঙ্গে কাজও করেছেন।
তাকে জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল থেকে সরিয়ে নারী দলের নির্বাচক করা হচ্ছে- এ খবরটা তাকে বোর্ড থেকে আগে জানালে কি হতো? তাতে একজন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক তার প্রাপ্য সন্মান অন্তত পেতেন; কিন্তু বোর্ডের পরিচালক পর্ষদের সভায় তাকে না জানিয়ে নারী দলের প্রধান নির্বাচক করা রীতিমত মানহানিকর।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ ক্রিকেটার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে বাশারের। এখন যারা জাতীয় দলে সিনিয়র ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমার সেই পঞ্চপাণ্ডব মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ বাশারের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০০৭ সালে তিনি যেবার শেষ অধিনায়কত্ব করেছিলেন তখন তারা সবাই দলে।
এর মধ্যে মাশরাফি, সাকিব ও ইমরুল কায়েস বাশারের নেতৃত্বে খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় লিগ খেলতে শুরু করেন। এমন একজন নির্বাচককে বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ সরিয়ে নেয়া- প্রশ্ন জাগায় বৈকি! তবে কি বাশার এতদিন ভাল কাজ করেননি? তাই যদি হবে, তাহলে কেন আগে তার কাজের সমালোচনা হয়নি? কই আগের কোন বোর্ড সভায় তো তার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলা হয়নি!
বাশারের বদলে যাকে নেয়া হয়েছে, সেই সাজ্জাদ আহমেদ শিপনের মেধা ও প্রজ্ঞা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার বেশ কয়েক বছর ধরেই বয়স ভিত্তিক দলগুলোর নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন। নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে তার ধারণাও আছে যথেষ্ট। সাজ্জাদ আহমেদ শিপনকে আগামীতে বিবেচনায় আনা যেত; কিন্তু তাকে এখনই মূল দলের নির্বাচক করা, তাও আবার বাশারকে বাদ দিয়ে, বিস্ময় জাগায় বৈকি!
এআরবি/আইএইচএস/এমএস