চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ১১তম শিরোপা রিয়ালের
টাইব্রেকারের পঞ্চম শটে গোল করেই যেন সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন রোনালদো। হয়ত রিয়াল মাদ্রিদের ভাগ্য তার গোলেই নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল। উল্লাসে মেতে উঠলো ঐতিহাসিক সানসিরোতে থাকা হাজার চল্লিশেক রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক। রোনালদোর মত সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এগারতম শিরোপা জিতলো গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। তৃতীয়বার ফাইনালে উঠেও জয় বঞ্চিত থাকতে হলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে।
চিত্রনাট্যের শুরুটাও হয়েছিল রিয়ালের গোল দিয়ে। ১৫ মিনিটেই টনি ক্রুসের বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি কিক থেকে বেলের মাথা ছুঁয়ে বল রামোসের পায়ে আসলে; আলতো টাচে অ্যাটলেটিকোর গোলকিপারের পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়িয়ে রিয়াল শিবিরে উল্লাসের আবহ এনে দেন রিয়ালের এই অধিনায়ক। গোল খাওয়ার পরেই যেন মাঠে প্রতিশোধের নেশায় মেতে ওঠে ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো। একের পর এক আক্রমণ করে রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্সকে কাঁপিয়ে দেন গ্রিজম্যান-টরেসরা।
বিরতির পরেই জমে ওঠে দু দলের লড়াই। ৪৬ মিনিটে আগুস্তো ফার্নান্দেজের পরিবর্তে কারাস্কোকে মাঠে নামিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন সিমিওনে। ৪৭ মিনিটে টরেসকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করলে পেনাল্টি পায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা গ্রিজম্যান যেন পেনাল্টি নিতে এসে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তার বা পায়ের জোড়ালো শট বারে লেগে ফিরে আসলে ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তারপরেও ম্যাচের হাল ছাড়েনি কোকে-গাবিরা। বায়ার্ন মিউনিখ-বার্সেলোনার মত দলকে হারিয়ে যারা ফাইনালে উঠেছে তাঁরা কি এত সহজেই রিয়ালকে ছেড়ে দিবে? হলোও তাই।
৫২ মিনিটে কার্ভাহাল ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়লে কিছুটা বিপাকে পড়ে রিয়াল। সে সুযোগেই ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ৭৯ মিনিটে হুয়ানফ্রানের ক্রস থেকে গোল করে অ্যাটলেটিকোকে ম্যাচে ফেরান বদলি হিসেবে নামা কারাস্কো। শেষের দিকে দু’দলই কিছু সুযোগ সৃষ্টি করলে সেগুলো আর গোলের দেখা পায়নি। শেষ মিনিটে কর্ণার পেলেও ২০১৪ সালের মত কোন রূপকথার জন্ম দিতে পারেননি রামোস। ১-১ এ সমতায় থেকে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত মিনিটে।
অতিরিক্ত সময়েও চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। রিয়াল মাদ্রিদের একের পর আক্রমণ অ্যাটলেটিকোর চীনের প্রাচীরের ন্যায় ডিফেন্সে গিয়ে থেমে যায়। পুরো ম্যাচেই বাজে খেলেছেন তিনবারের ব্যালন জয়ী রোনালদো। নিজের নামের প্রতিও তেমন সুবিচার করতে পারেননি হান্ড্রেড মিলিয়ন ম্যান গ্যারাথ বেল। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম তিনটি শটেই উভয় দল গোলের দেখা পায়। চতুর্থ শটে রিয়ালের হয়ে রামোস গোল করলেও বিপত্তি বাঁধিয়ে বসেন অ্যাটলেটিকোর হুয়ানফ্রান। তার করা চতুর্থ শটটি বারে লেগে ফিরে আসলেই রিয়ালের ভাগ্য বর্তায় রোনালদোর উপর। কিন্তু এ যাত্রাতেও রিয়ালকে নিরাশ করেননি পর্তুগিজ এই তারকা। প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের টাইব্রেকারে রিয়ালকে জয় এনে দেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৬ গোল করা এই ফুটবলার। আর তিনবার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা অধরাই রয়ে গেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জন্য।
আরআর/এনএফ