ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ভারতবধের নায়ক গোলরক্ষক আসিফ

‘সতীর্থদের বলেছিলাম তোমরা গোল করো আমি সেভ করে দেবো’

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৪

অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলের যে দলটি নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে নেপাল গেছেন কোচ মারুফুল হক, সেই দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ। গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় আর নেপালের বিপক্ষে হারের ম্যাচে বেঞ্চেই বসে ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের এই গোলরক্ষক। তারই সিনিয়র সতীর্থ মেহেদী হাসান শ্রাবণ সামলেছেন গোলপোস্ট।

জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শ্রাবণ থাকতে মাঠে নামার প্রত্যাশাই হয়তো করেননি গত বছর নিলামে কিংসে যোগ দেওয়া বাফুফের এলিট একাডেমির এই গোলরক্ষক। একটি দুর্ঘটনা বদলি হিসেবে আসিফকে মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছিল ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে।

সুযোগ পেয়েই আসিফ বাজিমাত করেছেন কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সের মাঠ। টাইব্রেকারে ভারতের দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন আসিফ, বাংলাদেশকে চতুর্থবারের মতো তুলে দিয়েছেন ফাইনালে।

৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ লিড নিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও যথারীতি পোস্টে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রাবণ। কিন্তু ৬৫ মিনিটে বড় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন দলের প্রধান গোলরক্ষক শ্রাবণ, মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে যান আসিফ। তিনি যখন পোস্ট দাঁড়ালেন, তখনও বাংলাদেশ লিডে ১-০’তে। আসিফ নামার মিনিট দশেক পর গোল খায় বাংলাদেশ, সমতায় ফেরে ভারত।

বাংলাদেশ ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিল শেষ দিকে। গোলরক্ষক আর রক্ষণের খেলোয়াড়দের দৃঢ়তা ও ভারতের ভাগ্য বিড়ম্বনা মিলে ম্যাচটাকে কোনোমতে টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় মারুফুল হকের শিষ্যরা।

টাইব্রেকার মানেই বীরত্ব দেখানোর সুযোগ গোলরক্ষকের, কেউ পারেন আবার কেউ পারেন না। সোমবার বাংলাদেশের গোলরক্ষক আসিফ পেরেছেন। একটি নয়, দুটি শট ঠেকিয়ে হয়ে গেছেন ভারতবধের নায়ক। তার বীরত্বে আনন্দের বন্যা কাঠমান্ডু থেকে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে।

বদলি হিসেবে মাঠে নামার পর থেকে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত কেমন ছিল আসিফের মনোবল? টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকানোর রহস্যইবা কি? এ সব নিয়ে মঙ্গলবার কাঠমান্ডু থেকে আসিফের ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছে বাফুফে। যে বার্তায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আত্মবিশ্বাসই ছিল তার অনুপ্রেরণা।

আসিফ বলেন, ‘ম্যাচ শুরুর আগেই আমরা সবাই প্রস্তুত ছিলাম। যারা খেলবে এবং যারা বেঞ্চে থাকবে সবাই যেন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। যারা মাঠে নামবে তারা যেন শতভাগ অ্যাফোর্ট দিতে পারে। কারণ, যে কোনোভাবেই হোক আমাদের ম্যাচটা জেতার দরকার ছিল। মাঠে একদল খেলছিল, আমরা যারা বেঞ্চে ছিলাম তারা প্রস্তুত ছিলাম। কোচ বলেছিলেন যারা বেঞ্চে তারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওনার কাছে। যে যার পরিবর্তে নামবে সে যেন কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারে।’

আপনি যখন মাঠে নামলেন, তখন দল এগিয়ে। পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে কী ভেবেছিলেন, কী পরিকল্পনা ছিল আপনার? জবাবে আসিফ বলেছেন, ‘আগেও অনেকগুলো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলেছি। মাঠে নামার পর আমি ম্যাচটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। বড় কথা হলো মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, ম্যাচ জিততে হবে, এসবই ভাবছিলাম। এসবই চিন্তাভাবনা ছিল। আমি যখন মাঠে নামি, তখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলাম। আমি নামার পর একটা গোল হজম করি।’

নেমে গোল খেয়ে গেলেন, ম্যাচ সমতায় চলে গেলো। মানসিকভাবে কি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন? ‘না। মেন্টালিটি হাই রেখেছিলাম। কারণ, ম্যাচ তো তখনো হারিনি। সমতা আছে, টাইব্রেকারে গেলে যাতে কিছু করতে পারি, এমন বিশ্বাস রেখেছিলাম নিজের ওপর। যাতে ম্যাচটা জিততে পারি’-বলেন আসিফ।

যখন টাইব্রেকার শুরু হলো তখন সতীর্থরা কী বলেছিলেন আপনাকে? আসিফ বলেন, ‘সতীর্থরা বলেছিল-তুই পারবি। আমার নিজের ওপরও বিশ্বাস ছিল। আমি ওদের একটা কথাই বলেছিলাম, তোমরা পাঁচটায় পাঁচটাই গোল করো, আমি একটা-দুইটা সেভ দেবো। আমার ওপর বিশ্বাস রেখো।’

ভারতের প্রথম ও পঞ্চম শট রুখেছেন। সেভ দুটি নিয়ে যদি কিছু বলেন। ‘প্রথম শটের সময় স্বাভাবিকভাবেই ছিলাম। আমি এক সাইড দেখিয়ে আরেক সাইডে গেছি। ও এটা বোঝেনি। তাই লাইনটা পেয়ে গেছি। শেষ শটের সময় ওর সাথে মেন্টাল গেম খেলতে চেয়েছিলাম। ওকে (শ্যুটার) বলতেছিলাম তোমার শট সেভ করবো। আমার কাছে মনে হয়েছে, সে একটু নার্ভাস ফিল করছিল। আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে না পেরে বলটা সোজাই মেরে দিয়েছিল’-স্মরণীয় দুই শট রুখে দৌয়া নিয়ে আসিফ।

ম্যাচের পর গোলরক্ষক শ্রাবণের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা? সে প্রসঙ্গে আসিফ বলেছেন, ‘হ্যাঁ। শ্রাবণের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে আমার রুমমেট ও ফ্রেন্ড। জয়ের পর মাঠ থেকে বের হয়েই প্রথমে তাকে ফোন দিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) সকালে দুইবার কথা হয়েছে। একটা দুর্ঘটনা হয়ে গেছে। সতীর্থ ও দেশবাসীর কাছে আমার চাওয়া ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারে।’

আরআই/এমএমআর/এএসএম