সালাউদ্দীনের আবাহনী, ইমরানের চোখে দু’দলই সমান
‘সত্যি বিশ্বাসই হচ্ছে না; মোহামেডান-আবাহনী ক্রিকেট ম্যাচ বিকেএসপিতে। মানা যেত, মাঠ নেই। থাকলেও কোন আন্তর্জাতিক খেলার কারণে ব্যস্ত। তাহলে কিছু বলার ছিল না; কিন্তু মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম ও ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পুরোপুরি প্রস্তুত থাকার পরও দুই জনপ্রিয় দলের দ্বৈরথ বিকেএসপিতে! কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। নিজে থেকে কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। হাসি পাচ্ছে। আবার মনে দুঃখবোধ কাঁটার মত বিধছে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরের বহুল কাঙ্খিত বিগ ম্যাচটি বিকেএসপিতে কেন? বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কি এতই দুরাবস্থা?’
ওপরের ঝাঁঝমাখা কথাগুলো জাতীয় দলের সাবেক সহকারি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের দুই সুপার পাওয়ারের বুধবারের লড়াই নিয়ে জাগো নিউজের সাথে কথা বলতে গিয়ে অমন বিস্ময়মাখা কথা বলেন সালাউদ্দীন।
শুধু সালাউদ্দীনই নন সেই ৯০ দশকের মাঝামাঝি (১৯৯৬) থেকে গত বছর পর্যন্ত যিনি কোন না কোন বছর আবাহনীর প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন সেই সারোয়ার ইমরানও অবাক; আবাহনী-মোহামেডান বিগ ম্যাচ বিকেএসপিতে!
ইমরানের কথা, কেন হচ্ছে জানি না। বলতেও পারবো না। তবে হচ্ছে জেনেই অবাক লাগছে। গত ২০ বছরের অর্ধেকের বেশি সময় আমি আবাহনীকে কোচিং করিয়েছি, কোনোদিন দেখিনি সাদা-কালো আর আকাশী-হলুদ লড়াই বিকেএসপিতে।’
এবারের লিগে গাজী ট্যাংকের কোচিংয়ের দায়িত্বে থাকা সালাউদ্দীন আর ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা সারোয়ার ইমরান মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে মোহামেডান আবাহনী ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন।
এর মধ্যে সালাউদ্দীন বুধবারের দ্বৈরথে আবাহনীকে এগিয়ে রেখেছেন। আর সারোয়ার ইমরানের ধারনা, শক্তি ও সামর্থ্যরে কিছু তারতম্য থাকলেও দু’দলের সম্ভাবনা সমান সমান ৫০-৫০।
দু’দলের শক্তি-সামর্থ্য ও সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে সালাউদ্দীনের ব্যাখ্যা, ‘এমনিতেই কাগজে কলমে আবাহনী বেটার সাইড। তার ওপর সাকিব দলে আসায় বোলিং ও ব্যাটিং শক্তি বেড়েছে বেশ। তাই আমার মনে হয় আবাহনীই ফেবারিট। তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোসাদ্দেক সৈকত বেশ ভাল ফর্মে। আবাহনীর ব্যাটিং দৈর্ঘ্য ও গভীরতা দুই’ই বেশি। বোলিংটাও ভাল ছিল। তার সঙ্গে সাকিব আসায় পুরো শক্তি বেড়ে গেছে। কাজেই আমার হিসেব নিকেশ আবাহনীর দিকেই ঝুঁকেছে বেশি।’
সালাউদ্দীনের মূল্যায়ন, সাকিবের অন্তর্ভুক্তিতে আবাহনী শ্রেয় থেকে শ্রেয়তর হয়েছে। দলটির শক্তির ভারসাম্য বেড়েছে। বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই শক্তি বেড়েছে। বিপরীত অবস্থা মোহামেডানের। দলটি শুরু থেকে ভালই খেলছিল; কিন্তু তুলনামুলক দূর্বল সিসিএসের কাছে হারের পর মোহামেডান শিবির কেমন যেন চুপসে গেছে। আমার মনে হয় ছন্দপতন হয়েছে। কোন কোন সময় একটি জয় দলকে অনেক চাঙ্গা করে দেয়। আবার অনাকাঙ্খিত হারে মনোবল ভেঙ্গে যায়। কেন যেন মনে হচ্ছে মোহামেডানের হয়েছে সেই অবস্থা। মুশফিকুর রহিমই পারে নিজে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে। মুশফিক ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারলে ভিন্ন কথা। না হয় আবাহনীর সম্ভাবনাই বেশী।’
আবাহনীর সাবেক প্রশিক্ষক সারোয়ার ইমরানও মানছেন আবাহনীই কাগজে কলমে এগিয়ে। তারও কথা, ‘আবাহনীর ব্যাটিং মোহামেডানের চেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি। মোহামেডানের সম্ভাবনার বড় জায়গা হচ্ছে ‘মুশফিকের ব্যাট।’
তারপরও মাঠের লড়াইয়ে সারোয়ার ইমরান কাউকে এগিয়ে রাখার পক্ষে নন। দীর্ঘ দিন আবাহনীকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা থেকে তার ভালই জানা, ঘরোয়া ক্রিকেটের আগের সেই রমরমা দিন নেই। এখন আর আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে মাঠ ভিড়ে না। উত্তেজনার পারদ সেভাবে ছড়ায় না।
তারপরও অন্য আট দশটি ম্যাচের চেয়ে এ খেলার আবহাওয়া ভিন্ন। কর্মকর্তারা অনেক বেশি সিরিয়াস থাকেন। ভাল খেলার একটা অন্যরকম তাড়া কাজ করে। সব মিলে এখনো আবাহনী-মোহামেডান ঐতিহ্যর লড়াই স্নায়ুরও বটে।
এ ম্যাচে সেই দল ভাল করবে, যারা ১০০ ওভার স্নায়ু ঠিক রাখতে পারে। সারোয়ার ইমরান ঠিক সেই জায়গা চিহ্নিত করে বলেছেন, এ ম্যাচে শক্তি-সামর্থ্যরে বাইরেও হিসেব নিকেশ থাকে। সে আলোকেই বলছি , কাগজে কলমে আবাহনীকে শ্রেয়তর দল মনে হলেও মাঠে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। যে কেউ জিততে পারে।’
আইএইচএস/এমএস